কলকাতা, 10 জুলাই : বাজেট অধিবেশনে রাজ্যের শাসকদলের তরফে যখন বারবার উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বেচে দেওয়ার প্রসঙ্গ । ঠিক তখনই লোকচক্ষুর আড়ালে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিকভাবে রুগ্ন রাজ্যের হাতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (Durgapur Projects Limited) জমি বিক্রি করে দেওয়ার । আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ।
রাজ্যের শাসক দল একদিকে যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়ার জন্য 'বেচুবাবু' আখ্যা দিচ্ছে, তখন কিভাবে রাজ্যের হাতে থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জমি বেচে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো ।
আরও পড়ুন : মমতা চাইলে জেলে যেতে রাজি, প্রতিহিংসার অভিযোগে সরব শুভেন্দু
শুক্রবার বিধানসভায় বিরোধী দল বিজেপির (BJP) তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড বা ডিপিএলের (DPL) জমি বিক্রির জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে রাজ্য সরকার । কাগজপত্রও প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে । বৈঠক করেছেন রাজ্যের বিদ্যুত্মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পূর্ত ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী । সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ।
শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘ডিপিএলের জমি, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের শেয়ার সব বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে । এর আগে রাজ্য সরকার মেট্রো ডেয়ারি একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দিয়েছে । আর আপনারা বলছেন কেন্দ্রীয় সরকার সব বেচে দিচ্ছে । আয়নায় নিজের মুখটা দেখুন ৷’’
আরও পড়ুন : PAC : পিএসির চেয়ারম্যান মুকুল রায়, প্রতিবাদে ওয়াকআউট বিজেপির
সরকারি তথ্য বলছে ডিপিএলের অব্যবহৃত 130 একর জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে আদতে তৈরি হবে আবাসন । ইতিমধ্যেই সিপিআইএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু এই নিয়ে সরব হয়েছে । সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি অপ্রত্যাশিত বললে ভুল হবে ৷ কারণ, নীতিগতভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কাজকর্মের মধ্যে কোনও তফাত নেই ।
তিনি বলছেন, ‘‘আর তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত । ডিপিএলকে দুর্বল করতেই এই সিদ্ধান্ত । এবং অনৈতিকভাবে শিল্পের জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে জমি হাঙরদের হাতে । বিষয়টি শুধু নিন্দার নয়, অনৈতিকও । এই ক্ষেত্রে আমাদের দাবি, এই অব্যবহৃত জমিতে শিল্প করতে হবে । শিল্পের নাম করে প্রোমোটার রাজের বাড়বাড়ন্ত কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না ৷’’
আরও পড়ুন : মমতাকে চাপে রাখতেই কি অমিতের ডেপুটি করা হল নিশীথকে ?
যদিও এই বিষয় নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিরোধীরা অভিযোগ করলেও রাজ্য সরকার মূলত রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কিভাবে আয় বাড়ানো যায় তার চেষ্টা করছে । রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি হল, তারা কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের পক্ষে নয় । সরকারের এই সিদ্ধান্তে একজন শ্রমিকেরও কাজ যাবে না । কাজেই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যকে এক আসনে বসিয়ে এই নিয়ে তুলনা করা ঠিক হবে না ।
এদিকে, এই বিষয় নিয়ে রাজ্যের নতুন বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে এ বিষয়ে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
আরও পড়ুন : Madan Mitra : গরুর গাড়িতে চড়ে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ মদনের