মালদা, 7 ডিসেম্বর : গতকাল থেকে ধানতলায় আগমন শুরু হয়েছে VIP-দের ৷ এই গ্রামের আমবাগান থেকেই উদ্ধার হয়েছিল এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবতির দগ্ধ মৃতদেহ ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশ এখনও ধন্দে রয়েছে ৷ আজ সেখানে আসেন BJP সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ এলাকাবাসীরা তাঁর কাছে নিরাপত্তার দাবি জানান ৷ এলাকার ঘটনা সংসদে তোলার জন্যও স্থানীয়রা আজ সাংসদের দ্বারস্থ হন ৷ লকেট গ্রামবাসীদের জানান, এনিয়ে কোনও রাজনীতি যেন কেউ না করে ৷ সবার প্রথম চাহিদা হওয়া উচিত মৃত যুবতির পরিচয় বের করা ৷ তিনি জেলা পুলিশ, রাজ্য মহিলা কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন মৌসম নুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৷ এছাড়া গতকাল ঘটনাস্থানে গিয়েছিলেন জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন চৈতালি ঘোষ সরকার ৷
ধানতলার আমবাগান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় যুবতির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার রেশ জেলা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে গোটা দেশে ৷ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি পর্যন্ত সংসদে ধানতলার ঘটনা উল্লেখ করেছেন ইতিমধ্যে ৷ সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ধানতলা পরিদর্শন করেন ৷ তাঁকে সামনে পেয়ে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার বাসিন্দারা ৷ নিরাপত্তার দাবিতে এর আগে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশাসন এখনও এনিয়ে কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়নি ৷ ETV ভারতকে সাংসদ বলেন, “হায়দরাবাদের ঘটনা সারা দেশ জানতে পেরেছিল ৷ কিন্তু মালদার ঘটনাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে ৷ এটাই সবচেয়ে বেশি নিন্দনীয় ৷ যেভাবে এখানে একটি মেয়েকে এনে ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হল, তাতে প্রমাণিত হয়েছে, এখানে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা নেই ৷ মেয়েটিকে আমরা আর ফিরে পাব না ৷ কিন্তু তার সঙ্গে যারা এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আমরা কঠোর শাস্তি দাবি করছি ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রশাসন এই ঘটনাকে পুরোপুরি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে ৷ আরও বড়ো বিষয়, যিনি এখানকার মহিলা কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন, সেই মৌসম নুর এখানকারই বাসিন্দা ৷ এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও তিনি একবারের জন্যও এখানে আসেননি ৷ তিনি ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও এক মহিলাকে ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা সরেজমিনে দেখতে আসেননি ৷ এটা লজ্জার কথা ৷ আসলে এটাই তৃণমূলের চরিত্র ৷ এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী এখনও কোনও সদর্থক ভূমিকা নেননি ৷ এরপর বাংলার মহিলারা কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে ৷ তাঁর এমন আচরণের জন্যই বাংলার মানুষ BJP-কে ১৮ জন সাংসদ দিয়েছে ৷ এরপরও যদি এসব ঘটনায় তিনি কোনও ব্যবস্থা না নেন, তবে আগামীতে বাংলার মহিলা সমাজ জেগে উঠবে ৷ গোটা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠবে ৷”
এটা ঠিক, মৌসম নুর এখনও পর্যন্ত ধানতলা পরিদর্শনে না যাওয়ায় এলাকার মানুষজনও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে ৷ যদিও তাঁর দাবি, এই মুহূর্তে তিনি কলকাতায় রয়েছেন ৷ মালদা ফিরেই তিনি ধানতলায় আসবেন ৷ এদিকে আজ লকেট এলাকার মানুষজনকে জানান, এই ঘটনা নিয়ে যেন কোনও রাজনীতি না হয় ৷ সবাই যেন রাজনীতি সরিয়ে রেখে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন ৷ বিচার পেতে সবাইকে একজোট হয়ে লড়াই করার বার্তা দেন তিনি ৷
BJP সাংসদকে কাছে পেয়ে এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারের পাশাপাশি আলোর ব্যবস্থার দাবিতে সরব হন এলাকার বাসিন্দারা ৷ ধানতলা গ্রামের বাসিন্দা, BJP-র প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি প্রশান্ত সরকার বলেন, “আমাদের এখানে নিরাপত্তা নেই বললেই চলে ৷ রাতে এলাকার ছেলেমেয়েরা টিউশনি পড়ে নির্ভয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরবে তা নিয়ে চিন্তায় থাকে ৷ অভিভাবকরাও জানেন, বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা সুরক্ষিত নয় ৷ আমরা চাই, তিনি সংসদে গিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায় এখানকার কথা তুলে ধরুন ৷ একই সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা করুন ৷”
স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, এলাকার রাস্তা সংস্কার ও আলোর দাবিতে গত লোকসভা ভোট বয়কট করেছিলেন তাঁরা ৷ সেই সময় প্রশাসনিক কর্তারা এলাকায় এসে কথা দিয়েছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি এই সব দাবি পূরণ করা হবে ৷ কিন্তু নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর তাঁদের আর দেখা পাওয়া যায়নি ৷ এনিয়ে প্রশাসনের কেউ গ্রামের কারও সঙ্গে কথাও বলেননি ৷ এলাকার দাবি নিয়ে গ্রামবাসীরা জেলাশাসক থেকে শুরু করে বিধায়ক ও সাংসদের কাছে বার বার আবেদন জানিয়েছেন ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি৷
ধানতলার যুবতির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার কিনারার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নের যে দীর্ঘদিনের দাবি তা পূরণ হোক এটাই চাইছেন এলাকার লোকজন ৷ এলাকার উন্নয়নের জন্য তাঁরা লাগাতার পথ অবরোধ কর্মসূচির পথে এগোচ্ছেন বলেও জানা যাচ্ছে ৷