কলকাতা, 30 জানুয়ারি : কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ রয়েছে। তবে, সমস্যা রয়ে গিয়েছে কো-উইন পোর্টালে। আর, এই 'ভিলেন' কো-উইন পোর্টালের জেরে, রেকর্ড সংখ্যক সেন্টারের ব্যবস্থা সত্ত্বেও রাজ্যে কমে গিয়েছে কোভিড-19-এর টিকাকরণের হার। এমনই জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর।
আপৎকালীন পরিস্থিতির কারণে 16 জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে এই ভ্যাকসিন। এ রাজ্যে ছয় লাখের কিছু বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত দুই দফায় এসেছে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড। প্রথম দফায় এসেছে 6.89 লাখ ডোজ়, দ্বিতীয় দফায় এসেছে 6.99 লাখ ডোজ়। তবে, কোভিড-19-এর অন্য একটি ভ্যাকসিন কোভ্যাকসিনের 1.13 লাখ ডোজ়-ও এসেছে এ রাজ্যে। আগামী সপ্তাহে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এ দিকে, দ্রুত যাতে এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করা যায়, তার জন্য সেন্টারের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।
এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে, 29 জানুয়ারি এ রাজ্যে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশনের দশম দিনে রেকর্ড সংখ্যক অর্থাৎ, 518টি সেন্টারের ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য দপ্তর। প্রতিটি সেন্টারে 100 জনের হিসাবে 51800 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, 51800 জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে 34509 জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, দশম দিনে এ রাজ্যে লক্ষ্যমাত্রার 67 শতাংশ ক্ষেত্রে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, এই 10 দিনে এ রাজ্যের 304572 জন স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। অথচ, এই 10 দিনে 221903 জন স্বাস্থ্য কর্মীকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, এই 10 দিনে এ রাজ্যে লক্ষ্যমাত্রার 73 শতাংশ ক্ষেত্রে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন সম্ভব হয়েছে। এদিকে, অষ্টম দিনে দেখা গিয়েছিল এ রাজ্যে লক্ষ্যমাত্রার 75 শতাংশ ক্ষেত্রে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন সম্ভব হয়েছে।
গত 25 জানুয়ারি এ রাজ্যে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশনের সপ্তম দিনে 475টি সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই দিন 80 শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। অথচ, 29 জানুয়ারি, দশম দিনে এ রাজ্যে 518টি সেন্টার অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি সংখ্যক সেন্টারের ব্যবস্থা সত্ত্বেও, এই দশম দিনে 67 শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ভ্যাকসিনেশনের হার কেন এমন কমে গেল? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, "কো-উইন পোর্টালে সমস্যার কারণে রাজ্যে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশনের হার কমে গিয়েছে।" কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে অনীহা রয়েছে, এই বিষয়টি সঠিক নয়। এ কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, "কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ রয়েছে। রাত দুটোর সময় এসএমএস পেয়ে পরের দিন ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সেন্টারেও পৌঁছে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।"
আরও পড়ুন : রাজ্যে আরও কমল দৈনিক সংক্রমণ
কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য কো-উইন পোর্টালে স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, কোন দিন কোন সেন্টারে কোন স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, তা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীকে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানানো হয়। এই কো-উইন পোর্টাল থেকেই সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে পৌঁছে যায় ওই এসএমএস। অথচ, গত 16 জানুয়ারি থেকেই দেখা যাচ্ছে, এই পোর্টালের সমস্যার বিষয়টি এ রাজ্যের ভ্যাকসিনেশনের উপর প্রভাব ফেলছে। ভ্যাকসিনেশনের প্রথম দিন গত 16 জানুয়ারি এই কো-উইন পোর্টালে বিভ্রাটের জেরে হাতে লিখে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন প্রাপকদের নাম নথিভুক্ত করতে হয়েছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কো-উইন পোর্টাল কখনও কাজ করে কখনও কাজ করে না। এসএমএস না পৌঁছনোর কারণে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের ফোন করেও ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।