কলকাতা, 8 জুন : দেশে এই প্রথম COVID-19-এ আক্রান্ত এক রোগীকে সুস্থ করে তোলা হল এক্সট্রাকরপোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (ECMO)-এর সাপোর্টে। এই রোগীর চিকিৎসা চলছিল ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে । আজ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন এই রোগী ।
17 মে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় কালীঘাট অঞ্চলের বাসিন্দা 24 বছর বয়সি এই রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঢাকুরিয়ার বেসরকারি ওই হাসপাতালে । যখন এই তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন 34 শতাংশ ছিল । জ্বর এবং তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল । তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে ভরতির পর থেকে এই রোগীকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হয় । এরপর 18 মে থেকে তাঁকে ECMO-র সাপোর্টে রাখা হয় । গত 29 মে এই রোগীকে ECMO-র সাপোর্ট থেকে বাইরে আনা হয় । তার পরেও তাঁকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হয়েছিল । শেষে 5 জুন ভেন্টিলেটর সাপোর্টের বাইরে আনা হয় তাঁকে ।
বেসরকারি এই হাসপাতাল সূত্রে খবর, 10 মে থেকে রোগীর জ্বর আসতে শুরু করে । 14 মে তাঁর জ্বর কমেও যায় । তবে, 16 মে থেকে আবার তাঁর প্রবল জ্বর দেখা দেয় । এর সঙ্গে শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট । এরপরই ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালে এই রোগীকে ভরতি করানো হয় 17 মে । তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় । গত 19 মে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায় এই রোগী COVID-19-এ আক্রান্ত । ততক্ষণে অবশ্য এই রোগীকে বাঁচানোর জন্য ECMO-র সাপোর্টে রাখা হয়ে গেছে । বেসরকারি এই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, এর আগে AIIMS দিল্লি-তে এক COVID-19 রোগী এবং চেন্নাইয়ের বেসরকারি একটি একটি হাসপাতালে এক COVID-19 রোগীকে ECMO-র সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তবে, এই দুই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি । কলকাতার বাসিন্দা 24 বছর বয়সি এই রোগী-ই এ দেশে প্রথম কোনও COVID-19 রোগী, যাঁকে ECMO-র সাপোর্টে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হল । এই রোগীর বাবা বলেন, "চিকিৎসকরা বলেছিলেন পাঁচ শতাংশ সুযোগ রয়েছে । সেখান থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে আমার মেয়ে । এটা খুব বড় বিষয়।"
বেসরকারি এই হাসপাতালের ECMO স্পেশালিস্ট, চিকিৎসক সোহম মজুমদার বলেন, "এই রোগীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । এই জন্য ECMO-র মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। এই রোগীকে 12 দিনের বেশি সময় ধরে 300 ঘণ্টা ECMO-র সাপোর্টে রাখতে হয়েছিল । এর পরে তাঁকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হয়। পাঁচ-সাত দিন পরে ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট বন্ধ করা হয়। রোগী এখন ভালো আছেন । COVID-19 নেগেটিভ পাওয়া গেছে।"
বেসরকারি এই হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট, চিকিৎসক চিকিৎসক মহুয়া ভট্টাচার্য বলেন, "COVID-19 যখন ফুসফুসকে খুব ক্ষতিগ্রস্ত করে, তখন অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না।" তিনি বলেন, "ECMO-র একটা সুবিধা, এটা বাইরে থেকে অক্সিজেনেট করে দেয়। এর ফলে ফুসফুসকে অনেকটা প্রোটেকশন দেওয়া সম্ভব হয়। অনেক সময় অনেক বার ব্রিদিং করলে ফুসফুসে ইনজুরি হয়। ECMO-র সাপোর্টে থাকলে এটা অনেকটা প্রিভেনশন করা যায়। এই রোগীর ক্ষেত্রে এই সাপোর্ট খুব হেল্পফুল হয়েছিল।" শুধু ভেন্টিলেট করে অনেক রোগীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এই জন্য ECMO-র আরও বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বেসরকারি এই হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট, চিকিৎসক শাশ্বতী সিনহা বলেন, "গত 17 মে খুব খারাপ অবস্থায় 24 বছর বয়সি এক রোগীকে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। ইমারজেন্সিতে যখন নিয়ে আসা হয় তখন এই রোগীর অক্সিজেন লেভেল খুব কম ছিল। 60 শতাংশ অক্সিজেন লেভেল ছিল। যেখানে সাধারণত আমরা এক্সপেক্ট করি অক্সিজেন স্যাচুরেশন 90-এর উপরে থাকবে। অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া সত্ত্বেও ইম্প্রুভ হচ্ছিল না, তখন এই রোগীকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। ভেন্টিলেশনের সাপোর্ট দেওয়া সত্ত্বেও অক্সিজেন লেভেল কোনও মতেই 82-র উপর তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। সব রকম চেষ্টা করেও যখন এই রোগীর অক্সিজেন লেভেল বাড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না, তখন এই রোগীকে ECMO-র সাপোর্টে রাখতে হয়েছিল ।"