কাঁথি ও কলকাতা, 9 জুলাই : প্রায় তিন বছর আগের একটি মৃত্য়ু নিয়ে নতুন করে কাটাছেঁড়া শুরু হওয়ায় মাথাব্যথা বাড়তে পারে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) ৷ কারণ, ঘটনা পুরনো হলেও সেই বিষয়ে দায়ের হওয়ার এফআইআর-টি একেবারে টাটকা ৷ গত বুধবার (7 জুলাই, 2021) পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী নামে এক মহিলা ৷ তাঁর স্বামী প্রয়াত শুভব্রত চক্রবর্তী ছিলেন শুভেন্দুর দেহরক্ষী ৷ 2018 সালের 13 অক্টোবর শুভেন্দুর পারিবারিক বাসভবন ‘শান্তিকুঞ্জ’ লাগোয়া পুলিশ বারাকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি ৷ পরদিন (14 অক্টোবর, 2018) কলকাতার অ্য়াপোলো হাসপতালে মৃত্য়ু হয় তাঁর ৷ গোটা ঘটনায় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন মৃতের স্ত্রী ৷ আর সেই কারণেই স্বামীর মৃত্য়ুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন সুপর্ণা ৷
এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, হঠাৎ এতদিন পর এফআইআর কেন ? সুপর্ণার দাবি, ভয় ৷ হ্যাঁ ৷ ওই ঘটনার পর ভয় পেয়েছিলেন তিনি ৷ সেকথা এফআইআরেও জানিয়েছেন মহিলা ৷ তাঁর যুক্তি, শুভেন্দু সেই সময় শাসকদলের দাপুটে নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ৷ আর সরকারিভাবেই জানানো হয়েছিল, শুভব্রত আত্মহত্যা করেছেন ৷ স্বামীকে হারিয়ে দুই মেয়ের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব এসে পড়েছিল সুপর্ণার কাঁধে ৷ তাই স্বামীর মৃত্য়ু নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তখনকার মতো চুপ থাকায় শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি ৷ কিন্তু এখন সেই শুভেন্দু আর তৃণমূলে নেই ৷ তিনি বিজেপির নেতা ও বিধায়ক ৷ তাই সুপর্ণার মনে হয়েছে, এবার হয়তো গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালানো যেতে পারে ৷ আর সেই কারণেই প্রায় তিন বছর আগের ঘটনায় নতুন করে এফআইআর দায়ের করেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : দেহরক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্য়ুতে নাম জড়াল শুভেন্দু অধিকারীর, তিন বছর পর দায়ের অভিযোগ
তবে মৃতের স্ত্রী যাই বলুন না কেন, তাঁর পদক্ষেপে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে গেরুয়াশিবির ৷ তাদের অভিযোগ, শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছে রাজ্যের শাসকদল ৷ লাগাতার নানা ইস্যুতে তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে ৷ তাই, শুভব্রতর মৃত্য়ু তৃণমূলের নতুন হাতিয়ার বলে দাবি বিজেপির ৷
সুপর্ণার এফআইআরের কথা প্রকাশ্যে আসতেই এ নিয়ে চড়ছে রাজনীতির পারদ ৷ মাঠে নেমেছেন সংশ্লিষ্ট দুই দলের খেলোয়াড়রা ৷ যাঁদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) ৷ শুক্রবার সকালে এই বিষয়ে টুইটারে (Twitter) একটি পোস্ট করেন তিনি ৷ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) উদ্দেশ করে জানতে চান, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI) অভিযোগকারিণী ও তাঁর পরিবারকে চেনে কি না !
-
.@DilipGhoshBJP Do you or your central team know this family and this lady? Her husband was security guard of your leader. Kindly go through her appeal. Kindly observe, that Rakhal Bera is here again! Your LOP will try to avoid the questions raised by the widow. pic.twitter.com/ttIVgC4fFu
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) July 9, 2021 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
">.@DilipGhoshBJP Do you or your central team know this family and this lady? Her husband was security guard of your leader. Kindly go through her appeal. Kindly observe, that Rakhal Bera is here again! Your LOP will try to avoid the questions raised by the widow. pic.twitter.com/ttIVgC4fFu
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) July 9, 2021.@DilipGhoshBJP Do you or your central team know this family and this lady? Her husband was security guard of your leader. Kindly go through her appeal. Kindly observe, that Rakhal Bera is here again! Your LOP will try to avoid the questions raised by the widow. pic.twitter.com/ttIVgC4fFu
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) July 9, 2021
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নারদ কাণ্ডে রাজ্যের চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, নারদ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারী ৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তাঁর কেশাগ্রও স্পর্ষ করেননি ৷ তৃণমূলের যুক্তি, শিবির বদল করাতেই সিবিআইয়ের ছোঁয়াচ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ৷ এমনকী, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা সময় নানা ইস্য়ুতে সিবিআই, ইডি-র মতো সংস্থাকে অন্যায়ভাবে ব্য়বহারের অভিযোগও তুলেছে এ রাজ্যের শাসকশিবির ৷ কুণালের খোঁচা স্পষ্ট ৷ যেহেতু শুভেন্দু এখন বিজেপির লোক, তাই তাঁর বিরুদ্ধে একজন বিধবা গুরুতর অভিযোগ তুলেও সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় দল যে তাতে আমল দেবে না, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি ৷ কার্যত জবাবদিহি চেয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতির কাছে ৷
এদিকে, ইতিমধ্যেই শাসকদলের তরফে শুভব্রতর স্ত্রীর পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে ৷ কাঁথির অধিকারী পরিবারের ঘোরতর বিরোধী অখিল গিরির ছেলে তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি সরাসরি জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথম থেকেই এই ঘটনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এসেছেন ৷ আজ মৃতের স্ত্রীও সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ৷ প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে মৃতের আত্মীয় তথা মহিলাষদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তীর গলাতেও ৷ সকলেই একবাক্যে ঘটনার নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন ৷
আরও পড়ুন : শুভেন্দুর দলত্যাগ বিরোধী আইনের হুঁশিয়ারি কতটা বাস্তব ?
অভিযোগকারিণীর ইঙ্গিত, তাঁর স্বামীর মৃত্য়ুতে আত্মহত্যার তত্ত্ব তিনি মানতে পারছেন না ৷ বরং তাঁর মনে হচ্ছে এর পিছনে অন্য রহস্য আছে ৷ যা শুভেন্দু তাঁর প্রভাব খাটিয় ধামাচাপা দিয়ে থাকতে পারেন ৷ গোটা ঘটনায় শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ রাখাল বেরার (Rakhal Bera) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷ এই রাখাল বেরার বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে ৷ যে কারণে আগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ সেই ঘটনাতেও শুভেন্দু-যোগ দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ ৷
এখন যদি শুভব্রত চক্রবর্তীর মৃত্যু নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয় তাহলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোনোও অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ৷ সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র শুভেন্দুর নয়, তাঁর দলেরও শিরঃপীড়া বাড়বে ৷ এদিকে, এই ঘটনার পর শুক্রবারই কাঁথি থানায় ছুটে আসেন শুভেন্দুর ভাই তথা তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী (Dibyendu Adhikari) ৷ প্রায় আধঘণ্টা থানায় ছিলেন তিনি ৷ তবে কী কারণে তাঁর থানায় আগমন, তা খোলসা করেননি দিব্যেন্দু ৷ মন্তব্য করতে চাননি শুভব্রতর স্ত্রীর করা এফআইআর নিয়েও ৷ প্রসঙ্গত, খাতায়-কলমে তৃণমূলের সাংসদ হলেও দলের সঙ্গে এখন আর তেমন কোনও সম্পর্ক নেই দিব্যেন্দুর ৷ তাই তাঁর থানায় আসার পিছনে বিজেপি নেতা দাদার কোনও নির্দেশ রয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠবেই ৷