কলকাতা, 22 জুলাই : ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ((National Human Rights Commission of India)) প্রদত্ত রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত । রাজ্যের তরফে সওয়াল করলেন অভিষেক মনু সিংভি (Abhishek Singhvi) । তিনি বলেন, রিপোর্টে এমন বহু ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে যা ভোট পরবর্তী ঘটনাই নয় । পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের কাছে যত অভিযোগ জমা পড়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷
সিংভির এই সওয়ালের পাল্টা মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী মহেশ জেথ মালানি বলেন, "পুলিশ বহু জায়গায় অভিযোগ প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে । পুলিশ আক্রান্তদের প্রতি সুবিচার করবে কী করে ? গুজরাত দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি রাজ্যে ৷ অবিলম্বে নিরপেক্ষ সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো প্রয়োজন ।"
তখনই রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, "জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের সমস্ত অংশ রাজ্য সরকার-সহ মামলার অন্যান্য পক্ষকে দেওয়া হয়নি । বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগের বিবরণ আছে যে অংশে সেই অংশ দেওয়া হয়নি । এই বক্তব্য তাদের যদি না জানানো হয়, তাহলে তারা উত্তর দেবেন কীভাবে ?"
তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল বলেন, "ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয় গোপনীয় । তাই ওই রিপোর্টে দেওয়া হয়নি । পাশাপাশি এই বিষয়ে এখনই কোনও তদন্ত করা হচ্ছে না ।" এরপরই বিচারপতি সুব্রত তালুকদার বলেন, "রাজ্যের কাজ কী অভিযোগ পেলে তদন্ত করা ? নাকি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে শুধুমাত্র তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করে তার উত্তর দেওয়া ?"
অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে আদালতে উল্লেখ করা হয়, যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন এখনও তাঁদের অনেককেই পুলিশ এবং শাসকদলের কর্মীরা ভয় দেখাচ্ছেন ।
এরপর রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, রাজ্য আক্রান্তদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত হলফনামা জমা দিতে চায় আদালতকে । পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্যের সেই আর্জিতে সম্মতি জানায় । আদালত জানায়, 26 জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্যকে বিস্তারিত হলফনামা পেশ করতে হবে আদালতে । 28 জুলাই ফের এই মামলার পরবর্তী শুনানি ঘোষণা করা হয়েছে ৷
গত 13 জুলাই পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিযুক্ত বিশেষ কমিটি 50 পাতার একটি রিপোর্ট পেশ করে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় । তাতে মানবাধিকার কমিশন নিযুক্ত কমিটি ভোট পরবর্তী যে হিংসার ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছিল । পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীকে দুষ্কৃতী তালিকাভুক্ত করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন । তালিকায় নাম ছিল উদয়ন গুহ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শেখ সুফিয়ান, জীবন সাহা, শওকত মোল্লা-সহ আরও বেশ কিছু নেতা-নেত্রী । পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সুপারিশ সেই রিপোর্টে করা হয়েছিল । যে রিপোর্টকে আজ রাজ্যের তরফে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট বলে উল্লেখ করা হল আদালতে । আগামী 28 জুলাই রয়েছে পরবর্তী শুনানি ৷
আরও পড়ুন : মানবাধিকার কমিশনের সদস্যের গেরুয়া যোগ ! টুইটারে সরব অভিষেক মনু সিংভি