কলকাতা, 1 এপ্রিল : দেশজুড়ে জারি লকডাউন । জরুরি পরিষেবা চালু থাকার কথা থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সের আকাল চলছে । কোনওমতে গাড়ি জুটিয়ে বনগাঁ থেকে কলকাতায় ডায়ালিসিস করতে গিয়েছিলেন দেববর্ণা মণ্ডলের বাবা । তিনি সাক্ষী থেকে ছিলেন নিন্দনীয় ঘটনার । অভিযোগ, ডায়ালিসিস করিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ফেরার পথে সেই গাড়ির চালককে মারধর করে পুলিশ । তারপর তাঁর কাছ থেকে 1200 টাকা তোলা আদায় করে । ঘটনা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেববর্ণা । ETV ভারতের খবরের জেরে খবর পৌঁছায় লালবাজারে । সেই ঘটনার জেরে সাসপেন্ড করা হল ওই কনস্টেবলকে । আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে । তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত । সেই তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি যেতে পারে ।
কলকাতাবাসীর কাছে লালবাজারের বার্তা, "পাশে আছি" । সারাবছর ধরেই কলকাতা পুলিশ চেষ্টা করে সাধ্যমত শহরবাসীর পাশে থাকার । লকডাউনের সময়ে কলকাতা পুলিশের কর্মকান্ড শহরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে । কখনও অন্নপূর্ণা হয়ে নিরন্নকে খাবার জুগিয়ে চলেছে পুলিশ । রোগীর প্রয়োজনে পুলিশ আধিকারিক রক্ত দিচ্ছেন । মানুষের প্রয়োজনে ব্যবস্থা করছেন গাড়ির । আবার পথ কুকুরদেরও খাবার ব্যবস্থা করছে পুলিশ । এরই মাঝে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগ । এই যেমন গত শনিবার বনগাঁ থেকে বাবাকে নিয়ে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করাতে এসেছিলেন দেববর্ণা মণ্ডল । অসুস্থ বাবাকে সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালিসিস করাতে নিয়ে যেতে হয় তাঁকে । সেই সূত্র ধরেই তিনি এসেছিলেন বনগাঁ থেকে । ডায়ালিসিস শেষ করতে মাঝরাত হয়ে যায় । রাত আড়াইটে নাগাদ তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বনগাঁ রওনা দেন । সেই সময় হেনস্থার ঘটনা ৷
ওই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ার পোস্টে তিনি লেখেন,"কাল রাত দুটো 30 মিনিট নাগাদ হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিস করে ফেরার সময় পূর্ব যাদবপুর থানার কাছে মুকুন্দপুরের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা দায়িত্ববিহীন একজন কনস্টেবল ও একজন সিভিক ভলান্টিয়ার আমার বাবার গাড়িটিকে মধ্যরাতে দাঁড় করায় । গাড়ির সমস্ত কাগজ থাকা সত্ত্বেও ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় । বিনা কারণে হেনস্থা ও গালিগালাজ করে । বাবাকে অসুস্থ দেখেও পুলিশ বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে । জোর করে তাঁদের কাছ থেকে 1200 টাকা নেয় । ওই টাকার জন্য কোনও রশিদ দেওয়া হয়নি । এমন করলে কোনও ভাড়া গাড়ি আমরা পাব না । এই সময় পুলিশের কাছ থেকে এমন দুর্ব্যবহার আশা করা যায় না ।"
পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হয় ETV ভারতের খবরে । সেই খবরের জেরে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন DC ইস্ট গৌরভ লাল। দেখা যায়, দেববর্ণার অভিযোগ ঠিক । তারপরেই নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা । সাসপেন্ড করা হয়েছে ওই কনস্টেবলকে। আপাতত ডিউটি থেকে অব্যাহত দেওয়া হয়েছে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে । গৌরব লাল জানান, "আমরা তদন্ত করে দেখেছিলাম, অভিযোগের সত্যতা আছে । তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত ।"