কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি : কয়েক মাস আগে করোনা আবহে আব্বাস সিদ্দিকির একটা ভিডিয়ো ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় ৷ তাতে তিনি আল্লা-র কাছে আবেদন করেন, ভারতে এমন একটা ভাইরাস পাঠান যাতে 10, 20, 50 কোটি ভারতীয় মারা যায় । সোশাল মিডিয়ায় তাঁর এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই বিতর্কের ঝড় ওঠে ৷ শেষে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নেন আব্বাস ৷ ওনার দাবি ছিল, তাঁর ভিডিয়ো কাটছাঁট করে বিকৃত করা হয়েছে ৷ উনি জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীর পাশেই দাঁড়ান ৷ শুধু তাই নয় করোনা রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তিনি এক লাখ টাকা দান করেন বলেও দাবি করেন ৷ ফুরফুরা শরিফের আব্বাস সিদ্দিকি যখন নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে রাজ্যে ভোটে লড়ার তৎপরতা দেখাচ্ছেন তখন সেই দলের সঙ্গে জোট তৈরি করল বাম-কংগ্রেস ৷ প্রশ্ন, এই জোট গড়ে বাম-কংগ্রেসের বহুদিনের লালিত ধর্মনিরপেক্ষতার মনোভাবের কী ধাক্কা খেল না? না-কি প্রেম ও যুদ্ধে( পড়ুন রাজনৈতিক যুদ্ধ) কোনও কিছুই অনৈতিক নয়?
গোটা দেশেই বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল বলে দেগে দেন বাম-কংগ্রেস সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি ৷ তৃণমূলও একই মনোভাব পোষণ করে ৷ যদিও এক সময় রাজ্যে পালাবদলের দাবি তুলে বিজেপি-র হাত ধরেছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এমনকি কেন্দ্রে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার মন্ত্রীও ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এই বিষয়ে তৃণমূলের সাফাই, অটলের বিজেপি আর মোদির বিজেপি না-কি এক নয় ৷ অর্থাৎ অটলবিহারী- লালকৃষ্ণ আদবানির বিজেপি নরম হিন্দুত্ব লাইনে বিশ্বাসী ছিলেন ৷ তৃণমূলে থাকার সময় যেসব নেতারা বিজেপির 'সাম্প্রদায়িকতা'র বিরুদ্ধে সরব হতেন আজ তাঁদের অনেকে বেশ ভালভাবেই পদ্ম শিবিরে শোভা বর্ধন করছেন ৷ ব্যক্তি বিশেষে আদর্শ পরিবর্তন হলে মানা যায় ৷ কারণ ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়ার হিসেব বদল হতে বেশি সময় লাগে না ৷ কিন্তু তা বলে একটা রাজনৈতিক দলের আদর্শ রাতারাতি বদলে যাবে ? করোনার সময়ে 50 কোটি ভারতীয়-র মৃত্যুর দাবি করে আব্বাস একমাত্র বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তা নয় ৷ আব্বাস সিদ্দিকি বিতর্কিত মন্তব্য আরও করেছেন ৷ ইন্ডিয়া সেকুলার ফ্রন্ট গড়ার পরেও তিনি দাবি করেন,"বিজেপি যদি 10 জন মারে আমরাও কিন্তু হাতে চুড়ি পরে বসে থাকব না। আমরাও 20 জনকে মারবো।" শুধুমাত্র মুসলিম ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এখনই ভাঙর নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে তর্জ্জনী দেখাচ্ছেন সিদ্দিকি ৷ বেশ কয়েক বছর আগে জনসভায় ভারতকে হিন্দু শূন্য করার হুঙ্কার দেন এক মিম নেতা আকবরুদ্দিন ওয়েসিস। এই আকবরুদ্দিন ওয়েসিস মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েসিসেরই ভাই। আকবরুদ্দিন ওয়েসিস দাবি করেছিলেন পুলিশ যদি না থাকে তাহলে অতি অল্প সময়ে 100 কোটি হিন্দুকে তাঁরা শেষ করে দেবেন ৷ এই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আকবরুদ্দিন নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে ৷ যদিও সেজন্য মিম প্রধানের মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পাননি আব্বাস ৷ এখন এই মিমের সঙ্গে আব্বাস যুক্ত হলে বাম -কংগ্রেস কী করবে ? বাম নেতারা এখনও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান স্পষ্ট জানিয়েছেন,"রাজ্যে একটা সাম্প্রদায়িক দলকে রুখতে আর একটা সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে হাত মেলাবে না কংগ্রেস ৷"
আরও পড়ুন : তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদির মুখেও ‘বাংলার মেয়ে’-র প্রসঙ্গ
মান্নানের বক্তব্য় ফেসভ্যালুতে মেনে নিলেও আব্বাস সিদ্দকির সঙ্গে কী করে বাম-কংগ্রেস জোট করল তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাবেই ৷ না-কি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে ভেসে উঠতে এছাড়া বাম ও কংগ্রেসের আর কোনও উপায় ছিল না ? অবশ্য রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য সিপিআই(এম) বা কংগ্রেস সব সময় যে তাদের ঘোষিত অসাম্প্রদায়িক মনোভাব বজায় রেখেছে এমন অবশ্য নয় ৷ 1988 সালে 2 জুলাই বোফর্স ইস্যুতে রাজীব গান্ধির বিরোধিতায় কলকাতায় বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের সম্বোর্ধনা মঞ্চে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও জ্যোতি বসুর হাত ধরাধরি করে ছবি এখনও আবছা হয়নি ৷ ক্ষমতার অলিন্দে কত খেলা হয় তার হিসেব আম জনতার জানা থাকার কথা নয় ৷ 'মাই কান্ট্রি, মাই লাইফ' বইয়ে লালকৃষ্ণ আদবানি অনেক কথাই বলেছেন ৷ ভিপি সিংয়ের জনতা দলকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল বাম ও বিজেপি ৷ সেই সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন চার ব্য়ক্তি ৷ তাঁদের মধ্যে গোপণ বৈঠক হত ৷ এই চার ব্যক্তি হলেন দুই বাম নেতা হরকিষেণ সিং সুরজিৎ, জ্যোতি বসু এবং বিজেপির বাজপেয়ী ও আদবানি। আজ সেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামের সহযোগী কংগ্রেস ৷ 2019 লোকসভা ভোটে কেরালায় ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের সঙ্গে ( আইইউএমএল) জোট করে কংগ্রেস ৷ এছাড়া হাল আমলে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গেও জোটে আছে কংগ্রেস ৷ আসলে রাজনীতির লক্ষ্য যেনতেন ভাবে ক্ষমতা দখল ৷ দীর্ঘ 34 বছর রাজত্ব করে আজ ক্ষমতাচ্যুত বাম নেতারা আবারও রাজ্য রাজনীতিতের হালে পানি পেতে চান ৷ এজন্য আদর্শের একটু এদিক-ওদিক করে নিলে মন্দ কী ! অন্যদিকে অধীর ক্যারিশমায় মালদা-মুর্শিদাবাদের পরিধিতে ক্রমশ আটকে পড়া কংগ্রেসকে আবার কিছুটা মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে আব্বাসের সমর্থন চাই-ই চাই ৷ তা না হলে শুধু আব্বাস আর মিম ভোটে লড়লে কংগ্রেসের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক অধীর গড়েও ধস নামার সম্ভাবনা ৷ আর তাহলে যেটুকু মাটি দখলে আছে তাও হারাতে পারে কংগ্রেস ৷ তাই ভোটের দায়-ই বড় দায় ৷