কলকাতা, 22 অগাস্ট : শরীরে ছিল একটি দাগ । সেটা দেখার পরেই তৈরি হয়েছিল সন্দেহ । চাকরিপ্রার্থী প্রসেনজিৎ সিংহকে খুন করা হয়েছে, অভিযোগ এনেছিল পরিবার । রহস্যজনক মৃত্যুর পর দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় SSKM হাসপাতাল । হয় ময়নাতদন্ত । ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কাছে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা প্রথামাফিক রেখেছিল কয়েকটি প্রশ্ন । সেই সূত্রেই তদন্তকারী অফিসারদের ওই চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, মৃতের শরীরে যে দাগ ছিল তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে না । সাধারণভাবে মনে হচ্ছে এটি জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ।
এদিকে প্রসেনজিতের অস্বাভাবিক মৃত্যু তদন্তে এক যুবতির সন্ধান পাওয়া গেছিল আগেই । যদিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে সূত্রের খবর । কিন্তু প্রসেনজিতের কল রেকর্ড বলছে, মৃত্যুর আগে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে চারবার ওই যুবতিকে ফোন করেছিলেন তিনি । তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, ওই যুবতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রসেনজিতের । কারণ, তাঁর মোবাইলে পাওয়া গেছে এই ধরনের কিছু টেক্সট মেসেজ । শেষ মেসেজটিতে ওই যুবতিকে মানানোর চেষ্টা করছিলেন প্রসেনজিৎ । তবে কি প্রণয়ঘটিত বিষয়টি তাঁর মৃত্যুর অন্যতম কারণ? বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা । গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা কোনও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না।"
আরও পড়ুন: আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের জলাশয়ে ডুবে মৃত্যু প্রসেনজিতের ! আটক 2
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার । ওই দিন সকালে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরের জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় প্রসেনজিতের মৃতদেহ। বডি গার্ড লাইন্সের এক পুলিশকর্মী সেই দেহ দেখতে পান । পরে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ এসে সেই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয় । প্রাথমিকভাবে, মৃতদেহের মাথায় ক্ষত ও শরীরে কালশিটের দাগ দেখতে পান তদন্তকারীরা । সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছিল, হয়তো তাঁকে খুন করে বডিগার্ড লাইনের পিছনের দিকে ওই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে । ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই কলকাতা ছুটে আসেন উত্তম সিংহ । তিনি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত । ছেলেকে খুনের অভিযোগ আনেন । তাঁর সরাসরি অভিযোগ বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিতের বিরুদ্ধে । তিনি দাবি করেন, পাশের গ্রামের দুই ভাই বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎ, প্রসেনজিৎকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নেয় । ইন্দ্রজিৎ রিজ়ার্ভ ফোর্সের কর্মী হওয়ায় বিশ্বাস করে টাকা দেওয়া হয় । আর বিশ্বজিৎ ডাক বিভাগের কর্মী । সেই টাকা ফেরত নিতেই কলকাতায় এসেছিলেন প্রসেনজিৎ । তার জেরেই এই পরিণতি ।
এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । খতিয়ে দেখা হয় অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন । ময়নাতদন্ত এবং প্রসেনজিতের কল রেকর্ডস ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পরে । ওই সময় ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিতের টাওয়ার লোকেশন আলিপুর বডিগার্ড লাইনের আশপাশেও ছিল না । পুলিশের জেরায় তাঁরা এ কথাই জানিয়েছেন । তাঁদের বক্তব্য যাচাই করে দেখেছে পুলিশ । এক্ষেত্রে তাঁরা ঠিকই বলছেন । অর্থাৎ ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিৎ প্রসেনজিতের কাছে ছিলেন না ।
আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরের জলাশয়ের পাড়ে রয়েছে একটি মন্দির । সেখানে পাওয়া গেছে বিছানা । সেটি সম্ভবত প্রসেনজিতের । একইসঙ্গে উদ্ধার হয়েছে তাঁর প্যান্ট এবং মোবাইল । প্রসেনজিতের কাকা একসময় কলকাতা পুলিশে কর্মরত ছিলেন । কয়েক মাস আগে অবসর নিয়েছেন । প্রসেনজিতের কাকা থাকতেন আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সেই । সেই সূত্রে তাঁর যাতায়াত ছিল । বেশ কিছু লোকজন চেনা হয়ে গেছিল । পুলিশ খতিয়ে দেখেছে, তাঁদের কারও কাছেই ছিলেন না প্রসেনজিৎ । সেই সূত্রে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, ওই মন্দিরে রাতে ঘুমোতেন । শুক্রবার রাতে কলকাতায় বৃষ্টি হয় । তদন্তকারীরা দেখেছেন ওই পুকুর পাড় যথেষ্ট পিচ্ছিল । কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ তেমনই । আবার তিনি পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যাও করে থাকতে পারেন । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি তাঁকে খুন করতে হয় তবে পেছন থেকে ধাক্কা মারতে হবে । ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিৎ যেহেতু সেই এলাকায় ছিলেন না তাহলে, সেখানে উপস্থিতি থাকতে হবে তৃতীয় ব্যক্তির । সেই সূত্রে বডিগার্ড লাইন্সের সব CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।