মালদা, 7 এপ্রিল : লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কাজ ৷ হাতে যা টাকা ছিল তাও শেষ ৷ যে সংস্থার কাজ চলছিল, তারা বলে দিয়েছে এখন আর কোনও টাকাপয়সা দিতে পারবে না ৷ অগত্যা যা হাতে ছিল তা দিয়ে সাইকেল কিনে ফেলেছিলেন 14 জন শ্রমিক ৷ আর তা চালিয়েই তাঁদের মধ্যে 12 জন মাঝরাতে প্রয়াগরাজ থেকে এসে পৌঁছেছে পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর গ্রামে ৷ কিন্তু এখনও তাঁদের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । পরিবারের সদস্যরাও জানিয়ে দিয়েছেন, আগে হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে ৷ তারপর 14 দিন থাকতে হবে হোম কোয়ারানটিনে ৷ বাড়িতে আলাদা থাকার ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় এক BEd কলেজে তাঁদের কোয়ারানটিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷
মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর, নেমুয়া সহ কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েকজন শ্রমিক প্রায় দু'মাস আগে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যান ৷ লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় কাজ ৷ চরম সমস্যায় পড়েন তাঁরা ৷ হাতে অর্থও শেষ হয়ে আসছিল ৷ যে সংস্থার হয়ে তাঁরা কাজ করছিলেন, সেই সংস্থা বলে দিয়েছে, এই মুহূর্তে আর কোনও টাকা দেওয়া যাবে না ৷ এদিকে বাড়ি ফেরার জন্য কোনও সরকারি সহায়তাও পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ শেষ পর্যন্ত এই শ্রমিকরা প্রায় 900 কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন ৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ ৷ কয়েকটি পুরোনো সাইকেল কিনে ফেলেন তাঁরা ৷ এরপর প্রত্যেকে এক কিলো করে ছাতু সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায় ৷ শেষ পর্যন্ত নয়দিন পর গতরাতে 12 জন শ্রমিক গ্রামে এসে পৌঁছান ৷ বাকি দু’জন রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তাঁরা এখন জামশেদপুরে রয়েছেন ৷ তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানা হয়েছে ৷
কানাই চৌধুরি নামে এক শ্রমিক বলেন, “আমরা এলাহাবাদে কাজ করতে গিয়েছিলাম ৷ ইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই ৷ উত্তরপ্রদেশ-বিহারের সীমান্তে আমাদের প্রশাসনের তরফে কিছু সাহায্য করা হয়েছিল ৷ তারপর আর কোথাও তেমন কোনও সাহায্য পাইনি ৷ তবে ঝাড়খণ্ডে এক জায়গায় আমাদের ভাত খেতে দেওয়া হয়েছিল ৷ রাস্তায় অনেক জায়গায় পুলিশ আমাদের আটকায় ৷ দু’তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখে ৷ বিভিন্ন পরীক্ষা করে ৷ তারপর আমাদের ছাড়ে ৷ কিন্তু তারা কোনও কাগজপত্র দেয়নি ৷ এক কিলো ছাতু নিয়ে প্রত্যেকে রওনা দিয়েছিলাম ৷ নয়দিন পর গ্রামে এলাম ৷ গ্রামের বাসিন্দারা আগে আমাদের পরীক্ষা করাতে চান ৷ তারপর আমাদের 14 দিন স্থানীয় একটি কলেজে রাখবে বলেছে ৷ তারপরই আমরা ঘরে ফিরতে পারব ৷ আমরা গ্রামবাসীদের কথা মেনেই কাজ করব ৷ কারণ সুরক্ষার বিষয়ে আমরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে একমত ৷”
গোবিন্দ দাস নামে গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “এই শ্রমিকরা এলাহাবাদ থেকে সাইকেল চালিয়ে গতকাল মাঝরাতে গ্রামে এসে পৌঁছেছে ৷ এরা সবাই নির্মাণ শ্রমিক ৷ আমরা এখনও তাদের বাড়িতে যেতে দিইনি ৷ আমবাগানে তাদের রাখা হয়েছে ৷ আমরাই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি ৷ এরপর তাদের মৌলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ সেখানে সবার লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেওয়া হবে ৷ আমরা তাদের 14 দিন স্থানীয় একটি BEd কলেজে কোয়ারানটিনে রাখব ৷ সেখানে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করব৷ তাদের পরিবারকেও আমরা সাহায্য করছি ৷ 14 দিন পর তারা বাড়িতে ফিরবে ৷” এলাকার বাসিন্দা, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য মিঠুন চৌধুরি বলেন, “এখনও দুই শ্রমিক বাইরেই রয়েছে ৷ যতদূর শুনেছি তারা আসানসোলের কাছাকাছি কোথাও রয়েছে ৷ তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে ৷”