ETV Bharat / city

ফৌজদারি আইন নিয়ে অনভিজ্ঞতাই জটিলতা তৈরি করছে নারদ মামলায়

নারদ মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে ৷ অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হবে নাকি হাউজ অ্যারেস্ট করে রাখা হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে ৷ আর এই জটিলতা ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত অনভিজ্ঞতার জন্যই তৈরি হচ্ছে ৷ এমনটাই বললেন আইনজীবী অরুণাংশু চক্রবর্তী ৷ ইটিভি ভারতকে তিনি সেই কথাই জানিয়েছেন ৷

ফৌজদারি আইন নিয়ে অনভিজ্ঞতাই জটিলতা তৈরি করছে নারদ মামলায়
ফৌজদারি আইন নিয়ে অনভিজ্ঞতাই জটিলতা তৈরি করছে নারদ মামলায়
author img

By

Published : May 21, 2021, 7:02 PM IST

জেলবন্দি থাকা আর হাউজ অ্যারেস্ট থাকা, দু’টোই অ্যারেস্ট ৷ দু’টোতেই অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত পরিসরে কাঁটছাঁট করা হচ্ছে ৷ তিনি বাড়িতেই থাকুন আর জেলে থাকুন ৷ হাসপাতালের আইসিইউ বেড থেকে আইটিইউ বেডে স্থানান্তরিত করা হল ৷ অনেকটা সেই রকম ৷

তবে আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, পুরো গ্রেফতারিটাই বেআইনি ভাবে করা হয়েছে ৷ তার কারণ হল, একবার চার্জশিট পেশ হয়ে গেলে তার পর আর তদন্তকারী সংস্থার কোনও ভূমিকা থাকে না ৷ তখন আদালত ও অভিযুক্ত, এই দু’জন থাকে ৷

আর দ্বিতীয় বিষয় হল, 2019 সালে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে চার্জশিট পেশ করার পর পরবর্তী তদন্ত করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে ৷ এখন সিবিআই যে বলছে তারা আরও তদন্ত করছে, সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি কোথায় ?

তৃতীয় বিষয় হল, কেউ পলাতক থাকলে চার্জশিট পেশ করার পর তাদের গ্রেফতার করা যায় ৷ যেমন রথীন দণ্ডপাটের মামলায় হয়েছিল ৷ সেখানে 20 জন পলাতক ছিল ৷ চার্জশিট পেশ করার পর তাদের গ্রেফতার করা হয় ৷ সেই মামলা পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল ৷

তাছাড়া ট্রায়াল কোর্ট রিমান্ডে পাঠাতে পারে ৷ কিন্তু হাইকোর্টের সেই জুরিডিকশন নেই ৷ হাইকোর্ট দেখবে যে নিম্ন আদালতের রায় ঠিক ছিল না ভুল ছিল ৷ রাস্তাঘাটে কে মারামারি করল, তা নিয়ে আলাদা সংস্থা আছে ৷ আলাদা সাংবিধানিক নিয়ম আছে ৷ সেক্ষেত্রে যদি মনে হয় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, তার জন্য রাজ্যপালের রিপোর্ট চাওয়া যেতে পারে ৷

কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় যদি ঠিক না হয়, তাহলে হাইকোর্টকে সেই রায় বাতিল করতে হবে ৷ সেক্ষেত্রে আদালতে জামিন খারিজের আবেদন করতে হবে ৷ কিন্তু এই ক্ষেত্রে কোনও দরখাস্ত করা হয়নি ৷ আর বহু বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে, মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে কোনও নির্দেশ দেওয়া যাবে না ৷ একজন মানুষের মৌলিক অধিকার আপনি কেড়ে নিচ্ছেন মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে ?

আমার মনে হয়, দুই বিচারপতির সিআরপিসি সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা রয়েছে ৷ রাজ্যের হয়ে যাঁরা মামলা করছেন, তাঁদেরও একই হাল ৷ তাঁরা কেন আদালতকে বললেন না যে, সিবিআই চার্জশিট পেশ করতে চলেছে ৷ পাঁচ বছরে কোনও গ্রেফতারি হয়নি ৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আইন কমিশনের রিপোর্টেও রয়েছে ধর্ষণ, খুনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের ক্ষেত্রেই একমাত্র গ্রেফতার করতে হবে ৷ এছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না ৷ গ্রেফতার করা মানে সমাজে তার ভাবমূর্তি খারাপ হওয়া ৷ তা সত্ত্বেও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এটা কি খুব ভয়ঙ্কর কোনও অপরাধ ?

অন্যদিকে চিদম্বরম ও অর্ণব গোস্বামীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তো একই কথা বলেছে ৷ তা হল, ‘জেল ইজ দ্য এক্সসেপশন, বেল ইজ দ্য রুল’ ৷ খুব দুঃখজনক ভাবে বলতে হচ্ছে যে এই বিষয়গুলি কেন তুলে ধরা হয়নি ?

তাছাড়া নিম্ন আদালতের জামিনের নির্দেশের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করা যায় ৷ সিআরপিসিতে সেই নিয়ম রয়েছে ৷ আর 227 অনুচ্ছেদ হল সুপারভাইজারি জুরিডিকশন ৷ সেই হিসেবে নিম্ন আদালতের যেটা করার কথা সেটা করেনি ৷ অথবা যেটা করল সেটা আইন অনুযায়ী করেনি ৷ একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে ৷ তখন সেই অর্ডার হাইকোর্ট সবস্টিটিউট করতে পারে ৷ কিন্তু এখানে সেই পথে না গিয়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ৷ সেটা একেবারে বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ৷

আরও পড়ুন : কাটল না জট, 5 দিন ধরে রাজ্যজুড়ে নারদ-নারদ

হাউজ অ্যারেস্টের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে হবে ৷ এই ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে ৷ বিশেষ করে আর্টিকেল 21 এর কথা উল্লেখ করতে হবে ৷ সেখানে বলা আছে আইনের সঠিক পদ্ধতি ছাড়া কারও অধিকার খর্ব করা যাবে না ৷ হাইকোর্ট চার জন নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে ৷

জেলবন্দি থাকা আর হাউজ অ্যারেস্ট থাকা, দু’টোই অ্যারেস্ট ৷ দু’টোতেই অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত পরিসরে কাঁটছাঁট করা হচ্ছে ৷ তিনি বাড়িতেই থাকুন আর জেলে থাকুন ৷ হাসপাতালের আইসিইউ বেড থেকে আইটিইউ বেডে স্থানান্তরিত করা হল ৷ অনেকটা সেই রকম ৷

তবে আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, পুরো গ্রেফতারিটাই বেআইনি ভাবে করা হয়েছে ৷ তার কারণ হল, একবার চার্জশিট পেশ হয়ে গেলে তার পর আর তদন্তকারী সংস্থার কোনও ভূমিকা থাকে না ৷ তখন আদালত ও অভিযুক্ত, এই দু’জন থাকে ৷

আর দ্বিতীয় বিষয় হল, 2019 সালে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে চার্জশিট পেশ করার পর পরবর্তী তদন্ত করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে ৷ এখন সিবিআই যে বলছে তারা আরও তদন্ত করছে, সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি কোথায় ?

তৃতীয় বিষয় হল, কেউ পলাতক থাকলে চার্জশিট পেশ করার পর তাদের গ্রেফতার করা যায় ৷ যেমন রথীন দণ্ডপাটের মামলায় হয়েছিল ৷ সেখানে 20 জন পলাতক ছিল ৷ চার্জশিট পেশ করার পর তাদের গ্রেফতার করা হয় ৷ সেই মামলা পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল ৷

তাছাড়া ট্রায়াল কোর্ট রিমান্ডে পাঠাতে পারে ৷ কিন্তু হাইকোর্টের সেই জুরিডিকশন নেই ৷ হাইকোর্ট দেখবে যে নিম্ন আদালতের রায় ঠিক ছিল না ভুল ছিল ৷ রাস্তাঘাটে কে মারামারি করল, তা নিয়ে আলাদা সংস্থা আছে ৷ আলাদা সাংবিধানিক নিয়ম আছে ৷ সেক্ষেত্রে যদি মনে হয় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, তার জন্য রাজ্যপালের রিপোর্ট চাওয়া যেতে পারে ৷

কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় যদি ঠিক না হয়, তাহলে হাইকোর্টকে সেই রায় বাতিল করতে হবে ৷ সেক্ষেত্রে আদালতে জামিন খারিজের আবেদন করতে হবে ৷ কিন্তু এই ক্ষেত্রে কোনও দরখাস্ত করা হয়নি ৷ আর বহু বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে, মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে কোনও নির্দেশ দেওয়া যাবে না ৷ একজন মানুষের মৌলিক অধিকার আপনি কেড়ে নিচ্ছেন মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে ?

আমার মনে হয়, দুই বিচারপতির সিআরপিসি সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা রয়েছে ৷ রাজ্যের হয়ে যাঁরা মামলা করছেন, তাঁদেরও একই হাল ৷ তাঁরা কেন আদালতকে বললেন না যে, সিবিআই চার্জশিট পেশ করতে চলেছে ৷ পাঁচ বছরে কোনও গ্রেফতারি হয়নি ৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আইন কমিশনের রিপোর্টেও রয়েছে ধর্ষণ, খুনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের ক্ষেত্রেই একমাত্র গ্রেফতার করতে হবে ৷ এছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না ৷ গ্রেফতার করা মানে সমাজে তার ভাবমূর্তি খারাপ হওয়া ৷ তা সত্ত্বেও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এটা কি খুব ভয়ঙ্কর কোনও অপরাধ ?

অন্যদিকে চিদম্বরম ও অর্ণব গোস্বামীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তো একই কথা বলেছে ৷ তা হল, ‘জেল ইজ দ্য এক্সসেপশন, বেল ইজ দ্য রুল’ ৷ খুব দুঃখজনক ভাবে বলতে হচ্ছে যে এই বিষয়গুলি কেন তুলে ধরা হয়নি ?

তাছাড়া নিম্ন আদালতের জামিনের নির্দেশের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করা যায় ৷ সিআরপিসিতে সেই নিয়ম রয়েছে ৷ আর 227 অনুচ্ছেদ হল সুপারভাইজারি জুরিডিকশন ৷ সেই হিসেবে নিম্ন আদালতের যেটা করার কথা সেটা করেনি ৷ অথবা যেটা করল সেটা আইন অনুযায়ী করেনি ৷ একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে ৷ তখন সেই অর্ডার হাইকোর্ট সবস্টিটিউট করতে পারে ৷ কিন্তু এখানে সেই পথে না গিয়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ৷ সেটা একেবারে বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ৷

আরও পড়ুন : কাটল না জট, 5 দিন ধরে রাজ্যজুড়ে নারদ-নারদ

হাউজ অ্যারেস্টের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে হবে ৷ এই ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে ৷ বিশেষ করে আর্টিকেল 21 এর কথা উল্লেখ করতে হবে ৷ সেখানে বলা আছে আইনের সঠিক পদ্ধতি ছাড়া কারও অধিকার খর্ব করা যাবে না ৷ হাইকোর্ট চার জন নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.