কলকাতা, 7 মে : রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি বিরোধীদের । রাজ্যের দুই বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান, ও সুজন চক্রবর্তী রাজ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিতে জানান, আর সময় নেই। অনেক দেরি হয়ে গেছে । দেশের মধ্যে কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার এ রাজ্যে । লকডাউনের কঠিন সময়ে মানুষের যন্ত্রণা ভয়ঙ্কর । খাদ্য, অর্থ, কাজ, নিরাপত্তা, চিকিৎসা বিভ্রাট, তথ্য গোপনীয়তা সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তা প্রবল । চূড়ান্ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ । সরকার মানুষকে ভরসা দিতে ব্যর্থ । বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে মানুষ জানতে এবং বুঝতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু সরকার কী চায়, আর কী চায় না, তা কেউ কী জানে? বিরোধীরা জানে? প্রশাসন জানে? সরকারের ঘোষণা, প্রচার এবং বিবৃতি যে কতটা অসচ্ছ এবং অসত্য তা মানুষ ক্রমশই উপলব্ধি করতে পারছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন নেতারা । সরকার কী চায় তা দ্রুত স্পষ্ট করুক । প্রকাশ করুক । ঘোষণা করুক মানুষের কাছে । এই দাবিতেই মুখ্যমন্ত্রীকে ফের চিঠি দিলেন আবদুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তী ।
23 মার্চের সর্বদলীয় সভা এবং পরবর্তীতে একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীকে একগুচ্ছ প্রশ্ন করতে দেখা গেছে বিরোধীদের । সে সময় মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলা হয়েছিল, " আপনি নিশ্চুপ । প্রশাসনিক কর্তারাও নিশ্চুপ । সবাই এড়িয়ে যাচ্ছেন । কেন? সরকার কি শুধুই ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য? স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা বলে কিছু থাকবে না ? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, ভিন রাজ্যে আটকে বহু ছাত্র, শ্রমিক, পর্যটক, অসুস্থ মানুষ । তেমনি রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। দেড় মাস অতিক্রান্ত। এরা কী খাবেন, কোথায় থাকবেন, কবে , কীভাবে ঘরে ফিরবেন ? সরকারের কি কোনও ভূমিকা আছে তাতে ? সহানুভূতি এবং সংবেদনশীলতার চূড়ান্ত অভাব ঘটছে।
চিঠিতে পাঁচটি দাবি জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে । বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রাজ্যের মধ্যে যাঁরা আটকে আছেন তাঁরা কবে এবং কীভাবে বাড়ি ফিরবেন তার কোনও নির্দেশিকা নেই। রাজ্যের বাইরে আটকে থাকা মানুষদের জন্য রাজ্যভিত্তিক নোডাল অফিসার এবং হেল্পলাইন আজও চালু হয়নি । বাইরে থাকা মানুষদের তালিকা, যোগাযোগ এবং ঘরে ফেরার জন্য গাইডলাইন, বারবার বলা সত্ত্বেও আজও পর্যন্ত চালু হয়নি । সার্বিক প্রচেষ্টায় আপাতত মাত্র দুটি ট্রেন রাজ্যে এসেছে। বাকি ট্রেনের বন্দোবস্ত করার জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগ কোথায় ? সেই সব মানুষগুলির ফেরত আসা, এছাড়াও ভিন রাজ্যে আটকে পড়া ব্যক্তিদের থাকা খাওয়ার কোনও ব্যবস্থাই কি সরকার নিয়েছে ? দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চূড়ান্ত । বিপর্যস্ত মানুষগুলো ঘরে ফেরার জন্য স্বাভাবিকভাবেই মরিয়া । সরকার গাইডলাইন প্রকাশ করুক । প্রটোকল মেনেই সবাইকে চলতে হবে তা নির্দিষ্ট করুক । মানুষগুলোকে আশ্বস্ত করুক । এটা অত্যন্ত জরুরি ।অন্যদিকে, আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে জানান যে, বিগত বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা নির্দিষ্টভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের নাম লিপিবদ্ধ করা, সরকারের পক্ষ থেকে পরিচিতি পত্র দেওয়া, এবং এদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ-খবর রাখা ও সাহায্য করার জন্য রাজ্যভিত্তিক নির্দিষ্ট দায়িত্ব স্থির করা হোক । বিরোধীদের সেই প্রস্তাব এখনও পর্যন্ত মেনে উঠতে পারেনি শাসক দল । যার ফলে আটকে থাকা শ্রমিকদের নিয়ে চরম ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।
বড় কঠিন সময় । সার্বিক সহযোগিতার বদলে, সরকার বরং দায় এড়িয়ে যাচ্ছে । ভিন রাজ্যে আটকে থাকা বিভিন্ন মানুষদের ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই। অপরদিকে কেন্দ্রীয় সরকার রেলের ব্যবস্থা করলেও, রেলভাড়ার দায়িত্ব অস্বীকার করছে । আটকে থাকা বিপর্যস্ত মানুষ এবং শ্রমিকরাই যেন লকডাউনের জন্য দায়ী । অপরাধ যেন তাঁদেরই। যেন এরা "বন্ডেড লেবারের" দল । মুখ্যমন্ত্রী কী করবেন, কীভাবে করবেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে অবিলম্বে স্পষ্ট করুন । আপত্তি থাকলে সেটাও জানান । নচেৎ প্রটোকল, গাইডলাইন, নোডাল অফিসার, হেলপ্লাইন প্রকাশ করে মানুষগুলোকে জানান । দ্রুত দায়িত্ব পালন করুন। দেড় মাস হয়ে গেল। ভয়ঙ্কর কষ্টে রয়েছে মানুষ। ওনারা এই রাজ্যেরই। মানুষগুলো বোঝা নয়। ওনারা সম্পদ । এমনই সব একাধিক অভিযোগ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ডঃ সুজন চক্রবর্তী এবং আব্দুল মান্নান।