কলকাতা, 26 ডিসেম্বর : রক্তদান শিবিরের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনই কমছে রক্তদাতাদের সংখ্যাও । যার ফলে দেখা দিচ্ছে রক্তের সংকট । গতকাল বড়দিনের পরে আগামী সপ্তাহে ইংরেজি নববর্ষ । পরিস্থিতি না বদলালে উৎসবের মরশুমে রক্তের এই সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা ।
দীর্ঘ বছর ধরে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন উত্তর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সেক্রেটারি ডি আশিস । তিনি বলেন, "শহরে রক্তের সংকট চলছে । কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারেনি বিভিন্ন ক্লাব । নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের অবস্থা খুবই খারাপ । আমাদের কাছে প্রচুর ফোন আসছে, রোগীদের বাঁচানোর জন্য রক্তদাতাদের চাওয়া হচ্ছে । " তিনি আরও বলেন, "যে ছবি দেখা যাচ্ছে, রক্তদান শিবির সংখ্যায় খুব কম হচ্ছে । আমরা আশা করেছিলাম, বিভিন্ন ক্লাব বড়দিনেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবে । উৎসব আমরা পালন করব । উৎসবকে সামনে রেখেও আমরা যদি রক্তদানের মতো বিষয়, যেটা যে কোনও মুহূর্তে মানুষের প্রয়োজন, সেই রক্ত যদি সময়মতো পাওয়া না যায়, তা হলে উৎসব, উৎসব হয়ে উঠবে না । "
এ'বছর পুজোর পর থেকে দেখা যাচ্ছে রক্তদানের যে ধারাবাহিকতা তেমন নেই ৷ বিভিন্ন ক্লাব-প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল রক্তদানের আয়োজন করে কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম । এ'কথা জানিয়ে ডি আশিস বলেন, "রক্তদান শিবির যে সংখ্যায় হচ্ছে, সেখানে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণও কম হচ্ছে । কোনও শিবিরে হয়ত বলা হচ্ছে 100 জন রক্তদান করবেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল 40 জন রক্তদান করলেন । কোথাও হয়ত 50 জনের কথা বলা হয়েছে, দেখা গেল 30 জনেরও কম রক্তদান করেছেন । রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ অনেক কম হচ্ছে ।"
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কফিহাউজ় সোশাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অচিন্ত্য লাহা । বলেন, " রক্তের একটা সংকট চলছে । উৎসব বলে তাতে কোনও বদল আসেনি । বরং সংকট বাড়ছে । উৎসবমুখর দিনে মানুষ উৎসবে মেতেছেন । কিন্তু রক্তদানের মতো সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় তাঁরা মিলিত হতে পারেননি । সেই অর্থে বড়দিনে কলকাতায় কোনও রক্তদান শিবির ছিল না ।"
তিনি আরও বলেন, "আগের তুলনায় রক্তদান শিবিরের সংখ্যা যেমন কমেছে, রক্তদাতাদের সংখ্যাও কমেছে । রাজনৈতিক কারণ বিরাট প্রভাব ফেলেছে । কলকাতার এমন কয়েকটি স্থানে রক্তদান শিবিরে যেখানে 400-600 জন রক্তদান করতেন, গত দুই বছর ধরে সেই রক্তদান শিবিরগুলি হচ্ছে না । এই পরিমাণে রক্তদাতাদের সংখ্যা কমছে । এই সংকট যদি কলকাতায় হয় কিন্তু জেলাগুলিতে না হয়, তাহলে সেভাবে সমস্যায় পড়তে হয় না । তবে সংকট যদি জেলাগুলিতে দেখা দেয় তাহলে তার প্রভাব কলকাতায় বেশি দেখা দেয় ।" রক্তদান শিবিরের আয়োজন যদি কম হয় ৷ যদি শিবিরে রক্তদাতাদের সংখ্যা বেশি না থাকে ৷ তাহলে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে কীভাবে রক্ত থাকবে? এই প্রশ্ন তুলে ডি আশিস বলেন, "বড়দিনের দিন অনেক ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তদাতা ও রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ খুবই কম ছিল । যে কারণে হয়ত অনেকে তাঁর সময়মতো প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত পাননি । পরিস্থিতির বদল না ঘটলে রক্তের এই সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ।"
পরিস্থিতির মোকাবিলায় কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য দপ্তর? জানতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় । তবে, তাঁর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি ।