ETV Bharat / city

Rath Yatra 2022: রথযাত্রার জমকালো উৎসবে সুভদ্রা যেন নারীত্বের নীরব প্রতিমূর্তি ! - রথযাত্রা

রথযাত্রার (Rath Yatra 2022) জাঁকজমকে অবিচ্ছেদ্য সুভদ্রা (Subhadra) ৷ তবুও জগন্নাথ ও বলরামের তুলনায় তিনি যেন কিছুটা নিষ্প্রভ ! কে এই সুভদ্রা ? রথযাত্রার আগে আসুন, তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই ৷

Rath Yatra 2022 special copy on Subhadra
Rath Yatra 2022: রথযাত্রার জমকালো উৎসবে সুভদ্রা যেন নারীত্বের নীরব প্রতিমূর্তি !
author img

By

Published : Jun 30, 2022, 6:48 PM IST

কলকাতা, 30 জুন: রাত পোহালেই রথযাত্রা (Rath Yatra 2022)। হিন্দুধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় এই উৎসবটি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় ৷ ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে যুগ যুগ ধরে রীতিমতো জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা ৷

রথযাত্রার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং তা নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে ৷ তাই সেদিকে পুনরায় না তাকিয়ে রথযাত্রার আগে এই বিশেষ সময়ে জগন্নাথ এবং বলরামের আদরের বোনটিকে স্মরণ করলে কেমন হয় ? রথযাত্রার উৎসবে সুভদ্রা (Subhadra) যেন এক নীরব নারীত্ব ৷ এই নারীকে নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই ৷ পুরীতে খোঁজ নিলে জানা যায়, জগন্নাথ ও বলরামের তুলনায় তিনি পুজোও পান অনেক কম !

কে এই সুভদ্রা ? তিনি কৃষ্ণ বা জগন্নাথের আপন বোন নন ৷ তিনি বলরামের বোন ৷ বাসুদেবের দ্বিতীয়া স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে তাঁর জন্ম ৷ এই সুভদ্রাই আবার অর্জুনের স্ত্রী ! অর্জুনের সঙ্গে তাঁর বিবাহটা বেশ অন্যরকম ৷ বনবাসকালে ব্রতচারী অর্জুন কামের তাড়নায় দু'বার ব্রহ্মচর্যের শপথ খোয়ান ৷ প্রথমবার পুরুষবেশী চিত্রাঙ্গদাকে দেখে আর দ্বিতীয়বার রৈবতক পর্বতে ৷ যার বর্তমান নাম গিরনার ৷ সেখানে অর্জুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন কৃষ্ণ ৷ তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন বোন সুভদ্রা ৷ তাঁকে দেখে এক লহমায় পছন্দ হয়ে যায় অর্জুনের ৷

আরও পড়ুন: ISKCON Rath Yatra 2022: রাত পোহালেই রথযাত্রা, শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি মায়াপুর ইসকন মন্দিরে

সুন্দরী আর্যকন্যা সুভদ্রার উচ্চতা বেশ কম। তাঁকে দেখে অর্জুন যে মোহিত হন, তা বুঝতে পারেন কৃষ্ণ ৷ অর্জুনের মুখে বোনের রূপের প্রশংসা শুনে কৃষ্ণ তাঁকে সুভদ্রাকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ! যদিও কৃষ্ণ জানতেন, ক'দিন পরই সুভদ্রার স্বয়ম্বর সভা ৷ তার আগেই তাঁকে নিয়ে রথে চড়ে পালিয়ে যান অর্জুন ৷ গুজরাত থেকে রাজস্থান পেরিয়ে চলে যান দিল্লি ৷ কিন্তু, অর্জুন সুভদ্রার সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি দু'জন ৷ একজন বলরাম এবং অন্যজন কৃষ্ণপত্নী সত্যভামা ৷ তবে, পরিবারের সম্মানের কথা ভেবেই নবদম্পতিকে বরণ করা হয়েছিল ৷ সেই আয়োজন করেছিলেন সত্যভামা স্বয়ং ৷

কথিত আছে, অর্জুনের সব পত্নীকেই নাকি ঈর্ষা করতেন দৌপদী ৷ সুভদ্রাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না ৷ কিন্তু, তাঁর অন্তর ছিল কোমল ৷ দ্রৌপদী নাকি স্বামীদের সঙ্গে থাকার সময় নিজের সন্তানদের ঠিকমতো যত্ন করতেন না ৷ অন্যদিকে, সুভদ্রা ছিলেন একেবারে উল্টো ৷ নিজের ছেলে অভিমন্যুর পাশাপাশি দ্রৌপদীর সন্তানদেরও মাতৃস্নেহে লালন করতেন তিনি ৷ কিন্তু, তাঁর জীবনে সুখ ছিল না ৷ অর্জুনের জীবনে সুভদ্রা ছাড়াও অন্য নারীদের জায়গা ছিল ৷ যাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন দ্রৌপদী ৷ অন্যদিকে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সুভদ্রা তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র অভিমন্যুকে হারান ৷

মহাভারতে সুভদ্রা আগাগোড়াই উপেক্ষিত ৷ অথচ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে হস্তিনাপুর যখন পাণ্ডবদের একার সম্পত্তি, কুরু-পাণ্ডবের অভিভাবকরা গেলেন বাণপ্রস্থে, দ্রৌপদীর পুত্ররাও আর বেঁচে নেই, তখন বালক পরীক্ষিতকে সামনে রেখে অত বড় রাজ্যের শাসনভার ভ্রাতৃবধূ সুভদ্রার হাতেই তুলে দেন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির !

রথযাত্রায় জগন্নাথ এবং বলরামের পাশাপাশি সুভদ্রার জন্যও একটি রথ বরাদ্দ থাকে ৷ তাঁর রথের নাম 'দর্পদলন' বা 'দেবদলন' বা 'পদ্মধ্বজ' ৷ রথে সুভদ্রার সঙ্গী হন সুদর্শনা ৷ রথের উচ্চতা 43 ফুট ৷ চাকার সংখ্যা 12 ৷ 593টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল এবং কালো কাপড়ে ৷ দর্পদলন রথের দড়ি বা রশিটির নাম 'স্বর্ণচূড়া নাগুনি' ৷ দর্পদলনের সারথির নাম অর্জুন ৷ রথের মাথায় পতাকার নাম নদম্বিকা ৷ সুভদ্রার রথে ন'জন দেবী অধিষ্ঠান করেন ৷ এঁদের মধ্যে আছেন চণ্ডী, চামুণ্ডা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, মঙ্গলা, বিমলা ৷ দর্পদলনে থাকে চারটি ঘোড়া ৷ এরা হল রচিকা, মচিকা, জিতা ও অপরাজিতা। সুভদ্রার রথে একজন রক্ষীও থাকেন ৷ যাঁর নাম জয়দুর্গা ৷

কলকাতা, 30 জুন: রাত পোহালেই রথযাত্রা (Rath Yatra 2022)। হিন্দুধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় এই উৎসবটি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় ৷ ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে যুগ যুগ ধরে রীতিমতো জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা ৷

রথযাত্রার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং তা নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে ৷ তাই সেদিকে পুনরায় না তাকিয়ে রথযাত্রার আগে এই বিশেষ সময়ে জগন্নাথ এবং বলরামের আদরের বোনটিকে স্মরণ করলে কেমন হয় ? রথযাত্রার উৎসবে সুভদ্রা (Subhadra) যেন এক নীরব নারীত্ব ৷ এই নারীকে নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই ৷ পুরীতে খোঁজ নিলে জানা যায়, জগন্নাথ ও বলরামের তুলনায় তিনি পুজোও পান অনেক কম !

কে এই সুভদ্রা ? তিনি কৃষ্ণ বা জগন্নাথের আপন বোন নন ৷ তিনি বলরামের বোন ৷ বাসুদেবের দ্বিতীয়া স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে তাঁর জন্ম ৷ এই সুভদ্রাই আবার অর্জুনের স্ত্রী ! অর্জুনের সঙ্গে তাঁর বিবাহটা বেশ অন্যরকম ৷ বনবাসকালে ব্রতচারী অর্জুন কামের তাড়নায় দু'বার ব্রহ্মচর্যের শপথ খোয়ান ৷ প্রথমবার পুরুষবেশী চিত্রাঙ্গদাকে দেখে আর দ্বিতীয়বার রৈবতক পর্বতে ৷ যার বর্তমান নাম গিরনার ৷ সেখানে অর্জুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন কৃষ্ণ ৷ তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন বোন সুভদ্রা ৷ তাঁকে দেখে এক লহমায় পছন্দ হয়ে যায় অর্জুনের ৷

আরও পড়ুন: ISKCON Rath Yatra 2022: রাত পোহালেই রথযাত্রা, শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি মায়াপুর ইসকন মন্দিরে

সুন্দরী আর্যকন্যা সুভদ্রার উচ্চতা বেশ কম। তাঁকে দেখে অর্জুন যে মোহিত হন, তা বুঝতে পারেন কৃষ্ণ ৷ অর্জুনের মুখে বোনের রূপের প্রশংসা শুনে কৃষ্ণ তাঁকে সুভদ্রাকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ! যদিও কৃষ্ণ জানতেন, ক'দিন পরই সুভদ্রার স্বয়ম্বর সভা ৷ তার আগেই তাঁকে নিয়ে রথে চড়ে পালিয়ে যান অর্জুন ৷ গুজরাত থেকে রাজস্থান পেরিয়ে চলে যান দিল্লি ৷ কিন্তু, অর্জুন সুভদ্রার সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি দু'জন ৷ একজন বলরাম এবং অন্যজন কৃষ্ণপত্নী সত্যভামা ৷ তবে, পরিবারের সম্মানের কথা ভেবেই নবদম্পতিকে বরণ করা হয়েছিল ৷ সেই আয়োজন করেছিলেন সত্যভামা স্বয়ং ৷

কথিত আছে, অর্জুনের সব পত্নীকেই নাকি ঈর্ষা করতেন দৌপদী ৷ সুভদ্রাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না ৷ কিন্তু, তাঁর অন্তর ছিল কোমল ৷ দ্রৌপদী নাকি স্বামীদের সঙ্গে থাকার সময় নিজের সন্তানদের ঠিকমতো যত্ন করতেন না ৷ অন্যদিকে, সুভদ্রা ছিলেন একেবারে উল্টো ৷ নিজের ছেলে অভিমন্যুর পাশাপাশি দ্রৌপদীর সন্তানদেরও মাতৃস্নেহে লালন করতেন তিনি ৷ কিন্তু, তাঁর জীবনে সুখ ছিল না ৷ অর্জুনের জীবনে সুভদ্রা ছাড়াও অন্য নারীদের জায়গা ছিল ৷ যাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন দ্রৌপদী ৷ অন্যদিকে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সুভদ্রা তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র অভিমন্যুকে হারান ৷

মহাভারতে সুভদ্রা আগাগোড়াই উপেক্ষিত ৷ অথচ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে হস্তিনাপুর যখন পাণ্ডবদের একার সম্পত্তি, কুরু-পাণ্ডবের অভিভাবকরা গেলেন বাণপ্রস্থে, দ্রৌপদীর পুত্ররাও আর বেঁচে নেই, তখন বালক পরীক্ষিতকে সামনে রেখে অত বড় রাজ্যের শাসনভার ভ্রাতৃবধূ সুভদ্রার হাতেই তুলে দেন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির !

রথযাত্রায় জগন্নাথ এবং বলরামের পাশাপাশি সুভদ্রার জন্যও একটি রথ বরাদ্দ থাকে ৷ তাঁর রথের নাম 'দর্পদলন' বা 'দেবদলন' বা 'পদ্মধ্বজ' ৷ রথে সুভদ্রার সঙ্গী হন সুদর্শনা ৷ রথের উচ্চতা 43 ফুট ৷ চাকার সংখ্যা 12 ৷ 593টি কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া এই রথ সাজানো হয় মূলত লাল এবং কালো কাপড়ে ৷ দর্পদলন রথের দড়ি বা রশিটির নাম 'স্বর্ণচূড়া নাগুনি' ৷ দর্পদলনের সারথির নাম অর্জুন ৷ রথের মাথায় পতাকার নাম নদম্বিকা ৷ সুভদ্রার রথে ন'জন দেবী অধিষ্ঠান করেন ৷ এঁদের মধ্যে আছেন চণ্ডী, চামুণ্ডা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, মঙ্গলা, বিমলা ৷ দর্পদলনে থাকে চারটি ঘোড়া ৷ এরা হল রচিকা, মচিকা, জিতা ও অপরাজিতা। সুভদ্রার রথে একজন রক্ষীও থাকেন ৷ যাঁর নাম জয়দুর্গা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.