কলকাতা, 17 মে : প্রতি বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সিট বাড়ানোর আবেদন আসে অধীনস্ত কলেজগুলোর কাছ থেকে । তবে এই বছরের ছবিটা আলাদা । সিট বাড়ানো নয়, বরং কমানোর দাবি এল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে । একথা জানালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, জেনেরাল ও অনার্স দুই ক্ষেত্রেই সিট বাড়ানোর পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় । কলেজগুলো যতই সিট বাড়ানোর আবেদন করুক না কেন অনার্সের ক্ষেত্রে 10 শতাংশ ও জেনেরালের ক্ষেত্রে 15 শতাংশ সিটই বাড়ানো হবে । তার থেকে বেশি সিট বাড়ানোর বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না। মূলত, ভরতি নিয়ে দুর্নীতির ঘটনা এড়াতেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপাচার্য ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অনার্সে UG-র কতগুলো সিট হবে, সেই বিষয়ে আজকের সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পাশ বা জেনেরালেও আমরা কলেজগুলোকে বলব নির্দিষ্ট সংখ্যক সিটের কথা বলে দিতে। কারণ, আমাদের মনে হয়েছে, যে সংখ্যক সিট কলেজগুলোতে আছে বা তারা বাড়িয়ে করেছে সেই সংখ্যক সিটের কোনও ডিমান্ড নেই । ডিমান্ড নেই বলেই আসলে ভরতিটা হয় না। সাবজেক্ট ওয়াইজ ডিমান্ডই নেই, সাপ্লাইটা বেশি হয়ে গেছে । ভরতিটা হবে কী করে ।" অনেকগুলো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সিট কমিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছে বলে জানান সোনালী । তিনি বলেন, "অনেকগুলো কলেজ আমাদের কাছে আবেদন করেছে যে তাদের সিটের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হোক। এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে সিদ্ধান্তে এসেছি, আজকে NIRF ক্রমতালিকায় কলেজগুলোও অংশগ্রহণ করছে এবং সেখানে স্যাংশনড সিট এবং আপনার কত ছাত্র-ছাত্রী আছে এটা দেখানো হয়েছে । ধরা যাক কোনও কলেজ একটা বিশাল সংখ্যক সিট স্যাংশন করে রাখল, ভরতি হল না সেই সংখ্যক ছাত্রছাত্রী । তাহলে কলেজের উপরেই দোষারোপ হবে ।" এই কারণে প্রতিটি কলেজের সিট বাড়ানোর সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাচার্য আরও বলেন, "আমরা বলেছি কোনও কলেজ জেনেরাল কোর্সে 15 শতাংশের বেশি সিট বাড়াতে পারবে না এবং অনার্সের 10 শতাংশের বেশি বড়ানো হবে না । আমরা দেখতে পাচ্ছি কলেজগুলো সারেন্ডার করছে যে আমরা সিট কমাতে চাই । সিট বাড়ানোর ক্ষেত্রেও কড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । উপাচার্য বলেন, "যে কলেজগুলো সিট বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিল সেগুলো আমরা কড়াভাবে দেখছি। একটা কোনও কলেজ অ্যারাবিকে 44 থেকে 75 করেছে। অনার্সে আমরা 10 শতাংশ বাড়াব । তাহলে 44-এ 10 শতাংশ হয় 48। যারা কমাতে চেয়েছে সেটা কনসিডার করেছি।"
কতগুলো কলেজ সিট কমানোর আবেদন করেছে জানতে চাইলে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রায় দশটা কলেজ সিট কমানোর আবেদন করেছে । তার মধ্যে যেমন বড় কলেজের নাম রয়েছে, তেমনি কলকাতার ছোটো কলেজেরও নাম রয়েছে।
এই বছর প্রথম অনার্সের পাশাপাশি কলেজগুলোর থেকে জেনেরালের সিট সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে । এ বিষয়ে সহ-উপাচার্য দীপক কর বলেন, "আমরা আজ পর্যন্ত প্রত্যেকটি কলেজের সাবজেক্ট ওয়াইজ ইনটেক ওয়েবসাইটে আপলোড করতাম। কিন্তু, জেনেরালে সেটা করা হত না । জেনেরালে প্রতিটি কলেজ তাদের পরিকাঠামো অনুযায়ী, তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী ভরতি নিত।"
অভিযোগ উঠছে সিট রয়েছে অথচ ভরতি হচ্ছে না পড়ুয়া । প্রশ্নের উত্তরে সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ওটার ডিমান্ড নেই ওই অঞ্চলে । বললে বুঝতে পারবেন । কলেজগুলোর নাম বলা উচিত নয় বলে বলছি না । কলকাতার বুকে এরকম কলেজ আছে। এত সিট বাড়িয়ে রেখেছে। এবার কমাতে চাইছে।"
সিট বাড়ানো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি, এই বছর স্নাতকের ভরতি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনে হবে । উপাচার্য বলেন, "আমরা UG-তে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করছি । অনলাইনে অ্যাডমিশন করছি । পুরোটাই অনলাইন প্রসেসের মধ্যে দিয়ে হবে । সিন্ডিকেট সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।"
27 মে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ফলাফল প্রকাশের পরই বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্ত কলেজগুলোতে শুরু হয়ে যাবে স্নাতকের ভরতি প্রক্রিয়া । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ মেনেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্ত সব কলেজের ভরতি প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে । যাতে কোনও পড়ুয়াকে কলেজে শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে হবে না ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত । যেহেতু, এখন সেমিস্টার সিস্টেম । সবকিছু মাথায় রেখে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্লাস শুরু করতে বলা হয়েছে । 6 জুলাই পর্যন্ত চলবে ভরতি প্রক্রিয়া । ক্লাস শুরুর এক মাসের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে ।