কলকাতা, 23 জানুয়ারি : পঞ্চায়েত ভোট ব্যালট পেপারে হলেও, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার শুরুর পর থেকে পৌরভোট হচ্ছে তাতেই । উপ-নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় EVM-এর । এমনকী, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কলকাতা পৌরনিগমের অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও ব্যবহার হয়েছিল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন । সেই উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম । আসন্ন পৌরসভা এবং পৌরনিগমের নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের দিকেই পাল্লা ভারি । সব ঠিক থাকলে EVM-ই হতে চলেছে পৌরনির্বাচন । সঙ্গে এবারই প্রথম ব্যবহার হতে পারে VVPAT । গতকাল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে হয়ে গেল তারই ডেমনস্ট্রেশন ।
পৌরভোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে হবে নাকি ব্যালট পেপারে । এই মুহূর্তে লাখ টাকার প্রশ্ন । সরকারিভাবে নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হচ্ছে, বিষয়টি এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়নি । তবে আইন বলছে, এটা ঠিক করার একমাত্র অধিকারী নির্বাচন কমিশন । অর্থাৎ কোনও কোনও মহল থেকে ব্যালট পেপারেই ভোট করা হবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয় । কোনও কোনও মহল আবার বলছে রাজ্য সরকারের তরফে কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ব্যালটেই করতে হবে ভোট । রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত, এমন কোনও নির্দেশ সরকার দিতে পারে না । বরং, কমিশনের তরফে ভাবা হচ্ছে যুগোপযোগী ভোটিং মেশিন ব্যবহারের ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে এই মুহূর্তে 20 হাজারের কিছু বেশি ভোটিং মেশিন রয়েছে । সেগুলি স্ট্রং রুমে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা আছে । যদিও সেই মেশিন এম-2 প্রজাতির । কিন্তু, দেশের নির্বাচন কমিশন এখন ব্যবহার করছে এম-3 । ভারতের নির্বাচন কমিশনের তরফে দাবি, এই মেশিনের টেম্পারিং কিংবা হ্যাকিং কোনওভাবেই সম্ভব নয় । পাশাপাশি স্বচ্ছতার প্রয়োজনে গত লোকসভা নির্বাচনে সবক'টি বুথে ব্যবহার করা হয়েছিল VVPAT । সেগুলি বানিয়েছিল ECIL । যার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট রয়েছে হায়দরাবাদে । এখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের রয়েছে তিনটি ইউনিট । ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন, কন্ট্রোল ইউনিট এবং VVPAT ।
গতকাল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে আসে ECIL-এর প্রতিনিধিরা । তাঁরা দেখিয়ে যান এম-3 মেশিনের ডেমো । সূত্র জানাচ্ছে, বিষয়টি পছন্দ হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের । আর ECIL-এর তরফে জানানো হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত তাঁরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেশিন সরবরাহ করতে পারবেন । সেই সূত্রে বিষয়টি নিয়ে আজ কমিশনের দপ্তরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় । সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছে, দেশের মধ্যে এবারেই প্রথম ব্যবহার হতে পারে VVPAT ।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিরোধীদের ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার মঞ্চে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তুলে দিয়ে ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনার দাবিতে জোরদার সাওয়াল করা হয় । তার আগে থেকেই বিতর্কটা চলছিল । দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি রীতিমতো ভারতের নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল । কেজরিওয়াল চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, প্রমাণ করে দেবেন ভোটিং মেশিন হ্যাক করা সম্ভব । সেই সূত্রে নির্বাচন কমিশনের তরফে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানানো হয় । বলা হয়, যদি কেউ ভোটিং মেশিন হ্যাক করে দেখাতে পারেন তবে কমিশন অন্য ভাবনা ভাববে । সেই চ্যালেঞ্জের কেউ সামনাসামনি না হলেও, নির্বাচনের আগে এবং পরে EVM টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে । তাতে সমর্থন ছিল তৃণমূলের । এমনকী, লোকসভা নির্বাচনের পরে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো এ বিষয়ে অভিযোগ আনেন ।
শুধুমাত্র মুখ রক্ষার খাতিরেই কমিশনের কাছে প্রশাসনের চাপ আসতে পারে ব্যালটে ভোট করার । তবে, সেটি গ্রহণ করা হবে কি না তা একেবারেই কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত । কমিশন সব রকমভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে । তবে, অন্দরমহল চাইছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনেই ভোট করতে । কারণ, VVPAT-র ব্যবহারে তা একদিকে যেমন স্বচ্ছ হবে, অন্যদিকে গণনাও দ্রুততার সঙ্গে করা যাবে ।