মালদা, 1 জানুয়ারি : বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই যেন শাসকদলের থালায় শাকের নীচ থেকে মাছ উঁকি মারতে শুরু করেছে ৷ এর আগে বামনগোলা ব্লকের পাঁচ অঞ্চল সভাপতি নিজেদের পদত্যাগপত্র জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন৷ অনেক সাধ্যসাধনা করে এখনও তাঁদের দলে রাখা গিয়েছে৷ এবার একই ব্লকে এক গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় উপসমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ ৷ আগামী 8 জানুয়ারি সেই অনাস্থা প্রস্তাবের প্রমাণে তলবি সভা ডেকেছেন বিডিও ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনে শোরগোল পড়েছে এলাকার রাজনৈতিক মহলে ৷ প্রবল অস্বস্তিতে থাকা ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছে, দলে আলোচনা করেই এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়েছে ৷
ঘটনাস্থান বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ গত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের 19টি আসনের প্রতিটিতেই জয় পেয়েছিল শাসকদল ৷ বিরোধীশূন্য বোর্ডে চারজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় উপসমিতি ৷ মনে রাখতে হবে, পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে উপসমিতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ উপসমিতির সহায়তা ছাড়া কোনও আর্থিক কিংবা অন্যান্য বিষয় অনুমোদন করা পঞ্চায়েত প্রধানের পক্ষে কার্যত অসম্ভব ৷ নির্বাচনের পর দু’বছরেরও বেশি সময় স্বাভাবিক গতিতেই চলেছে মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজকর্ম ৷ কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের তাল কাটতে শুরু করেছে ৷ সূত্রের খবর, কিছুদিন আগে প্রধান রঞ্জিতা হালদার মজুমদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে ব্লক প্রশাসনের কাছে চিঠি দেন বেশ কিছু পঞ্চায়েত সদস্য ৷ কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই অনাস্থা প্রস্তাবের তলবি সভা ডাকা হয়নি ৷ পরে জানা যায়, পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী আড়াই বছরের আগে কোনও প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁকে অপসারিত করা যায় না ৷ বিষয়টি জানার পরেই শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার পরামর্শে সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বলে জানা যায় ৷ আরও জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত আইনবলে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত প্রধানকে অপসারিত করা সম্ভব নয় দেখে প্রধান বিরোধীরা অন্য ছক ধরে ৷ তারা প্রধানের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিতে উপসমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ৷ ইতিমধ্যে সেই প্রস্তাবের চিঠি দেওয়া হয়েছে বিডিওকে ৷
বিডিও সঞ্জিৎ মণ্ডল অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, “পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের আবেদনের ভিত্তিতে আগামী 8 জানুয়ারি মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের উপসমিতির অনাস্থা প্রস্তাবের তলবি সভা ডাকা হয়েছে ৷ এর বেশি আমার পক্ষে আর কিছু বলা সম্ভব নয় ৷” সম্প্রতি মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ৷ তবে আজ সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি ৷ ভাঙাচোরা দপ্তরের নীচতলায় কয়েকটি আলমারি পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ৷ পঞ্চায়েত প্রধান রঞ্জিতা হালদার মজুমদারকেও আজ পাওয়া যায়নি ৷ ফলে এনিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি ৷ তবে বামনগোলা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোক সরকারের দাবি, “এখানে দলে কোন্দলের কোনও বিষয় নেই ৷ এই গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদেরই দখলে ৷ বোর্ড গঠনের পর চার দলীয় সদস্যকে নিয়ে এখানে উপসমিতি গঠিত হয় ৷ সেই সমিতি প্রায় আড়াই বছর চলেছে ৷ এবার আরও কয়েকজন সদস্যের শখ হয়েছে, তাঁরা উপসমিতির সদস্য হয়ে প্রধানকে সব কাজে সহযোগিতা করবেন ৷ তাই দলীয় স্তরে আলোচনা করেই এই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷”