কলকাতা, ১৬ মে : ২৪ এপ্রিল ঘটনা ঘটেছে । তারপর এতদিনে রাজ্য সরকার কী করেছে? হাওড়া আদালত চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে এই প্রশ্ন করল হাইকোর্ট ।
২৪ এপ্রিল হাওড়া পৌরনিগমের কর্মীদের সঙ্গে আইনজীবীদের সংঘর্ষে উত্তাল হয় আদালত চত্বর । পরে পুলিশ এসে আইনজীবীদের উপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ । এই নিয়ে একটি মামলার শুনানি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে চলছিল । বেঞ্চ পরিবর্তন করে গতকাল বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখার্জির বেঞ্চে শুনানি হয় । কিন্ত সমাধান সূত্র সেই অর্থে এখনও অধরা। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার বলেন, কোনও মামলায় হয়তো একজন খুনিকে সবাই জানে চেনে, তা সত্ত্বেও বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আইনের দৃষ্টিতে সে খুনি নয় । সেইরকম এই মামলাতে আইনি প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে, ফলপ্রসূ কিছুর জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে।
গত কয়েকদিন ধরেই প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণনের বেঞ্চ বসছে না। সেই জন্য গতকাল আইনজীবীরা বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে আবেদন জানান যাতে ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি শোনে। প্রথম দিকে শুনতে অসম্মতি জানালেও পরে তিনি মামলাটি শোনেন । শুনানির শুরুতেই হাওড়া কোর্টের আইনজীবীদের তরফে সওয়ালকারী আইনজীবী এস কে কাপুর বলেন, "
আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই । সমস্ত আইনজীবীর কোনও নিরাপত্তা নেই । আইনজীবী বোনদের নিরাপত্তা নেই । ১৫ মে হয়ে গেল পুলিশ কী করেছে? কিছু করেনি । দোষীদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেনি । কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে? আমরা হাওড়া আদালতের ঘটনার CBI তদন্ত দাবি করছি । দুই IPS ও হাওড়া থানার অফিসার এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত । তাঁদের পদ থেকে বরখাস্ত করা হোক।"
অন্যদিকে বার কাউন্সিলের তরফে আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত বলেন, "হাওড়ার ঘটনার পর আইনজীবীদের নিয়ে লোকে হাসাহাসি করে । পুলিশ যেন যা খুশি করতে পারে । আইনজীবীদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে । সারা রাজ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বার কাউন্সিল যদি কর্মবিরতির ডাক না দিত আইনজীবীদের ক্ষোভ সামাল দেওয়া সম্ভব হত না ।" পাশাপাশি হাইকোর্ট প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, "হাওড়া আদালতের ঘটনায় পুলিশ যে হলফনামা দিয়েছে তাতে কোথাও স্পষ্ট করা হয়নি পুলিশ সেদিন কেন আইনজীবীদের উপর লাঠিচার্জ করল?"
সমস্ত বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার প্রশ্ন করেন, "নিশ্চয় চোখের বদলে চোখ কোনও সমাধান হতে পারে না? আপনারা ধৈর্য ধরুন । আগে সবার বক্তব্য শুনতে দিন ।" এরপর তিনি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনেরাল কিশোর দত্তের কাছে জানতে চান, এতদিনে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে এই ব্যাপারে? AG জানান, সেই অর্থে রাজ্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেনি । তবে তাঁর কিছু বক্তব্য আছে । আদালত বলার অনুমতি দিলে তিনি বলবেন ।
আদালত অনুমতি দিলে AG বলেন, "এই মামলায় যে সমস্ত FIR দায়ের হয়েছে সেই সময়ের বয়ান আর এখন পার্টি হিসাবে মামলায় যারা যুক্ত হচ্ছে তাদের বয়ান কী ভাবে পালটে যাচ্ছে সেটা যদি আদালত খতিয়ে দেখে খুব ভালো হয় । তার মানে প্রতিদিন আমরা এই ঘটনার নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি করছি । আমাদের দাবি এই মামলার ইন ক্যামেরা বিচার হোক । আইনজীবী ছাড়া কেউ যাতে এখানে ঢুকতে না পারে সেটা দেখা হোক । পাশাপাশি আবেদনকারীরা যে সমস্ত তথ্য আদালতকে দিচ্ছে তার সত্যতা যাচাই করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হোক । পুরো ঘটনার তদন্ত করে দেখা হোক ।"
নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় গতকাল মামলার শুনানি শেষ হয়ে যায় । আজ আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে ।