ETV Bharat / city

মমতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, ফের প্রদেশ সভাপতি ; কংগ্রেসের 'ছোড়দা'-র রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই - শিয়ালদার ছোড়দা

শিয়ালদার 'ছোড়দা'-কে হারাল কংগ্রেস। তাঁর প্রয়াণের সঙ্গেই সমাপ্ত হল কংগ্রেসের এক অধ্যায়ের। তাঁর ছাত্রনেতা থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হয়ে ওঠার পিছনে ছিল নানা চড়াই-উতরাই।

somen mitra
somen mitra
author img

By

Published : Jul 30, 2020, 8:49 AM IST

Updated : Jul 30, 2020, 8:58 AM IST

কলকাতা, 30 জুলাই : আমহার্স্ট স্ট্রিটের 'ছোড়দা' নেই। তিনি কেবল আমহার্স্ট স্ট্রিটেই 'ছোড়দা' নামে পরিচিত ছিলেন না। শিয়ালদার গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সমগ্র কর্মীর মনেই সোমেন মিত্র হয়ে উঠেছিলেন 'ছোড়দা'। তাঁর সঙ্গী কংগ্রেস কর্মীরা বলছেন, আর্থিক সংকটে কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কার পড়াশোনা আটকে গিয়েছে, বেকার যুবক সকলের অসহায় ব্যক্তির কাছেই শেষ ভরসা ছিলেন 'ছোড়দা' সোমেন মিত্র ।

সোমেন মিত্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক মহাজাতি সদনের। এখান থেকেই প্রথম শুরু হয়েছিল তাঁর ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ। আজ শোকস্তব্ধ মহাজাতি সদনও। প্রিয়-সোমেন-সুব্রতর বিখ্যাত জুটি তখন ছিল পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম আলোচনার বিষয়। এই তিনজন একসময় মহাজাতি সদনে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন রাজনীতির নতুন সূর্যের উদয়ের অপেক্ষায়। প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরির আদর্শে কংগ্রেসে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সোমেন মিত্র। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে মাঝে-সাঝে সুট প্যান্ট পরে দেখা গেলেও গনি খানের বাকি দুই শিষ্য সোমেন এবং সুব্রত ধুতি পাঞ্জাবি ছাড়া অন্য পোশাকে সাবলীল ছিলেন না। পুরোনো বন্ধুর প্রয়াণের খবর পেয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "ভোরের এই দুঃসংবাদ বজ্রাঘাতের মতো ৷"

somen mitra
2018 সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি

১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে শেষ দিনে বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্ম সোমেন্দ্রনাথ মিত্রের। ছোটোবেলা থেকেই কংগ্রেস আদর্শে বড় হয়েছেন তিনি। পরে পূর্ববঙ্গ থেকে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন সোমেনবাবু । স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । শিয়ালদা চত্বর তাঁকে চেনে 'ছোড়দা' নামেই । মহাজাতি সদনের উপরের ঘরে ছাত্র পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তাঁর অনেক ইতিহাস ঘিরে রয়েছে মহাজাতি সদনকে। ব্যক্তিগত জীবনে শিয়ালদা এবং আমহার্স্ট স্ট্রিটের সঙ্গে বহু স্মৃতি ছিল সোমেন মিত্রের। তিনি বেশি বয়সে বিয়ে করেন শিখা মিত্রকে। 2011 সালে চৌরঙ্গী বিধানসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন শিখা মিত্র। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে 2014 সালে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছিলেন শিখা মিত্র। ওইবছরই তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন সোমেন জায়া শিখা। শিখাদেবীর এক পুত্র রোহন মিত্র বর্তমানে যুব কংগ্রেসের কলকাতা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত।

somen mitra
সোমেন মিত্র হয়ে উঠেছিলেন 'ছোড়দা'

অধুনালুপ্ত শিয়ালদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে 1972 সাল থেকে টানা 2006 সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন সোমেন মিত্র। মাঝে একবার পরাজিত হন তিনি। 1992 সালে 24 ভোটের ব্যবধানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন সোমেন মিত্র। নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনের লড়াইয়ের পরেই দল ছেড়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে নির্বাচনে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে 1998 সালে সোমেন মিত্রও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। জাতীয় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে 2008 সালে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস থেকে সোমেন মিত্রকে বেরিয়ে আসার জন্য বহুবার আবেদন জানান। পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন সোমেন মিত্র। এরপর 2009 সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন সোমেন মিত্র। তবে পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে না হতেই 2014 সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের কংগ্রেসে ফেরেন তিনি। কংগ্রেসে ফিরে গিয়ে সোমেন মিত্র উত্তর কলকাতা আসন থেকে ভোটে দাঁড়ান। কিন্তু তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন 'উত্তরের বাঘ' সোমেন মিত্র। তার প্রাপ্ত ভোট BJP-র রাহুল সিনহার থেকেও কমে গিয়েছিল। এরপর প্রায় দু-দশক পরে 2018 সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন তিনি।

এরপর রাজ্য থেকে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করতে বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য গড়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সোমেন মিত্র। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহ কোরোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলন করেছেন তিনি। বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন সোমেন মিত্র।

somen mitra
বামেদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে সোমেন মিত্র

কলকাতা, 30 জুলাই : আমহার্স্ট স্ট্রিটের 'ছোড়দা' নেই। তিনি কেবল আমহার্স্ট স্ট্রিটেই 'ছোড়দা' নামে পরিচিত ছিলেন না। শিয়ালদার গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সমগ্র কর্মীর মনেই সোমেন মিত্র হয়ে উঠেছিলেন 'ছোড়দা'। তাঁর সঙ্গী কংগ্রেস কর্মীরা বলছেন, আর্থিক সংকটে কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কার পড়াশোনা আটকে গিয়েছে, বেকার যুবক সকলের অসহায় ব্যক্তির কাছেই শেষ ভরসা ছিলেন 'ছোড়দা' সোমেন মিত্র ।

সোমেন মিত্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক মহাজাতি সদনের। এখান থেকেই প্রথম শুরু হয়েছিল তাঁর ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ। আজ শোকস্তব্ধ মহাজাতি সদনও। প্রিয়-সোমেন-সুব্রতর বিখ্যাত জুটি তখন ছিল পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম আলোচনার বিষয়। এই তিনজন একসময় মহাজাতি সদনে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন রাজনীতির নতুন সূর্যের উদয়ের অপেক্ষায়। প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরির আদর্শে কংগ্রেসে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সোমেন মিত্র। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে মাঝে-সাঝে সুট প্যান্ট পরে দেখা গেলেও গনি খানের বাকি দুই শিষ্য সোমেন এবং সুব্রত ধুতি পাঞ্জাবি ছাড়া অন্য পোশাকে সাবলীল ছিলেন না। পুরোনো বন্ধুর প্রয়াণের খবর পেয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "ভোরের এই দুঃসংবাদ বজ্রাঘাতের মতো ৷"

somen mitra
2018 সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি

১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে শেষ দিনে বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্ম সোমেন্দ্রনাথ মিত্রের। ছোটোবেলা থেকেই কংগ্রেস আদর্শে বড় হয়েছেন তিনি। পরে পূর্ববঙ্গ থেকে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন সোমেনবাবু । স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । শিয়ালদা চত্বর তাঁকে চেনে 'ছোড়দা' নামেই । মহাজাতি সদনের উপরের ঘরে ছাত্র পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তাঁর অনেক ইতিহাস ঘিরে রয়েছে মহাজাতি সদনকে। ব্যক্তিগত জীবনে শিয়ালদা এবং আমহার্স্ট স্ট্রিটের সঙ্গে বহু স্মৃতি ছিল সোমেন মিত্রের। তিনি বেশি বয়সে বিয়ে করেন শিখা মিত্রকে। 2011 সালে চৌরঙ্গী বিধানসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন শিখা মিত্র। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে 2014 সালে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছিলেন শিখা মিত্র। ওইবছরই তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন সোমেন জায়া শিখা। শিখাদেবীর এক পুত্র রোহন মিত্র বর্তমানে যুব কংগ্রেসের কলকাতা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত।

somen mitra
সোমেন মিত্র হয়ে উঠেছিলেন 'ছোড়দা'

অধুনালুপ্ত শিয়ালদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে 1972 সাল থেকে টানা 2006 সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন সোমেন মিত্র। মাঝে একবার পরাজিত হন তিনি। 1992 সালে 24 ভোটের ব্যবধানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন সোমেন মিত্র। নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনের লড়াইয়ের পরেই দল ছেড়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে নির্বাচনে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে 1998 সালে সোমেন মিত্রও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। জাতীয় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে 2008 সালে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস থেকে সোমেন মিত্রকে বেরিয়ে আসার জন্য বহুবার আবেদন জানান। পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন সোমেন মিত্র। এরপর 2009 সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন সোমেন মিত্র। তবে পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে না হতেই 2014 সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের কংগ্রেসে ফেরেন তিনি। কংগ্রেসে ফিরে গিয়ে সোমেন মিত্র উত্তর কলকাতা আসন থেকে ভোটে দাঁড়ান। কিন্তু তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন 'উত্তরের বাঘ' সোমেন মিত্র। তার প্রাপ্ত ভোট BJP-র রাহুল সিনহার থেকেও কমে গিয়েছিল। এরপর প্রায় দু-দশক পরে 2018 সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন তিনি।

এরপর রাজ্য থেকে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করতে বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য গড়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সোমেন মিত্র। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহ কোরোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলন করেছেন তিনি। বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন সোমেন মিত্র।

somen mitra
বামেদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে সোমেন মিত্র
Last Updated : Jul 30, 2020, 8:58 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.