মালদা, 29 জুলাই: মালদায় (Malda) ক্রমশ বাড়ছে মাখনা চাষ (Makhana Farming) ৷ কোথায়, কীভাবে চাষ করা হয় অত্যন্ত পুষ্টিকর এই ফসল ? তারই খোঁজ নিলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ ভারতের অন্য়ান্য অংশে মাখনা খাওয়ার চল নতুন কিছু নয় ৷ কিন্তু, বাংলার মানুষের সঙ্গে মাখনার তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না ৷ তবে, ইদানীং বাঙালিরাও মাখনার নানা পদ তাঁদের খাদ্যতালিকায় রাখতে শুরু করেছেন ৷ প্রশ্ন হল, কী এই মাখনা ? মাখনা আদতে একটি জলজ উদ্ভিদের বীজ ৷ যা আমাদের অতি পরিচিত পদ্ম ফুলেরই পরিবারভুক্ত একটি অন্য প্রজাতি ৷ এর নিজস্ব কোনও স্বাদ না-থাকলেও ঠিক মতো রান্না করতে পারলে অপূর্ব খেতে লাগে ৷ তাছাড়া, এর পুষ্টিগুণও প্রচুর ৷
তথ্য বলছে, বাংলা-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ছে মাখনার ৷ একইসঙ্গে, বিদেশেও প্রচুর পরিমাণে রফতানি করা হচ্ছে এই ফসল ৷ এই বীজ জল থেকে সংগ্রহ করার পর তা প্রথমে শুকনো কড়ায় ভালো করে সেঁকে (Roast) নেওয়া হয় ৷ তারপর সেগুলিকে পিটিয়ে তার থেকে বের করা হয় খই ৷ সেই খই নানা ধরনের পদে ব্যবহার করা হয় ৷
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জাপান ও রাশিয়ায় ভারতীয় মাখনার যথেষ্ট কদর রয়েছে ৷ সেখানে একে বলা হয়, 'ফক্স নাট' (Fox Nut) ৷ এর গুণাগুণ প্রচুর ৷ জিরো কোলেস্টেরল, লো ফ্যাট, গ্লুটেন ফ্রি, ভরপুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, খুব কম পরিমাণে সোডিয়াম, ভরপুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যার মধ্যে অন্যতম ৷ ওজন, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি মাখনার অ্যান্টি এজিং ক্ষমতা তারুণ্য ধরে রাখে ৷ বন্ধ্যাত্ব মোকাবিলাতেও এর জুড়ি মেলা ভার ৷
আরও পড়ুন: Dragon Fruit: মালদায় আমের বিকল্প হিসাবে হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ
বর্তমানে মালদায় প্রচুর পরিমাণে মাখনা উৎপাদিত হচ্ছে ৷ জেলাজুড়ে বছরে প্রায় 100 কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে ৷ কিন্তু, প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামোর অভাবে জেলার কৃষকরা এই চাষে সেভাবে লাভ করতে পারছেন না-বলে অভিযোগ ৷ এবার তাই মাখনা চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের উপরে জোর দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলার বণিকসভা ৷
জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক জানাচ্ছেন, "বর্তমানে মালদায় প্রায় 2 হাজার 800 হেক্টর জলাভূমিতে মাখনা চাষ করা হয় ৷ এটি বহু বর্ষজীবী জলজ ফসল ৷ মূলত, উত্তর মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-1 ও 2, চাঁচল-1 ও 2, রতুয়া-1 ও 2 ব্লকে মাখনা চাষ হয়ে থাকে ৷ বর্তমানে জেলা প্রশাসন এই চাষ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে।"
জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া জানান, "মাখনা চাষ অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে ৷ এই জেলায় অনেক চাষি মাখনা চাষ করেন ৷ মাখনা চাষ ঘিরে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় কিছু শিল্পও তৈরি হয়েছে ৷ এই চাষের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল ৷ জেলার শিল্পদ্যোগী ও বণিকসভার সহায়তায় এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি ৷ ইতিমধ্যেই আমরা একটি কর্মশালা করেছি ৷ শুধু উৎপাদন বাড়ানোই নয়, মাখনার খই তৈরি, প্যাকেজিং, মার্কেটিং-সহ সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: Malda District Administration: শস্যবীমার আওতায় এনে চাষের হার বাড়াতে উদ্যোগ মালদা জেলা প্রশাসনের
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু জানান, "মুখ্যমন্ত্রীর মালদা সফরের সময় আমরা তাঁর কাছে মাখনা চাষ ও সেই সংক্রান্ত শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নের আবেদন জানিয়েছিলাম ৷ আমরা বিষয়টিকে সংগঠিত শিল্পের আওতায় আনতে চাইছি ৷"
অনেকেরই জানা নেই, পশ্চিমবঙ্গের এই জেলায় দেশের মোট মাখনা উৎপাদনের মাত্র 10 শতাংশ হলেও এর পেটেন্ট রয়েছে কিন্তু মালদারই হাতে ৷ দেশের মধ্যে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা ও গুজরাতে মাখনার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আটের দশকে হরিশ্চন্দ্রপুরে এই চাষের প্রবর্তন করেছিলেন পুরুষোত্তম ভগত ৷ বর্তমানে সেখানে বেশ কিছু মাখনার খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে উঠেছে ৷ মার্চ-এপ্রিল মাসে মাখনার বীজ জমিতে ফেলা হয় ৷ অগস্ট থেকে নভেম্বরের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ হয়। খই তৈরির কাজ চলে জানুয়ারি পর্যন্ত ৷