ETV Bharat / city

Clash in Bengal Politics : রাজনৈতিক হিংসার অভিশাপ থেকে কবে মুক্ত হবে বাংলা, কী বলছে রাজনৈতিক মহল ?

author img

By

Published : Mar 6, 2022, 4:47 PM IST

ভোট হলেই রক্ত ঝড়ছে বাংলার মাটিতে (Political clashes in bengal during elections), কবে মুক্তি মিলবে এই পরিস্থিতি থেকে, উঠছে প্রশ্ন ৷

Bengal Politics in present day
রাজনৈতিক হিংসার অভিশাপ থেকে কবে মুক্ত হবে বাংলা

কলকাতা, 6 মার্চ : সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চারণভূমি বাংলা । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, এই বাংলা এখন নির্বাচন এলেই নিজের সংস্কৃতিবান চেহারা থেকে বেরিয়ে অন্য রূপ ধারণ করে । কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের দিকে আঙুল না তুলেও বলা যায়, ভোট এলেই এরাজ্যের মাটি যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলির 'যুদ্ধভূমি' হয়ে দাঁড়ায় তা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না । একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলার মানুষ প্রবলভাবে রাজনৈতিক সচেতন । তাই বছরের-পর-বছর ধর্মীয় উসকানি এবং বিভাজনের রাজনীতিকে বাংলার মানুষ এরাজ্যে প্রবেশ করতে দেননি ৷

কিন্তু এর পাশাপাশি এই সত্যও অস্বীকার করা যায় না যে, লোকসভা হোক বিধানসভা ভোট, পৌরনির্বাচন হোক বা পঞ্চায়েত ভোট বিভিন্ন নির্বাচনে বছরের পর বছর ধরে রক্ত ঝরেছে এই রাজ্যে (Political clashes in bengal during elections) ৷ যা দেখে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যত দিন গিয়েছে তত এই বাংলার মাটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের একটা আম ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে দোষটা আসলে কার? এই বাংলা যদি ধর্মীয় বা জাতপাতের ভেদাভেদ দাঙ্গাকে সমবেতভাবে রুখে দিতে পারে, তা হলে রাজনৈতিক হিংসা, রক্তপাত, পেশীশক্তির আস্ফালনকে কেন রুখে দিতে পারছে না?

এই নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নানা মত । বিরোধীরা সমবেতভাবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলছে ৷ আর তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জনসমর্থন হারিয়েছে, তাই এইসব অজুহাত দেখিয়ে পরাজয় থেকে বাঁচতে চাইছে । কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলছেন, "ধর্মের নামে বিভাজনের ক্ষেত্রে বাংলার জনগণ নীরবে যে অবস্থান গ্রহণ করতে পেরেছে, ভোটে হিংসার ক্ষেত্রে সেই অবস্থান নিতে পারছেন না । আসলে মানুষ ভয় পাচ্ছে, যেকোনও প্রতিবাদ তাদের জন্য জেলযাত্রা বা বড় কোনও সংকট ডেকে আনবে না তো ! প্রতিবাদী আনিশের যে পরিণতি, সেই পরিণতি যাতে নিজেদের না হয় সেই ভয় পাচ্ছে জনগণ ।" যদিও সিপিএম নেতা রবিন দেবের কথায়, "পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রের জন্য বদ্ধভূমি হয়ে গিয়েছে । এখানে বিরোধী রাজনৈতিক দল করার কোনও সুযোগ নেই । আর প্রতিবাদ তো কোন সুদূরের কথা ।"

আরও পড়ুন : অধীরের কোনও গুরুত্ব নেই, কটাক্ষ সৌগতর

তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা সাংসদ সৌগত রায় বলছেন, "অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না । আজকে খুব ছোট ছোট ঘটনা টিভিতে উঠে আসছে । তাই আমরা শাসকদলকে দোষারোপ করছি । কিন্তু বাম আমলের প্রবল হিংসার দিনে যে মানুষগুলো দাঁতে দাঁত চেপে বিরোধী দল করেছে তাঁরা জানেন, সেটা কতটা ভয়ঙ্কর ছিল । তবে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও হিংসাকে সমর্থন করে না । যেকোনও হিংসার ঘটনাই নিন্দনীয় । আমরা জনগণের অধিকারের পক্ষে । ভোটার কার্ড ছাড়া ভোট নয় এই দাবি তুলে আন্দোলন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক । কাজেই তৃণমূলকে দোষারোপ করার আগে বাস্তবের দিকে নজর দিতে হবে । তৃণমূল যেমন ধর্মের রাজনীতিকে সমর্থন করে না, একইভাবে হিংসার রাজনীতিকেও সমর্থন করে না ।"

তবে রাজ্যের শাসকদল যাই বলুক না কেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্টার রাজাগোপাল চক্রবর্তী বলছেন, "বাংলা ধর্মের রাজনীতিকে সমর্থন করে না একথা ঠিক নয় । সমস্যাটা হল, যা দেখা যাচ্ছে ভবিষ্যতে সেই পথে চলবে এমনটা নয় । ভবিষ্যতে যদি এমন দল রাজ্যের ক্ষমতায় আসে যারা ধর্মের রাজনীতিকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়, তাহলে আজকের এই নিরপেক্ষ বাংলা আগামীতে বদলে যেতে পারে । আর আজকের রাজনৈতিক হিংসা সম্পর্কে বলব, নীতি আদর্শের রাজনীতি এখন অতীত হয়ে গিয়েছে । এই মুহূর্তে হার জিতের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জয়ের মার্জিন । সে কারণেই প্রত্যেকটা ভোটে হিংসার এই করুণ ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি । তবে এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকেই দায়িত্ব নিতে হবে । শুধু মৌখিক আশ্বাসই নয় । বাস্তবেও প্রমাণ করতে হবে তারা হিংসার রাজনীতিকে সমর্থন করে না ।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, "অর্থ আর ক্ষমতার লোভ এই অবক্ষয়ের প্রধান কারণ । 1977 থেকে 2022 রাজনৈতিক হিংসার একটা দীর্ঘ ইতিহাস বাংলার রাজনীতির সঙ্গে রয়েছে । এবার সেই পরম্পরা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে । কিন্তু স্বার্থ এবং ক্ষমতার লড়াই আদৌ রাজনৈতিক দলগুলিকে হিংসামুক্ত রাজনীতির পথে এগিয়ে আসতে দেবে তো । আর ধর্মের কথা, অতীতের ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাস ভুলে বাংলার মানুষের মনেও একটু একটু করে দানা বাঁধছে বিভাজনের বিষ । যে আত্মবিস্মৃতির পথ দিয়ে আমরা হাঁটছি, তাকে যদি অবিলম্বে সংশোধন না করে নেওয়া হয়, তাহলে আরও বেশি ভয়ঙ্কর দিন আসতে পারে ।"

কলকাতা, 6 মার্চ : সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চারণভূমি বাংলা । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, এই বাংলা এখন নির্বাচন এলেই নিজের সংস্কৃতিবান চেহারা থেকে বেরিয়ে অন্য রূপ ধারণ করে । কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের দিকে আঙুল না তুলেও বলা যায়, ভোট এলেই এরাজ্যের মাটি যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলির 'যুদ্ধভূমি' হয়ে দাঁড়ায় তা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না । একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলার মানুষ প্রবলভাবে রাজনৈতিক সচেতন । তাই বছরের-পর-বছর ধর্মীয় উসকানি এবং বিভাজনের রাজনীতিকে বাংলার মানুষ এরাজ্যে প্রবেশ করতে দেননি ৷

কিন্তু এর পাশাপাশি এই সত্যও অস্বীকার করা যায় না যে, লোকসভা হোক বিধানসভা ভোট, পৌরনির্বাচন হোক বা পঞ্চায়েত ভোট বিভিন্ন নির্বাচনে বছরের পর বছর ধরে রক্ত ঝরেছে এই রাজ্যে (Political clashes in bengal during elections) ৷ যা দেখে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যত দিন গিয়েছে তত এই বাংলার মাটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের একটা আম ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে দোষটা আসলে কার? এই বাংলা যদি ধর্মীয় বা জাতপাতের ভেদাভেদ দাঙ্গাকে সমবেতভাবে রুখে দিতে পারে, তা হলে রাজনৈতিক হিংসা, রক্তপাত, পেশীশক্তির আস্ফালনকে কেন রুখে দিতে পারছে না?

এই নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নানা মত । বিরোধীরা সমবেতভাবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলছে ৷ আর তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জনসমর্থন হারিয়েছে, তাই এইসব অজুহাত দেখিয়ে পরাজয় থেকে বাঁচতে চাইছে । কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলছেন, "ধর্মের নামে বিভাজনের ক্ষেত্রে বাংলার জনগণ নীরবে যে অবস্থান গ্রহণ করতে পেরেছে, ভোটে হিংসার ক্ষেত্রে সেই অবস্থান নিতে পারছেন না । আসলে মানুষ ভয় পাচ্ছে, যেকোনও প্রতিবাদ তাদের জন্য জেলযাত্রা বা বড় কোনও সংকট ডেকে আনবে না তো ! প্রতিবাদী আনিশের যে পরিণতি, সেই পরিণতি যাতে নিজেদের না হয় সেই ভয় পাচ্ছে জনগণ ।" যদিও সিপিএম নেতা রবিন দেবের কথায়, "পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রের জন্য বদ্ধভূমি হয়ে গিয়েছে । এখানে বিরোধী রাজনৈতিক দল করার কোনও সুযোগ নেই । আর প্রতিবাদ তো কোন সুদূরের কথা ।"

আরও পড়ুন : অধীরের কোনও গুরুত্ব নেই, কটাক্ষ সৌগতর

তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা সাংসদ সৌগত রায় বলছেন, "অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না । আজকে খুব ছোট ছোট ঘটনা টিভিতে উঠে আসছে । তাই আমরা শাসকদলকে দোষারোপ করছি । কিন্তু বাম আমলের প্রবল হিংসার দিনে যে মানুষগুলো দাঁতে দাঁত চেপে বিরোধী দল করেছে তাঁরা জানেন, সেটা কতটা ভয়ঙ্কর ছিল । তবে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও হিংসাকে সমর্থন করে না । যেকোনও হিংসার ঘটনাই নিন্দনীয় । আমরা জনগণের অধিকারের পক্ষে । ভোটার কার্ড ছাড়া ভোট নয় এই দাবি তুলে আন্দোলন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক । কাজেই তৃণমূলকে দোষারোপ করার আগে বাস্তবের দিকে নজর দিতে হবে । তৃণমূল যেমন ধর্মের রাজনীতিকে সমর্থন করে না, একইভাবে হিংসার রাজনীতিকেও সমর্থন করে না ।"

তবে রাজ্যের শাসকদল যাই বলুক না কেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্টার রাজাগোপাল চক্রবর্তী বলছেন, "বাংলা ধর্মের রাজনীতিকে সমর্থন করে না একথা ঠিক নয় । সমস্যাটা হল, যা দেখা যাচ্ছে ভবিষ্যতে সেই পথে চলবে এমনটা নয় । ভবিষ্যতে যদি এমন দল রাজ্যের ক্ষমতায় আসে যারা ধর্মের রাজনীতিকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়, তাহলে আজকের এই নিরপেক্ষ বাংলা আগামীতে বদলে যেতে পারে । আর আজকের রাজনৈতিক হিংসা সম্পর্কে বলব, নীতি আদর্শের রাজনীতি এখন অতীত হয়ে গিয়েছে । এই মুহূর্তে হার জিতের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জয়ের মার্জিন । সে কারণেই প্রত্যেকটা ভোটে হিংসার এই করুণ ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি । তবে এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকেই দায়িত্ব নিতে হবে । শুধু মৌখিক আশ্বাসই নয় । বাস্তবেও প্রমাণ করতে হবে তারা হিংসার রাজনীতিকে সমর্থন করে না ।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, "অর্থ আর ক্ষমতার লোভ এই অবক্ষয়ের প্রধান কারণ । 1977 থেকে 2022 রাজনৈতিক হিংসার একটা দীর্ঘ ইতিহাস বাংলার রাজনীতির সঙ্গে রয়েছে । এবার সেই পরম্পরা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে । কিন্তু স্বার্থ এবং ক্ষমতার লড়াই আদৌ রাজনৈতিক দলগুলিকে হিংসামুক্ত রাজনীতির পথে এগিয়ে আসতে দেবে তো । আর ধর্মের কথা, অতীতের ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাস ভুলে বাংলার মানুষের মনেও একটু একটু করে দানা বাঁধছে বিভাজনের বিষ । যে আত্মবিস্মৃতির পথ দিয়ে আমরা হাঁটছি, তাকে যদি অবিলম্বে সংশোধন না করে নেওয়া হয়, তাহলে আরও বেশি ভয়ঙ্কর দিন আসতে পারে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.