ETV Bharat / city

প্রসেনজিৎ সিংহের মৃত্যুতে নয়া মোড়, কল লিস্টে যুবতির সঙ্গে যোগাযোগের চিহ্ন - death case

প্রসেনজিতের মৃত্যুর ঘটনায় আটক বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তিনি যে প্রসেনজিতের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন তা স্বীকার করেছেন । তাঁর এই স্বীকারোক্তির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডাক বিভাগের কর্মী বিশ্বজিৎকে । কলকাতা পুলিশের কর্মী ইন্দ্রজিৎকে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ । যদিও তাঁকে তদন্তের প্রয়োজনে ফের ডাকা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ।

ছবি
author img

By

Published : Aug 20, 2019, 11:44 PM IST

Updated : Aug 21, 2019, 7:07 AM IST

কলকাতা, 20 অগাস্ট: আলিপুর বডিগার্ড লাইনে প্রসেনজিৎ সিংহের মৃত্যুতে নয়া মোড় । তাঁর কল লিস্ট বলছে, মৃত্যুর আগে এক যুবতির সঙ্গে বারবার ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি । এমন কী সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ শেষবারও তিনি কথা বলেন ওই যুবতির সঙ্গেই । তদন্তকারীরা তার খোঁজ শুরু করেছে । কলকাতা পুলিশ মনে করছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনায় ওই যুবতির কাছ থেকে মিলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ।

এ দিকে প্রসেনজিতের মৃত্যুর ঘটনায় আটক বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তিনি যে প্রসেনজিতের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন তা স্বীকার করেছেন । তাঁর এই স্বীকারোক্তির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডাক বিভাগের কর্মী বিশ্বজিৎকে । কলকাতা পুলিশের কর্মী ইন্দ্রজিৎকে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ । যদিও তাঁকে তদন্তের প্রয়োজনে ফের ডাকা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনায় ইন্দ্রজিতের যোগ থাকার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি । তবে বিশ্বজিতের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে । তদন্তকারীরা জেনেছেন বিশ্বজিতের সঙ্গে তাঁর টেলিফোনে শেষ কথা হয় 4 জুলাই । তার আগেও বহুবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে । পাশাপাশি, এই ঘটনায় তৃতীয় এক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছে তদন্তকারীরা । সেই সূত্রে ইতিমধ্যেই মালদায় গেছে কলকাতা পুলিশের দল ।

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার । ওই দিন সকালে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরের জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় প্রসেনজিতের মৃতদেহ । বডিগার্ড লাইন্সের এক পুলিশকর্মী সেই দেহ দেখতে পান । পরে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ এসে সেই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয় । প্রাথমিকভাবে, মৃতদেহের মাথায় ক্ষত ও শরীরে কালশিটের দাগ দেখতে পান তদন্তকারীরা । সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছিল, হয়তো তাকে খুন করে বডিগার্ড লাইনের পিছনের দিকে ওই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে । ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই কলকাতা ছুটে আসেন উত্তম । তিনি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত । তিনি ছেলেকে খুনের অভিযোগ আনেন । তার সরাসরি অভিযোগ বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিতের বিরুদ্ধে । তিনি দাবি করেন, পাশের গ্রামের দুই ভাই বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎ প্রসেনজিতকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নেয় । ইন্দ্রজিৎ রিজার্ভ ফোর্সের কর্মী হওয়ায় বিশ্বাস করে টাকা দেওয়া হয় । আর বিশ্বজিৎ ডাক বিভাগের কর্মী । সেই টাকা ফেরত নিতেই কলকাতায় এসেছিলেন প্রসেনজিৎ। তার জেরেই এই পরিণতি ।

এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । খতিয়ে দেখা হয় অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন । ময়নাতদন্ত এবং প্রসেনজিতের কল রেকর্ডস ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার পরে । ওই সময় ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিতের টাওয়ার লোকেশন আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের আশেপাশেও ছিল না । পুলিশকে জেরায় তারা সে কথাই জানিয়েছেন । তাদের বক্তব্য যাচাই করে দেখেছে পুলিশ । এক্ষেত্রে তারা ঠিকই বলছেন । অর্থাৎ ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিৎ প্রসেনজিতের কাছে ছিল না । অন্যদিকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর । সেখানে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট লিখে দিয়েছেন, 'অ্যান্টি মর্টাম ড্রাউনিং'৷

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পুকুরের পাড়ে রয়েছে একটি মন্দির । সেখানে পাওয়া গেছে বিছানা । সেটি সম্ভবত প্রসেনজিতের । একইসঙ্গে উদ্ধার হয়েছে তার প্যান্ট এবং মোবাইল । এমনিতে প্রসেনজিতের কাকা এক সময় কলকাতা পুলিশে কর্মরত ছিলেন । কয়েক মাস আগে অবসর নিয়েছেন তিনি । প্রসেনজিতের কাকা থাকতেন আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সেই । সেই সূত্রে তার যাতায়াত ছিল । বেশ কিছু লোকজন চেনা হয়ে গিয়েছিল তার । সেই সূত্রে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান ওই মন্দিরে রাতে ঘুমোতেন তিনি । শুক্রবার রাতে কলকাতায় ব্যাপক বৃষ্টি হয় । তদন্তকারীরা দেখেছেন ওই পুকুর পাড় যথেষ্ট পিচ্ছিল । সেই সূত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ তেমনই । আবার তিনি পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যাও করে থাকতে পারেন । পোসমর্টেমের রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি তাকে খুন করতে হয় তবে পেছন থেকে ধাক্কা মারতে হবে । ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিৎ যেহেতু সেই এলাকায় ছিল না তাহলে, সেখানে উপস্থিতি থাকতে হবে তৃতীয় ব্যক্তির । সেই সূত্রে বডিগার্ড লাইনের সব CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।


তবে তদন্তকারীরা বলছেন, যদি তাকে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারত তবে, কোনও না কোনও ক্লু পাওয়া যেত । সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই পায়ের ছাপ অন্তত মিলত । ওয়াটগঞ্জ থানা কিংবা কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগ তেমন কিছু পায়নি । এদিকে, এই মামলায় কলকাতা পুলিশ খুনের পাশাপাশি প্রতারণা এবং অপরাধের ষড়যন্ত্রের ধারা যোগ করেছে । এখনও পর্যন্ত মূলত প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিশ্বজিৎকে । তবে তদন্তের অন্য পর্যায়ে বারবার ফোনে কথা বলা যুবতি অনেক ক্লু দিতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা । অর্থাৎ তাকে জেরা করলেই পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে, দুর্ঘটনা না কি আত্মহত্যার ঘটনা । পুলিশ সূত্রে খবর ওই যুবতিও মালদাতেই থাকেন । তার সঙ্গে প্রসেনজিতের কি সম্পর্ক ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কলকাতা, 20 অগাস্ট: আলিপুর বডিগার্ড লাইনে প্রসেনজিৎ সিংহের মৃত্যুতে নয়া মোড় । তাঁর কল লিস্ট বলছে, মৃত্যুর আগে এক যুবতির সঙ্গে বারবার ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি । এমন কী সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ শেষবারও তিনি কথা বলেন ওই যুবতির সঙ্গেই । তদন্তকারীরা তার খোঁজ শুরু করেছে । কলকাতা পুলিশ মনে করছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনায় ওই যুবতির কাছ থেকে মিলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ।

এ দিকে প্রসেনজিতের মৃত্যুর ঘটনায় আটক বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তিনি যে প্রসেনজিতের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন তা স্বীকার করেছেন । তাঁর এই স্বীকারোক্তির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডাক বিভাগের কর্মী বিশ্বজিৎকে । কলকাতা পুলিশের কর্মী ইন্দ্রজিৎকে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ । যদিও তাঁকে তদন্তের প্রয়োজনে ফের ডাকা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনায় ইন্দ্রজিতের যোগ থাকার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি । তবে বিশ্বজিতের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে । তদন্তকারীরা জেনেছেন বিশ্বজিতের সঙ্গে তাঁর টেলিফোনে শেষ কথা হয় 4 জুলাই । তার আগেও বহুবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে । পাশাপাশি, এই ঘটনায় তৃতীয় এক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছে তদন্তকারীরা । সেই সূত্রে ইতিমধ্যেই মালদায় গেছে কলকাতা পুলিশের দল ।

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার । ওই দিন সকালে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরের জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় প্রসেনজিতের মৃতদেহ । বডিগার্ড লাইন্সের এক পুলিশকর্মী সেই দেহ দেখতে পান । পরে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ এসে সেই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয় । প্রাথমিকভাবে, মৃতদেহের মাথায় ক্ষত ও শরীরে কালশিটের দাগ দেখতে পান তদন্তকারীরা । সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছিল, হয়তো তাকে খুন করে বডিগার্ড লাইনের পিছনের দিকে ওই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে । ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই কলকাতা ছুটে আসেন উত্তম । তিনি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত । তিনি ছেলেকে খুনের অভিযোগ আনেন । তার সরাসরি অভিযোগ বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিতের বিরুদ্ধে । তিনি দাবি করেন, পাশের গ্রামের দুই ভাই বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎ প্রসেনজিতকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নেয় । ইন্দ্রজিৎ রিজার্ভ ফোর্সের কর্মী হওয়ায় বিশ্বাস করে টাকা দেওয়া হয় । আর বিশ্বজিৎ ডাক বিভাগের কর্মী । সেই টাকা ফেরত নিতেই কলকাতায় এসেছিলেন প্রসেনজিৎ। তার জেরেই এই পরিণতি ।

এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । খতিয়ে দেখা হয় অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন । ময়নাতদন্ত এবং প্রসেনজিতের কল রেকর্ডস ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার পরে । ওই সময় ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিতের টাওয়ার লোকেশন আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের আশেপাশেও ছিল না । পুলিশকে জেরায় তারা সে কথাই জানিয়েছেন । তাদের বক্তব্য যাচাই করে দেখেছে পুলিশ । এক্ষেত্রে তারা ঠিকই বলছেন । অর্থাৎ ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিৎ প্রসেনজিতের কাছে ছিল না । অন্যদিকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর । সেখানে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট লিখে দিয়েছেন, 'অ্যান্টি মর্টাম ড্রাউনিং'৷

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পুকুরের পাড়ে রয়েছে একটি মন্দির । সেখানে পাওয়া গেছে বিছানা । সেটি সম্ভবত প্রসেনজিতের । একইসঙ্গে উদ্ধার হয়েছে তার প্যান্ট এবং মোবাইল । এমনিতে প্রসেনজিতের কাকা এক সময় কলকাতা পুলিশে কর্মরত ছিলেন । কয়েক মাস আগে অবসর নিয়েছেন তিনি । প্রসেনজিতের কাকা থাকতেন আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সেই । সেই সূত্রে তার যাতায়াত ছিল । বেশ কিছু লোকজন চেনা হয়ে গিয়েছিল তার । সেই সূত্রে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান ওই মন্দিরে রাতে ঘুমোতেন তিনি । শুক্রবার রাতে কলকাতায় ব্যাপক বৃষ্টি হয় । তদন্তকারীরা দেখেছেন ওই পুকুর পাড় যথেষ্ট পিচ্ছিল । সেই সূত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ তেমনই । আবার তিনি পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যাও করে থাকতে পারেন । পোসমর্টেমের রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি তাকে খুন করতে হয় তবে পেছন থেকে ধাক্কা মারতে হবে । ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিৎ যেহেতু সেই এলাকায় ছিল না তাহলে, সেখানে উপস্থিতি থাকতে হবে তৃতীয় ব্যক্তির । সেই সূত্রে বডিগার্ড লাইনের সব CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।


তবে তদন্তকারীরা বলছেন, যদি তাকে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারত তবে, কোনও না কোনও ক্লু পাওয়া যেত । সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই পায়ের ছাপ অন্তত মিলত । ওয়াটগঞ্জ থানা কিংবা কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগ তেমন কিছু পায়নি । এদিকে, এই মামলায় কলকাতা পুলিশ খুনের পাশাপাশি প্রতারণা এবং অপরাধের ষড়যন্ত্রের ধারা যোগ করেছে । এখনও পর্যন্ত মূলত প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিশ্বজিৎকে । তবে তদন্তের অন্য পর্যায়ে বারবার ফোনে কথা বলা যুবতি অনেক ক্লু দিতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা । অর্থাৎ তাকে জেরা করলেই পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে, দুর্ঘটনা না কি আত্মহত্যার ঘটনা । পুলিশ সূত্রে খবর ওই যুবতিও মালদাতেই থাকেন । তার সঙ্গে প্রসেনজিতের কি সম্পর্ক ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Intro:কলকাতা, ২০ অগাস্ট: আলিপুর বডিগার্ড লাইনে প্রসেনজিৎ সিংহের মৃত্যুতে নয়া মোড়। তার কল ডিটেলস বলছে, মৃত্যুর আগে এক যুবতীর সঙ্গে বারবার ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। এমনকি সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ শেষবারও তিনি কথা বলেন ওই যুবতীর সঙ্গেই। তদন্তকারীরা তার খোঁজ শুরু করেছে। কলকাতা পুলিশ মনে করছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনায় ওই যুবতীর কাছ থেকে মিলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। Body:এদিকে প্রসেনজিতের মৃত্যুর ঘটনায় আটক বিশ্বজিৎ মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন তিনি যে প্রসেনজিতের থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন তা স্বীকার করেছেন। তার এই স্বীকারোক্তি সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডাক বিভাগের কর্মী বিশ্বজিৎকে। কলকাতা পুলিশের কর্মী ইন্দ্রজিৎকে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। তাকে তদন্তের প্রয়োজনে ফের দেখা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনায় ইন্দ্রজিতের যোগ থাকার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি। তবে বিশ্বজিতের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন বিশ্বজিতের সঙ্গে তার টেলিফোনে শেষ কথা হয় 4 জুলাই। তার আগেও বহুবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। পাশাপাশি, এই ঘটনায় তৃতীয় এক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছে তদন্তকারীরা। সেই সূত্রে ইতিমধ্যেই মালদায় গিয়েছে কলকাতা পুলিশের টিম।

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। ওই দিন সকালে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরের জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় প্রসেনজিতের মৃতদেহ। বডি গার্ড লাইন্সের এক পুলিশকর্মী সেই দেহ দেখতে পান। পরে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ এসে সেই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। প্রাথমিকভাবে, মৃতদেহের মাথায় ক্ষত ও শরীরে কালশিটের দাগ দেখতে পান তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছিল, হয়তো তাকে খুন করে বডিগার্ড লাইনের পিছনের দিকে ওই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই কলকাতা ছুটে আসেন উত্তম। তিনি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তিনি ছেলেকে খুনের অভিযোগ আনেন। তার সরাসরি অভিযোগ বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিতের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, পাশের গ্রামের দুই ভাই বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিত প্রসেনজিৎকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নেয়। ইন্দ্রজিৎ রিজার্ভ ফোর্সের কর্মী হওয়ায় বিশ্বাস করে টাকা দেওয়া হয়। আর বিশ্বজিৎ ডাক বিভাগের কর্মী। সেই টাকা ফেরত নিতেই কলকাতায় এসেছিলেন প্রসেনজিৎ। তার জেরেই এই পরিণতি।

এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। খতিয়ে দেখা হয় অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন। ময়না তদন্ত এবং প্রসেনজিতের কল রেকর্ডস ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার পরে। ওই সময় ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিতের টাওয়ার লোকেশন আলিপুর বডিগার্ড লাইনের আশেপাশেও ছিল না। পুলিশকে জেরায় তারা সে কথাই জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য যাচাই করে দেখেছে পুলিশ। এক্ষেত্রে তারা ঠিকই বলছেন। অর্থাৎ ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিৎ প্রসেনজিতের কাছে ছিল না। অন্যদিকে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট বলছে, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সেখানে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রাথমিক রিপোর্টে পরিষ্কার লিখে দিয়েছেন, “অ্যান্টি মর্টাম ড্রাউনিং।"

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পুকুরের পাড়ে রয়েছে একটি মন্দির। সেখানে পাওয়া গেছে বিছানা। সেটি সম্ভবত প্রসেনজিতের। একইসঙ্গে উদ্ধার হয়েছে তার দ্রুত প্যান্ট এবং মোবাইল। এমনিতে প্রসেনজিতের কাকা একসময় কলকাতা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। কয়েক মাস আগে অবসর নিয়েছেন তিনি। প্রসেনজিতের কাকা থাকতেন আলিপুর বডিগার্ড লাইনেই। সেই সূত্রে তার যাতায়াত ছিল। বেশ কিছু লোকজন চেনা হয়ে গিয়েছিল তার। পুলিশ খতিয়ে দেখেছে তাদের কারো কাছেই ছিলেন না প্রসেনজিৎ। সেই সূত্রে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান ওই মন্দিরে রাতে ঘুমতেন তিনি। শুক্রবার রাতে কলকাতায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়। তদন্তকারীরা দেখেছেন ওই পুকুর পাড় যথেষ্ট পিচ্ছিল। সেই সূত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ তেমনই। আবার তিনি পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যাও করে থাকতে পারেন। পোসমর্টেমের রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি তাকে খুন করতে হয় তবে পেছন থেকে ধাক্কা মারতে হবে। ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিৎ যেহেতু সেই এলাকায় ছিল না তাহলে, সেখানে উপস্থিতি থাকতে হবে তৃতীয় ব্যক্তির। সেই সূত্রে বডি গার্ড লাইনের সব সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Conclusion:তবে তদন্তকারীরা বলছেন, যদি তাকে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারত তবে, কোনও না কোনও ক্লু পাওয়া যেত। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই পায়ের ছাপ অন্তত মিলত। ওয়াটগঞ্জ থানা কিংবা কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগ তেমন কিছু পায়নি। এদিকে, এই মামলায় কলকাতা পুলিশ খুনের পাশাপাশি প্রতারণা এবং অপরাধের ষড়যন্ত্রের ধারা যোগ করেছে। এখনো পর্যন্ত মূলত প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিশ্বজিৎকে। তবে তদন্তের অন্য পর্যায়ে বারবার ফোনে কথা বলা যুবতি অনেক ক্লু দিতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। অর্থাৎ তাঁকে জেরা করলেই পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে, দুর্ঘটনা নাকি আত্মহত্যার ঘটনা। পুলিশ সূত্রে খবর ওই যুবতীও মালদাতেই থাকেন। তার সঙ্গে প্রসেনজিতের কি সম্পর্ক ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Last Updated : Aug 21, 2019, 7:07 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.