ETV Bharat / city

'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগ জানানোয় মিথ্যা মামলা 6 জনের বিরুদ্ধে - arrest

তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে 'দিদিকে বলো'-তে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে বিপাকে ছ'জন গ্রামবাসী ৷ মিথ্যে মামলায় গ্রেপ্তার একজন ৷ পুলিশের ভয়ে ঘরছাড়া বাকি পাঁচজন৷

malda
ঘরছাড়া পাঁচজন
author img

By

Published : Dec 22, 2019, 3:23 PM IST

মালদা, 22 ডিসেম্বর : 'দিদিকে বলো'-তে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে বিপাকে ছ'জন গ্রামবাসী ৷ প্রশাসন কিংবা দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কতটা, মূলত তা জানতেই নির্বাচনী পরামর্শদাতার কথা অনুযায়ী 'দিদিকে বলো' কর্মসূচি চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ দলীয় কর্মসূচি হলেও তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে এই ব্যবস্থা চালু করেছেন, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারোর ৷ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিল সাধারণ মানুষ ৷ অনেকেই 'দিদিকে বলো'-র নম্বরে ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছে ৷ ফলও পেয়েছে অনেকে ৷ এক ফোনেই সমস্যা সমাধানে, বিষয়টি মানুষের কাছে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে ৷ কিন্তু 'দিদিকে বলো'-য় ফোন করে অভিযোগ জানিয়ে যে চরম ফ্যাসাদে পড়তে হতে পারে তা জানা ছিল না কারোর ৷ কিন্তু তেমনই ঘটনা ঘটেছে ৷ এলাকার তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছেন মালদার রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছ'জন ৷ এদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই জেলে ৷ গ্রেপ্তারি এড়াতে বাকি পাঁচজন এই মুহূর্তে ঘরছাড়া ৷ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছেন ৷ তবে ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷

দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল পরিচালিত পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাটমানি আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল ৷ অভিযোগ, 100 দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কাছ থেকে কাটমানি আদায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ ৷ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ান ওরফে বুলেটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল 100 দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কাছ থেকে কাটমানি আদায় করেছেন ৷ শুধু তাই নয়, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা যে সব মহিলা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, তাদের কাছ থেকেও তিনি 15 থেকে 20 হাজার টাকা জোর করে আদায় করছেন ৷ এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান পীরগঞ্জ গ্রামের ছয় বাসিন্দা ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ তাঁরা 'দিদিকে বলো'-তে ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানান ৷ যার জেরে তাঁরা শাসকদলের একাংশের রোষে পড়েন ৷

'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই ভুয়ো জবকার্ড তৈরির অভিযোগ দায়ের হয় স্থানীয় পুকুরিয়া থানায় ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় মহম্মদ স্টালিন নামে একজনকে ৷ বাকি পাঁচজন গ্রেপ্তারি এড়াতে গত দু'সপ্তাহ ধরে ঘরছাড়া ৷ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই ছ'জনের বিরুদ্ধে আনা ভুয়ো জবকার্ড তৈরির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে ৷ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে 'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগ জানানোর জন্যই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷

একজন অভিযোগকারী বদিরুদ্দিন শেখ বলেন, "100 দিনের কাজ প্রকল্পে উদ্যানপালন দপ্তরের অধীনে বেড়া তৈরির কাজ ছিল ৷ 78 টি বেড়া তৈরির কথা থাকলেও 30টির বেশি তৈরি হয়নি ৷ সেই কাজ করে যে 2 হাজার টাকা পেয়েছে, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ান ৷ অর্থাৎ পারিশ্রমিকের অর্ধেক টাকা তাঁকে দিতে হচ্ছে ৷ কারোর ঘর তৈরির জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা কারোর অ্যাকাউন্টে ঢুকলে পঞ্চায়েত সদস্যরা সেখান থেকে 20 হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছে ৷ কাটমানি না দিতে চাইলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ৷ এ সব দেখে আমি নিজে 'দিদিকে বলো'-তে ফোন করে গোটা ঘটনা জানাই ৷ তারজন্যই আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ এখন আমরা আতঙ্কে রয়েছি ৷ গত 14 দিন ধরে বাড়িতে থাকতে পারছি না ৷"

আরও এক অভিযোগকারী মোকতারুল শেখ বলেন, "এখানে উদ্যানপালন বিভাগের 78 টি বেড়ার মধ্যে 30টি বেড়া তৈরি হয়েছে ৷ কিন্তু 65 টি বেড়ার টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে ৷ এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রায় 150 জন শ্রমিক ৷ সেই শ্রমিকদের মজুরির অর্ধেক টাকা আবু সুফিয়ান নিয়ে নিচ্ছে ৷ 20 হাজার টাকা নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকেও ৷ এ সব নিয়ে আমরা 'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগ জানাই ৷ তারজন্যই আমাদের বিরুদ্ধে পুকুরিয়া থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ৷ আমাদেরও হেনস্তা করছে ৷ পুলিশের ভয়ে আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি ৷" একই বক্তব্য মতিউর রহমান ও মহম্মদ সামিরুদ্দিনেরও ৷ পুলিশের ভয়ে তাঁরাও এখন লুকিয়ে রয়েছেন ৷

এ প্রসঙ্গে এক গ্রামবাসী সিতারা বেওয়া বলেন, "100 দিনের কাজে আমার অ্যাকাউন্টে 3 হাজার টাকা ঢুকেছিল ৷ পঞ্চায়েত সদস্য আমার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়েছে ৷ আমার ছেলের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল 2700 টাকা ৷ তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে ৷ ৩ নম্বর সংসদের তৃণমূল সদস্য বুলেট এই টাকা নিয়েছে ৷ আমরা জানি, বুলেটের এই কাজকর্মের বিরুদ্ধে গ্রামের কয়েকজন দিদির কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল৷ প্রতিবাদ করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করা হয়েছে ৷ পুলিশের ভয়ে তাঁরা এখন বাড়িতে থাকতে পারছেন না ৷"

যদিও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ানের সাফাই, "এ সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে BDO এখানে তদন্ত করতে লোক পাঠিয়েছিলেন ৷ তদন্তে আমার বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি ৷" এ দিন ছুটি থাকায় রতুয়া 2-এর BDO-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করেছে পুকুরিয়া থানার পুলিশও ৷ তবে পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মইনুর বিবি গ্রামবাসীদের হেনস্তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "100 দিনের কাজ প্রকল্পে কাটমানি আদায়ের অভিযোগ আমি শুনেছি ৷ তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ উঠেছে ৷ তবে কত টাকা কাটমানি নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে তা আমি জানি না ৷ এক্ষেত্রে সরকারি আইন অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে ৷"

মালদা, 22 ডিসেম্বর : 'দিদিকে বলো'-তে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে বিপাকে ছ'জন গ্রামবাসী ৷ প্রশাসন কিংবা দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কতটা, মূলত তা জানতেই নির্বাচনী পরামর্শদাতার কথা অনুযায়ী 'দিদিকে বলো' কর্মসূচি চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ দলীয় কর্মসূচি হলেও তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে এই ব্যবস্থা চালু করেছেন, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারোর ৷ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিল সাধারণ মানুষ ৷ অনেকেই 'দিদিকে বলো'-র নম্বরে ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছে ৷ ফলও পেয়েছে অনেকে ৷ এক ফোনেই সমস্যা সমাধানে, বিষয়টি মানুষের কাছে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে ৷ কিন্তু 'দিদিকে বলো'-য় ফোন করে অভিযোগ জানিয়ে যে চরম ফ্যাসাদে পড়তে হতে পারে তা জানা ছিল না কারোর ৷ কিন্তু তেমনই ঘটনা ঘটেছে ৷ এলাকার তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছেন মালদার রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছ'জন ৷ এদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই জেলে ৷ গ্রেপ্তারি এড়াতে বাকি পাঁচজন এই মুহূর্তে ঘরছাড়া ৷ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছেন ৷ তবে ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷

দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল পরিচালিত পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাটমানি আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল ৷ অভিযোগ, 100 দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কাছ থেকে কাটমানি আদায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ ৷ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ান ওরফে বুলেটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল 100 দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কাছ থেকে কাটমানি আদায় করেছেন ৷ শুধু তাই নয়, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা যে সব মহিলা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, তাদের কাছ থেকেও তিনি 15 থেকে 20 হাজার টাকা জোর করে আদায় করছেন ৷ এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান পীরগঞ্জ গ্রামের ছয় বাসিন্দা ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ তাঁরা 'দিদিকে বলো'-তে ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানান ৷ যার জেরে তাঁরা শাসকদলের একাংশের রোষে পড়েন ৷

'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই ভুয়ো জবকার্ড তৈরির অভিযোগ দায়ের হয় স্থানীয় পুকুরিয়া থানায় ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় মহম্মদ স্টালিন নামে একজনকে ৷ বাকি পাঁচজন গ্রেপ্তারি এড়াতে গত দু'সপ্তাহ ধরে ঘরছাড়া ৷ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই ছ'জনের বিরুদ্ধে আনা ভুয়ো জবকার্ড তৈরির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে ৷ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে 'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগ জানানোর জন্যই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷

একজন অভিযোগকারী বদিরুদ্দিন শেখ বলেন, "100 দিনের কাজ প্রকল্পে উদ্যানপালন দপ্তরের অধীনে বেড়া তৈরির কাজ ছিল ৷ 78 টি বেড়া তৈরির কথা থাকলেও 30টির বেশি তৈরি হয়নি ৷ সেই কাজ করে যে 2 হাজার টাকা পেয়েছে, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ান ৷ অর্থাৎ পারিশ্রমিকের অর্ধেক টাকা তাঁকে দিতে হচ্ছে ৷ কারোর ঘর তৈরির জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা কারোর অ্যাকাউন্টে ঢুকলে পঞ্চায়েত সদস্যরা সেখান থেকে 20 হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছে ৷ কাটমানি না দিতে চাইলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ৷ এ সব দেখে আমি নিজে 'দিদিকে বলো'-তে ফোন করে গোটা ঘটনা জানাই ৷ তারজন্যই আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ এখন আমরা আতঙ্কে রয়েছি ৷ গত 14 দিন ধরে বাড়িতে থাকতে পারছি না ৷"

আরও এক অভিযোগকারী মোকতারুল শেখ বলেন, "এখানে উদ্যানপালন বিভাগের 78 টি বেড়ার মধ্যে 30টি বেড়া তৈরি হয়েছে ৷ কিন্তু 65 টি বেড়ার টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে ৷ এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রায় 150 জন শ্রমিক ৷ সেই শ্রমিকদের মজুরির অর্ধেক টাকা আবু সুফিয়ান নিয়ে নিচ্ছে ৷ 20 হাজার টাকা নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকেও ৷ এ সব নিয়ে আমরা 'দিদিকে বলো'-তে অভিযোগ জানাই ৷ তারজন্যই আমাদের বিরুদ্ধে পুকুরিয়া থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ৷ আমাদেরও হেনস্তা করছে ৷ পুলিশের ভয়ে আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি ৷" একই বক্তব্য মতিউর রহমান ও মহম্মদ সামিরুদ্দিনেরও ৷ পুলিশের ভয়ে তাঁরাও এখন লুকিয়ে রয়েছেন ৷

এ প্রসঙ্গে এক গ্রামবাসী সিতারা বেওয়া বলেন, "100 দিনের কাজে আমার অ্যাকাউন্টে 3 হাজার টাকা ঢুকেছিল ৷ পঞ্চায়েত সদস্য আমার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়েছে ৷ আমার ছেলের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল 2700 টাকা ৷ তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে ৷ ৩ নম্বর সংসদের তৃণমূল সদস্য বুলেট এই টাকা নিয়েছে ৷ আমরা জানি, বুলেটের এই কাজকর্মের বিরুদ্ধে গ্রামের কয়েকজন দিদির কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল৷ প্রতিবাদ করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করা হয়েছে ৷ পুলিশের ভয়ে তাঁরা এখন বাড়িতে থাকতে পারছেন না ৷"

যদিও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ানের সাফাই, "এ সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে BDO এখানে তদন্ত করতে লোক পাঠিয়েছিলেন ৷ তদন্তে আমার বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি ৷" এ দিন ছুটি থাকায় রতুয়া 2-এর BDO-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করেছে পুকুরিয়া থানার পুলিশও ৷ তবে পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মইনুর বিবি গ্রামবাসীদের হেনস্তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "100 দিনের কাজ প্রকল্পে কাটমানি আদায়ের অভিযোগ আমি শুনেছি ৷ তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ উঠেছে ৷ তবে কত টাকা কাটমানি নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে তা আমি জানি না ৷ এক্ষেত্রে সরকারি আইন অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে ৷"

Intro:মালদা, ২১ ডিসেম্বর : প্রশাসন কিংবা দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মানুষের কতটা ক্ষোভ, মূলত তা জানতেই নির্বাচনি পরামর্শদাতার কথা অনুযায়ী ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলীয় কর্মসূচি হলেও তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে এই ব্যবস্থা চালু করেছেন, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারোর৷ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিল ভুক্তভোগী মানুষও৷ অনেকেই দিদিকে বলোর নম্বরে ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছে৷ ফলও পেয়েছে অনেকে৷ এক ফোনেই সমস্যা সমাধানে ধীরে ধীরে এই বিষয়টি মানুষের কাছে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু দিদিকে বলোয় ফোন মারফৎ অভিযোগ জানিয়ে যে চরম ফ্যাসাদেও পড়তে হতে পারে তা জানা ছিল না কারোর৷ কিন্তু তেমনই ঘটনা ঘটেছে৷ এলাকার তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে প্রবল ফ্যাসাদে পড়েছে রতুয়া ২ ব্লকের পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছয় ব্যক্তি৷ এদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই জেলে৷ গ্রেফতারি এড়াতে বাকি পাঁচজন এই মুহূর্তে ঘরছাড়া৷ এনিয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷Body:দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল পরিচালিত পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাটমানি আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল৷ অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কাছ থেকে কাটমানি আদায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ৷ সেই অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ান ওরফে বুলেটের বিরুদ্ধেও৷ তিনি নাকি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের কাছ থেকে কাটমানি আদায় করেছেন৷ শুধু তাই নয়, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা যেসব মহিলা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, তাদের কাছ থেকেও তিনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জোর করে আদায় করছেন৷ এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান পীরগঞ্জ গ্রামের ছয় বাসিন্দা৷ কোনও কাজ না হওয়ায় তাঁরা দিদিকে বলোয় ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানান৷ তাতেই তাঁরা শাসকদলের একাংশের রোষে পড়েন৷ দিদিকে বলোয় অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই ভুয়ো জবকার্ড তৈরির অভিযোগ দায়ের হয় স্থানীয় পুকুরিয়া থানায়৷ অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ স্টালিন নামে একজনকে৷ বাকি পাঁচজন গ্রেফতারি এড়াতে গত দুই সপ্তাহ ধরে ঘরছাড়া৷ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই ছয়জনের বিরুদ্ধে আনা ভুয়ো জবকার্ড তৈরির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে৷ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে দিদিকে বলোয় অভিযোগ জানানোর জন্যই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷
ঘরছাড়া বাদিরুদ্দিন শেখ বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে উদ্যানপালন দপ্তরের অধীনে বেড়া তৈরির কাজ ছিল৷ ৭৮টি বেড়া তৈরির কথা থাকলেও ৩০টির বেশি তৈরি হয়নি৷ সেই কাজ করে যে ২ হাজার টাকা পেয়েছে, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ান৷ অর্থাৎ পারিশ্রমিকের অর্ধেক টাকা তাকে দিতে হচ্ছে৷ কারোর ঘর তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা কারোর অ্যাকাউন্টে ঢুকলে পঞ্চায়েত সদস্যরা সেখান থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছে৷ কাটমানি না দিতে চাইলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ এসব দেখে আমি নিজে দিদিকে বলোয় ফোন করে গোটা ঘটনা জানাই৷ তার জন্যই আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ এখন আমরা আতঙ্কে রয়েছি৷ গত ১৪ দিন ধরে বাড়িতে থাকতে পারছি না৷” দিদিকে বলোয় অভিযোগ জানানো আরেক গ্রামবাসী মোকতারুল শেখ বলেন, “এখানে উদ্যানপালন বিভাগের ৭৮টি বেড়ার মধ্যে ৩০টি বেড়া তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু ৬৫টি বেড়ার টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে৷ এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রায় ১৫০ শ্রমিক৷ সেই শ্রমিকদের মজুরির অর্ধেক টাকা আবু সুফিয়ান নিয়ে নিচ্ছে৷ ২০ হাজার টাকা নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকেও৷ এসব নিয়ে আমরা দিদিকে বলোয় অভিযোগ জানাই৷ তার জন্যই আমাদের বিরুদ্ধে পুকুরিয়া থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে৷ আমাদেরও হেনস্তা করছে৷ পুলিশের ভয়ে আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি৷” একই বক্তব্য মতিউর রহমান ও মহম্মদ সামিরুদ্দিনেরও৷ পুলিশের ভয়ে তাঁরাও এখন লুকিয়ে থাকছেন৷
গ্রামের বাসিন্দা সিতারা বেওয়া বলেন, “১০০ দিনের কাজে আমার অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার টাকা ঢুকেছিল৷ পঞ্চায়েত সদস্য আমার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়েছে৷ আমার ছেলের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল ২৭০০ টাকা৷ তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে৷ এমাদের ৩ নম্বর সংসদের তৃণমূল সদস্য বুলেট এই টাকা নিয়েছে৷ আমরা জানি, বুলেটের এই কাজকর্মের বিরুদ্ধে গ্রামের কয়েকজন দিদির কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল৷ প্রতিবাদ করার জন্য এদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করা হয়েছে৷ পুলিশের ভয়ে এরা এখন বাড়িতে থাকতে পারছে না৷”Conclusion: যদিও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ানের সাফাই, “এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে৷ অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও এখানে তদন্ত করতে লোক পাঠিয়েছিলেন৷ তদন্তে আমার বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি৷” এদিন ছুটি থাকায় রতুয়া ২-এর বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি৷ গোটা ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করেছে পুকুরিয়া থানার পুলিশও৷ তবে পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মইনুর বিবি গ্রামবাসীদে হেনস্তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কাটমানি আদায়ের অভিযোগ আমি শুনেছি৷ তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ উঠেছে৷ তবে কত টাকা কাটমানি নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে তা আমি জানি না৷ এক্ষেত্রে সরকারি আইন অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে৷”
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.