কলকাতা, 23 জুলাই : এখনই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ৷ সাংবাদিক সম্মেলন করে শনিবার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়ে দিল, যদি বিচারে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে দল ৷ তার আগে কোনও ব্যবস্থা নয় ৷
এদিন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় হলেও সকাল থেকে নীরব ছিল তৃণমূল। বিকেলে ক্যামাক স্ট্রীটে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর সাড়ে ছ’টায় মেট্রোপলিটনের তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দলের চার নেতা। কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য মিলিতভাবে এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই মুহূর্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশ থেকে সরছেন না।
প্রসঙ্গত, এদিন প্রায় 27 ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তৃণমূলের মহাসচিব এবং রাজ্যের শিল্প ও পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (ED) ৷ একই সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও (Arpita Mukherjee) গ্রেফতার করা হয় ।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হল, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই ৷ এক্ষেত্রে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার বিষয়ে একমাত্র বলতে পারেন তিনি এবং তাঁর আইনজীবী । কোনোভাবেই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কখনোই যুক্ত ছিলেন না । কোনও নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের ছবি দেখিয়ে বিজেপির তরফ থেকে তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে ।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলনের সারকথা, যতই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করুক ইডি, আপাতত রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সম্ভবত থাকছেন পার্থবাবু । একই সঙ্গে থাকছেন দলের মহাসচিবও । এক্ষেত্রে আইনের উপর আস্থা রাখছে তৃণমূল ৷ আইন যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দোষী সাব্যস্ত করে, সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল । সাংবাদিক সম্মেলনে কুণাল ঘোষের যুক্তি ছিল, যে ভদ্রমহিলার বাড়ি থেকে টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই । সামাজিকভাবে কেউ কারও সঙ্গেই মিশতেই পারেন ৷ কিন্তু তাতে কোনও দোষ প্রমাণিত হয় না ।
এখানেই কুণালের সংযোজন, বিজেপি একুশে জুলাইয়ের জনসমুদ্র দেখে ভয় পেয়েছে । আর সেই ভয়ে থেকেই এসব করাচ্ছে । তৃণমূলের তরফ থেকে এও বলা হয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতেন, তাহলে তাঁকে এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হত না ।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পার্থদা যদি ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে যেত, তাহলে ইডি তদন্ত হত না । যেহেতু পার্থদা ওয়াশিং মেশিনে ঢোকেনি, তাই তাঁর বিরুদ্ধে এজেন্সি তত্পর হয়ে গেল । আমি ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিনি । তাই আমাকেও জেলে যেতে হয়েছিল । কিন্তু একই মামলায় অন্য একজনকে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়নি । বিজেপিতে গেলে সাধু আর তৃণমূলে থাকলে চোর, এই দ্বিচারিতা চলছে ।’’ এক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে রাজনৈতিক কাজে লাগাচ্ছে ।
শুধু বিজেপি নয় এদিন তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস ও সিপিএমও । এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘কংগ্রেস হল দ্বিচারী । এরা দিল্লিতে সনিয়া গান্ধীকে ইডি জেরা করলে বলছে প্রতিহিংসা আর বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলে বলছে ভালো ।’’
সিপিএমের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তাঁর টিপ্পনী, ‘‘ওদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না । বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজে চোরেদের মন্ত্রিসভা বলে বেরিয়ে এসেছিলেন । আর ত্রিপুরায় তারাই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে পরিবারগুলোকে পথে বসিয়েছে ।’’