মালদা, 1 অগাস্ট : উন্নয়নের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে ইতিহাস । সেই ছবি ধরা পড়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে । যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতিহাসকে সুরক্ষিত রাখতে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে । তবে আদৌ সেখানে ইতিহাস সুরক্ষিত থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ।
ইতিহাস সমৃদ্ধ জেলা মালদা । মালদা শহর অন্যতম প্রাচীন শহর হিসাবেই রাজ্যে পরিচিত । এই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের একাধিক নিদর্শন । মালদা মেডিকেলেও তার নিদর্শন রয়েছে । এখানে রয়েছে নীলকর সাহেবদের সমাধিস্থান । এই সমাধিস্থান 200 বছরেরও বেশি পুরোনো । জেলা হাসপাতালে তকমা ছেড়ে মালদা মেডিকেল তৈরির সময় থেকেই উন্নয়ন গ্রাস করেছে এই সমাধিস্থানটি । বর্তমানে এর অবস্থা অত্যন্ত করুণ । খুলে পড়ছে প্রাচীন ইটের তৈরি সমাধিক্ষেত্র । ঝাঁ চকচকে মেডিকেল কলেজ চত্বরে এমন একটি পুরোনো স্থাপত্য হয়তো বেমানান মনে হয়েছে কর্তৃপক্ষের । তাই সেই সমাধিস্থানটিকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে পুরোদমে । সমাধিস্থানটির সামনেই তৈরি করা হয়েছে রোগীর পরিবারের লোকজনদের বসার জায়গা । তবে সেখানে শুধু বসাই নয়, রান্নাও চলছে পুরোদমে ।
জেলার ইতিহাস থেকে জানা যাচ্ছে, 1800 শতকে ইংরেজবাজারকে নীল ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলে ছিল ব্রিটিশ বণিকরা । বর্তমানে ইংরেজবাজার থানা ছিল সেই সময়ের নীলকুঠি । তখন নীলকর সাহেবদের বাসস্থান ছিল অধুনা ফোয়ারা মোড়ের কাছে । সেই সময় শহর এলাকায় ম্যালেরিয়ার উপদ্রব ছিল । ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন অনেক নীলকর সাহেব ও তাঁদের পরিবারের লোকজন । তাঁদের অনেকের মৃত্যুও হয়েছিল ম্যালেরিয়ায় । তাঁদের মৃতদেহের সমাধিস্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল বর্তমান মেডিকেল চত্বর । এখানে এখনও চারজন সাহেবের সমাধি কিছুটা অক্ষত রয়েছে । এর মধ্যে উইলিয়াম ব্রাউনের সমাধিটি 1800 সালের । এর ফলকটি সবচেয়ে পুরোনো । বাকি তিনটির মধ্যে দুটি ফলকের লেখা এখনও পরিষ্কার পড়া যায় । সেই দুটি সমাধি হল 1819 সালে মৃত ডেভিড ব্রাউন ও 1834 সালে প্রয়াত রোনাল্ড টেলর । চতুর্থ সমাধিটির কার সেটা জানা যায়নি । সংস্কারের অভাবে এখন সেই সমাধিক্ষেত্রে গজিয়ে উঠেছে গাছপালা । কোনও এক সময় সমাধিক্ষেত্রটি বাঁধিয়ে দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে তার কোনও সাফাই হয়নি ।
এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, "ওই সমাধিক্ষেত্রটি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কলকাতার পৌর বিষয়ক বিভাগ । সমাধিক্ষেত্রটি 200 বছরেরও বেশি পুরোনো । তার একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে । তাই আমরা সমাধিক্ষেত্রটিকে ঘিরে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে বসার জায়গা তৈরি করেছি । সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি সমাধিক্ষেত্রটি রক্ষা করতে কোনও উদ্যোগ না নেয় তবে আমরাই ওই ইতিহাসকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করব । রোগী কল্যাণ সমিতির আগামী বৈঠকে আমরা সমাধিক্ষেত্রটি নিয়ে আলোচনা করব ।"