কলকাতা, 9 মার্চ : অনিরুদ্ধ জানা ৷ স্ট্র্যান্ড রোডের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের অগ্নিকাণ্ডে মৃত দমকল কর্মীদের মধ্যে একজন ৷ মর্মান্তিক এই মৃ্ত্যুতে শোকস্তব্ধ তাঁর স্কুল মাল্টিপারপাস স্কুল (বয়েজ়) টাকি হাউজ়ের শিক্ষকরা ৷ সেখানকার সহ প্রধান শিক্ষক অমিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেই তা স্পষ্ট ৷ আগুন লাগার পরেও কেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র লিফট ব্যবহারের ভুল করলেন সেই উত্তরই খুঁজে চলেছেন তিনি ৷
সোমবার সন্ধ্যা 6টা 10 মিনিটে আগুন লাগে স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের ভবন নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে ৷ সেই আগুন নেভাতে লিফটে করে 13 তলায় ওঠা 4 দমকল কর্মীর মধ্যে একজন ছিলেন অনিরুদ্ধ জানা ৷ প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারেননি তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ৷ আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের ৷ অনিরুদ্ধর এই অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাঁর স্কুল মাল্টিপারপাস স্কুল (বয়েজ়) টাকি হাউজ়ে ৷ স্কুলের সহ প্রধান শিক্ষক অমিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না, তাঁদের প্রিয় ছাত্র আর নেই ৷ প্রথমটায় যখন নিহতদের তালিকা দেখেছিলেন তখনই অনিরুদ্ধ জানার নাম দেখে চোখটা স্থির হয়ে গিয়েছিল তাঁর ৷ পরবর্তী সময়ে অমিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের আশঙ্কাটাই সত্যি হয়েছে ৷
প্রিয় প্রাক্তন ছাত্র অনিরুদ্ধের মৃত্যুতে শোকাহত তাঁর স্কুলের শিক্ষকরা ৷ শিক্ষক অমিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘‘যাঁরা জীবন বাঁচাতে গেল, তাঁদেরই জীবন চলে গেল ৷ গত একবছরে নানা দুঃসংবাদ এসেছে ৷ কিন্তু, অনিরুদ্ধর মৃত্যু সংবাদ সবচেয়ে বড় ধাক্কা ৷’’
অনিরুদ্ধ 2009 সালে স্কুলের কলাবিভাগের পড়ুয়া ছিলেন ৷ পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্ক সন্তানের মতো ৷ ওদের আগলে বড় করে, জীবনের পথে এগিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব ৷ সফল ছাত্রের হাসিমুখ দেখে গর্ব অনুভব হয় ৷ অনিরুদ্ধর এই লড়াই, মানুষকে বাঁচানোর এই চেষ্টা আমাদের গর্ব । অথচ যাকে নিয়ে এত কথা সেই চলে গেল। তরতাজা একটা প্রাণের অকাল পরিণতি মানতে পারছি না ৷’’
এর পরে আর দশজনের মতো তিনিও প্রশ্ন তুললেন, কেন আগুন লাগার পরেও লিফট ব্যবহার করলেন অনিরুদ্ধ ও তাঁর সহকর্মীরা ? ‘‘একটা জিনিস বুঝতে পারছি না ৷ আগুন লাগলে, ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয় ৷ এটা প্রাথমিক পাঠ ৷ অথচ এই ভুলটাই ওঁরা করল ৷ কী এর ব্যাখ্যা বুঝতে পারছি না !’’ হতাশার সঙ্গে বললেন অমিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন : ম্যাপ দেওয়া হয়নি দমকলকে, আগুন নিয়ে মমতার অভিযোগ মেনে নিল রেল
করোনা পরিস্থিতি সামলে স্কুলের পঠপাঠনে স্বাভাবিকতা নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে ৷ তার মাঝেই প্রাক্তনীর মৃত্যু সংবাদ ৷ তার মধ্যেই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের মকটেস্ট চলছে ৷ নবম এবং নতুন দশম শ্রেণিতে ওঠা পড়ুয়াদের ক্লাসও চলছে একই সঙ্গে ৷ তাই স্কুল ছুটি দেওয়া সম্ভব হয়নি ৷ তবে, মঙ্গলবার পরীক্ষার পরে তড়িঘড়ি একটি স্মরণসভা আয়োজন করা হচ্ছে ৷ সেখানেই প্রিয় প্রাক্তনীর মৃত্যুশোকে জীবন বাঁচানোর প্রাথমিক পদক্ষেপের কথা মনে করিয়ে দিতে চান মাল্টিপারপাস স্কুল (বয়েজ়) টাকি হাউজ়ের সহ প্রধান শিক্ষক ৷