কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি : বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হারাতে হবে ৷ আবার রুখে দিতে হবে বিজেপিকেও ৷ এই দ্বিমুখী লক্ষ্য সফলের ডাক দিয়েই রবিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জন সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ আয়োজক ছিল বাম-কংগ্রেসের জোট ৷ পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ ৷
কিন্তু সেই জোট কি আদৌ সফল হবে ! ব্রিগেডের এই সমাবেশ থেকে উঠল সেই প্রশ্ন ৷ প্রকাশ্যেই আইএসএফের আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে কংগ্রেস ও বামেদের টানাপোড়েন স্পষ্ট দেখা গেল ৷ এদিন আব্বাস যখন আসেন, তখন ঘড়ির কাঁটা সবে দুপুর 2 টো পেরিয়েছে ৷ মঞ্চে তখন বক্তৃতা করছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ আব্বাস সিদ্দিকি আসতেই মাঠ জুড়ে হইচই পড়ে যায় ৷ হট্টগোলের মধ্যে তাই বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন অধীর ৷ আর মঞ্চে তখন আব্বাসকে ঘিরে ধরেছেন বাম নেতারা ৷ তাঁরা আব্বাসের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ৷ তখন অধীর চৌধুরীকে ডায়াস থেকে সরতে উদ্যত হন ৷ শেষ পর্যন্ত বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মধ্যস্থতায় তিনি বক্তৃতা শেষ করেন ৷
ফলে তখনই বোঝা যাচ্ছিল বামেদের সঙ্গে আইএসএফের মধ্যে জোট নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হলেও, কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব এখনও স্পষ্ট ৷ আর জোটের সেই ‘চিড়’ ফাটলের আকার নিল আব্বাস সিদ্দিকি বক্তৃতা শুরু করতেই ৷ তিনি বাম প্রার্থীদের জেতানোর আহ্বান জানালেন ৷ কিন্তু একবার কংগ্রেসের প্রতি সমর্থনের বার্তা দিলেন না ৷ এমনকী, অধীরের নামও মুখে আনলেন না ৷ অথচ মহম্মদ সেলিম, বিমান বসুদের নাম তাঁর মুখে শোনা গেল ৷ আর কংগ্রেস বার্তা দিলেন যে ‘জোটের দরজা খোলা’ ৷
স্বাভাবিক তাই এদিনের ব্রিগেডের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল ৷ বিশেষ করে এই ব্রিগেডের সভা নিয়ে কংগ্রেস কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্নও উঠছে কোনও কোনও মহল থেকে ৷ কারণ, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা তো ছিলেন না ৷ উল্টে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের কাউকে হেভিওয়েট বলা যায় না ৷ রণদীপ সুরজেওয়ালা, জিতিন প্রসাদের মতো নেতারা তো ভাষণই দিলেন না ৷ যিনি দিলেন, সেই ছত্তীশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল তেমন পরিচিত মুখ নন ৷ তার উপর আব্বাসকে নিয়ে কংগ্রেস যে অখুশি, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেল ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, এদিনের মঞ্চ থেকে বাম নেতাদের হাবভাবেই স্পষ্ট যে ভোটের বৈতরণী পার করতে তাঁরা আইএসএফকে কতটা ভরসা করছেন ৷ পাশাপাশি কংগ্রেস যে বিষয়টিকে ভালো ভাবে নিচ্ছে না, সেটাও স্পষ্ট হল ৷
আরও পড়ুন : আব্বাস-অধীরের স্নায়ুযুদ্ধ, জোটের আকাশে কালো মেঘ নিয়ে শেষ হল বামেদের ব্রিগেড
এর পর জোটের জল কোন দিকে গড়াবে, সেদিকে তাকিয়ে থাকতেই হবে ৷ আর জোট হলেও তা আদৌ আন্তরিক হবে কি না, সেটা নিয়েও রবিবার দুপুর থেকে ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷ যদিও শেষলগ্নে সবপক্ষই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন ৷ তেমন কিছুই হয়নি বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ ৷