কলকাতা, 5 জানুয়ারি: হাইকোর্টের নির্দেশে পুনরায় আপার প্রাইমারি স্তরের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কোরোনা অতিমারির কারণে গত 4 জানুয়ারি থেকে অনলাইনে নথি যাচাই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। কিন্তু, প্রথম দিন থেকেই একাধিক টেকনিক্যাল সমস্যায় নথি যাচাইয়ের জন্য আবেদনকারী চাকরিপ্রার্থীরা।
নথি যাচাইয়ের জন্য অনলাইনে কীভাবে সংশ্লিষ্ট নথি আপলোড করতে হবে তা নিয়ে নির্দেশিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রথমে টেট পরীক্ষার রোল নম্বর, অ্যাপ্লিকেশন আইডি, জন্মতারিখ ও সিকিউরিটি কোড দিয়ে লগ-ইন করতে হবে প্রার্থীদের। তারপরে মোবাইল নম্বর ওটিপি দিয়ে যাচাই করতে হবে। পুরনো নম্বর বদল করতে হলেও তা এই ধাপে করা যাবে। পরের পেজে স্ট্যাম্প সাইজের রঙিন ছবি ও সাক্ষর আপলোড করতে পারবেন। ওই পেজের নিচের দিকে আবেদনকারীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণগত যোগ্যতার নথি আপলোড করতে পারবেন। সব নথি জেপেক ফরম্যাটে আপলোড করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 20 জানুয়ারি সন্ধে 6টা পর্যন্ত এই নির্দেশ মেনে নথি আপলোড করতে পারবেন ইচ্ছুক প্রার্থীরা। অন্যদিকে, একবার নথি আপলোড করে জমা করার পর তাতে আর কোনও সংশোধন করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই নথি যাচাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য একটিমাত্র সুযোগ রয়েছে প্রার্থীদের কাছে। তাই প্রথম দিনেই খুব বেশি সংখ্যক প্রার্থী নথি আপলোড করেননি বলেই জানা গেছে। তবে, প্রথম দিন থেকেই নথি যাচাইয়ের জন্য অনলাইনে যে আবেদনপত্র রয়েছে তাতে একাধিক টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন প্রার্থীরা। গতকাল যে সমস্যাটি সবথেকে বড় হয়ে উঠে আসে তা হল, অ্যাপ্লিকেশন আইডিতে বদল। প্রার্থীদের অভিযোগ, গতকাল বহু প্রার্থীর অ্যাপ্লিকেশন আইডি বদলে গেছিল। কারোর অ্যাপ্লিকেশন আইডির শেষ তিনটি সংখ্যা 432 থাকলে, তা নিজে থেকেই বদলে 430 হয়ে গেছিল। বিষয়টি নজরে আসতেই সঙ্গে সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের হেল্পলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানান প্রার্থীরা। জানা গিয়েছে, অভিযোগ পেতেই তৎপর হয় কমিশন। 15 মিনিটের জন্য নথি যাচাইয়ের আবেদন গ্রহণ বন্ধ থাকার পর ঠিক হয়ে যায় সেই সমস্যাটি।
কিন্তু, এখানেই শেষ নয়। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, যে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ কোর্স করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠানটির এনসিটিই-র অনুমোদনের সার্টিফিকেট আপলোড করতে বলা হয়েছে। কিন্তু, সেই অনুমোদনের সার্টিফিকেট তিন পাতার। অথচ, নথি আপলোড করার জায়গা দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি। স্নাতক ও প্রশিক্ষণের মার্কশিট আপলোডের ক্ষেত্রে আবার অন্য সমস্যা। অভিযোগ, স্নাতক ও প্রশিক্ষণ কোর্সের ক্ষেত্রে একাধিক মার্কশিট আপলোডের জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, প্রথম বর্ষের মার্কশিট আপলোডের করে নতুন রো অ্যাড করলে, তাতে পরের বর্ষের মার্কশিট আপলোডের আগেই টিক চিহ্ন চলে আসছে। এই সমস্যা এড়াতে আগেই তিনটি রো অ্যাড করে মার্কশিট অ্যাড করা হলে প্রথম বর্ষের মার্কশিটের পাশে টিক চিহ্ন এলেও বাকি রো-গুলিতে তা আসছে না।
অন্যদিকে, 2016 সালের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্পেশাল এডুকেশনে বিএড গ্রহণযোগ্য। স্পেশাল এডুকেশনে বিএড-দের কোনও এনসিটিই অনুমোদন হয় না। তার বদলে আরসিআই-এর অনুমোদন থাকে। কিন্তু, নথি আপলোডের জায়গাতে আরসিআই-এর অনুমোদনের সার্টিফিকেটের কথা বলা নেই বলে অভিযোগ।
প্রার্থীদের এই সকল আশঙ্কা ও অভিযোগ নিয়ে কমিশনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। প্রার্থীরা জানাচ্ছেন, টেকনিক্যাল সমস্যাগুলি নিয়ে কমিশনের হেল্পলাইনে ফোন করা হলে তাঁদের জানানো হয়, শুধুমাত্র ওটিপি নিয়ে সমস্যা হলে তার দেখবেন হেল্পলাইনের ওপারে থাকা মানুষরা। অন্য কোনও বিষয়ের সমাধান করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানানো হয় প্রার্থীদের। এই পরিস্থিতিতে নথি আপলোড করে জমা করতে ভয় পাচ্ছেন প্রার্থীদের অধিকাংশই। তাঁরা চাইছেন, দ্রুত এই সমস্যাগুলির সমাধান করুক কমিশন।