কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি : অবশেষে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। যোগাযোগ করেছেন টেলিফোনেও। সেই সূত্রেই আজ রাজভবন যাচ্ছেন রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে রাজভবনে হবে পৌরভোট সংক্রান্ত বৈঠক। কমিশন সূত্রে এই খবর মিলেছে।
পৌরভোট নিয়েও সক্রিয় হন রাজ্যপাল। পৌরভোটের গতিপ্রকৃতি বুঝতে 27 ফেব্রুয়ারি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে রাজভবনে ডাকা হয়েছে বলে টুইট করেন তিনি। যদিও বিষয়টি জানেন না বলে ETV ভারতকে জানান রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার। ফলে, বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
সরকারিভাবে লিখিত প্রস্তাব যায়নি ঠিকই। তবে নবান্ন সূত্রে খবর, পৌরভোটের প্রস্তাবিত দিন চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজ্য সরকার। পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর সূত্রের খবর, ঐতিহ্য কিছুটা বদলে ফেলে এবার কলকাতার সঙ্গেই ভোট হবে হাওড়া পৌরনিগমের। শেষবারে শুধুমাত্র কলকাতায় একদিনে নির্বাচন হয়েছিল। 15 দিন পর হয় বাকি পৌরসভাগুলির নির্বাচন।
সূত্র জানাচ্ছে, এবার 12 এপ্রিল কলকাতা ও হাওড়া পৌরনিগম এবং 26 এপ্রিল বাকি পৌরসভা ও পৌরনিগমগুলিতে ভোটের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। সাধারণভাবে রাজ্যের পাঠানো প্রস্তাবেই সিলমোহর দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে একদিনে 102টি পৌরভোট করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল। কমিশন চেয়েছিল, কয়েকটি দফায় ভোট করাতে। কিন্তু মীরা পাণ্ডের মতো কয়েকজন ব্যতিক্রমী নির্বাচন কমিশনার ছাড়া ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্বৈরথে যাননি কোনও নির্বাচন কমিশনার। সেই ঐতিহ্য বজায় থাকলে ধরেই নেওয়া যায়, আগামী 12 এবং 26 এপ্রিল হতে চলেছে রাজ্যের পৌরসভা এবং পৌরনিগমের ভোট। পৌর এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের তরফ থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ব্যারাকপুর এলাকার 8 পৌরসভার ভোট এখনই হবে না। কারণ, রাজ্য সরকার ব্যারাকপুরকে কর্পোরেশন হিসেবে তৈরি করতে চাইছে।
যদিও রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, BJP সাংসদ অর্জুন সিং এবার ওই অঞ্চলের পৌরসভাগুলির দখল পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাবেন। ইতিহাস বলছে, শক্ত বিরোধিতা থাকলে ওই এলাকার ভোট রক্তাক্ত হয়। এমনিতেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত অশান্ত ছিল ভাটপাড়া-গারুলিয়া- কাঁকিনাড়ার মতো বেশ কিছু অঞ্চল। এই মুহূর্তে সেখানে ভোট করা হলে উত্তেজনা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের রণকৌশল বলছে, কোনওভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দৃশ্য ফিরিয়ে আনা যাবে না। পঞ্চায়েত ভোটের জোরজুলুম মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। লোকসভা নির্বাচনে তার অনেকটাই প্রতিফলন ঘটেছে । বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাই কোনওভাবেই শহুরে ভোটারদের মনে এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। হয়ত সেই কারণেই ব্যারাকপুর পৌরনিগম তৈরির প্রক্রিয়ার কথা সামনে রেখে ওই এলাকার ভোট পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে নিয়মের জাঁতাকলে সিউড়ি এবং বোলপুরের ভোট হওয়া সম্ভব নয়। সেই সূত্রেই মোট খালি হওয়া এবং হতে চলা 112টি পৌরসভার মধ্যে এবার ভোট হবে 102টি পৌরসভা এবং পৌরনিগমের।
এই বিষয়গুলি নজরে আসার পরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রাজ্যপাল। সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন ওঠে, একটি সাংগঠনিক পদে থেকে অন্য সাংবিধানিক পদে থাকা কোনও ব্যক্তিকে এভাবে তলব করা যায় কি না। এপ্রসঙ্গে রাজ্যপাল একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “ভারতীয় সংবিধানের 243 K ধারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পৌরভোট পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে।"
এর আগে কোনও রাজ্যপাল রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ডেকে ভোটের গতিপ্রকৃতি জানতে চেয়েছেন কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। রাজ্যপাল নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিয়ে টুইট করলেও, সোমবার বিকেল পর্যন্ত রাজভবনের তরফে কোনও বার্তা নির্বাচন কমিশনে যায়নি বলে সাফ জানিয়ে দেন সৌরভ দাস। তিনি বলেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে কোনও চিঠি পাইনি। টুইটের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু, সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত এবিষয়ে কিছুই জানি না।"
যদিও কমিশন সূত্রে খবর, পরে ফোন করেন রাজ্যপাল। নির্বাচন কমিশনারকে জানানোর আগেই টুইট করা ঠিক হয়নি বলে বুঝতে পারেন রাজ্যপাল। এরপরে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে রাজভবন। ওইদিন সন্ধের দিকে রাজ্যপাল ফোন করেন সৌরভ দাসকে। পরে মঙ্গলবার রাজভবনের তরফে চিঠিও দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনারকে। সেই সূত্রেই আজ রাজভবনে যাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার। পৌর নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে তিনি রাজ্যপালকে অবহিত করবেন বলে খবর।