কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর : জন্মের পরই সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যু ৷ অভিযোগ উঠল RG কর হাসপাতালের দিকে ৷ প্রসূতির দাবি, চিকিৎসকের গাফিলতিতে গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে ৷
প্রসূতির নাম কৃষ্ণা শীল ৷ বয়স 34 ৷ তিনি উলটোডাঙা মেইন রোডের বাসিন্দা । গত 31 অগাস্ট তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোরে । ওই দিন তাঁকে ভরতি নেওয়া হয় ।
প্রসূতির পরিবারের দাবি, 31 অগাস্ট বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ কৃষ্ণাকে লেবার রুমে কিছু পরীক্ষা করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । সারারাত তাঁকে সেখানে রাখা হয় । কোনও ডাক্তার দেখেননি । যদিও কৃষ্ণা চিকিৎসকদের বলেন, তিনি অস্বস্তি অনুভব করছেন । কিন্তু, হাসপাতালে অশান্তি বাধাতে বারণ করা হয়েছিল তাঁকে । অবশেষে ওই রাতে ডিউটিতে ছিলেন যে ডাক্তার এবং PGT ডাক্তাররা, তাঁদের চূড়ান্ত অবহেলার কারণে এই প্রসূতির গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয় ।
পরিবারের দাবি, সারারাত এই প্রসূতির পরিজনরা হাসপাতালে থাকলেও, তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে হাসপাতাল থেকে কোনও ঘোষণা করা হয়নি । এবিষয়ে RG করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোধন বটব্যালের বক্তব্য জানতে চেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় । তবে তাঁর বক্তব্য মেলেনি ।
কৃষ্ণার স্বামী সুজয় দাস বলেন, "হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি । স্বাস্থ্যভবনেও স্পিড পোস্টে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে ।" তিনি বলেন, "গত 31 অগাস্ট সকালে আমার স্ত্রী যখন আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোরে যান, তখন ওঁকে ভরতি নেওয়া হয় । ওঁর ব্লাড প্রেসার বেশি ছিল । এই জন্য অবজ়ারভেশনে রেখে সিজ়ারিয়ান ডেলিভারি করা হবে বলে জানানো হয়েছিল । দুপুর 3টে নাগাদ কিছু টেস্ট করানোর জন্য আমার স্ত্রীকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয় । আমরা যখনই যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করেছি, কী চলছে, আমাদের বলা হয়েছে পরীক্ষা চলছে । বাইরে অপেক্ষা করছিলাম । অনেক পরে সিজ়ারের জন্য বন্ডে সই করার কথা বলা হয় আমাদের ।"
সুজয়বাবুর কথায়, "স্ত্রীকে বলা হয়েছিল আপনি ভালো আছেন, অপেক্ষা করুন । আমাদের কিছু জানানো হয়নি । স্ত্রীর কাছে পরে জেনেছি, বসে থাকতে থাকতে ও ঘুমিয়ে পড়েছিল । ভোর 4টের সময় যখন ওকে তোলা হয়, তখন ও দেখে বেবি নড়ছে না । আমাদের সন্তান তো আর ফিরে আসবে না । কিন্তু, আমরা চাই, এভাবে যেন অন্য কোনও মায়ের কোল খালি না হয় ।"
পরিবারের দাবি, সিনিয়র চিকিৎসকের বদলে কর্তব্যরত এক PGT ডাক্তার ছিলেন ৷ তিনি কৃষ্ণাকে বাড়ির লোককে ডাকতে বলেন । পরে অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ জানিয়েছিলেন ৷ বেবির মুভমেন্ট হচ্ছে না । এ ক্ষেত্রে বেবি নাও বাঁচতে পারে । পরে বলা হয়, প্রসূতির পরিবার ব্লাড প্রেসারের জন্য একটি ওষুধ খাওয়ানোয় বেবি মারা গেছে ৷ তবে কোনও ওষুধ খাওয়ানো হয়নি, দাবি করেছে প্রসূতির পরিবার ৷
সুজয়বাবুর কথায়, "পর দিন আমার স্ত্রীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় । বলা হয়, গর্ভস্থ মৃত শিশুকে বের করার জন্য নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হবে । এদিকে, সময় চলে যাচ্ছে, আমাদের চিন্তা বাড়ছিল । কারণ, গর্ভে মৃত শিশু । এর জন্য কোনও সমস্যা হতে পারে । এর পরে গত 3 সেপ্টেম্বর USG করে বলা হয়, ওষুধ দেওয়া হচ্ছে ৷ নরমাল ডেলিভারি করা হবে । শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারি করা হয়নি । বলা হয়, বেবি বড় হয়ে গেছে, সিজ়ারিয়ান ডেলিভারি করাতে হবে । এই ভাবে আমাদের সন্তানকে আমরা হারালাম ।"
5 সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় কৃষ্ণা শীলকে । 14 সেপ্টেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রসূতির পরিবার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ৷ পরিবারের দাবি, প্রথমে অভিযোগ নেওয়া হয়নি ৷ তবে বিচারের জন্য তাঁরা লড়াই করবেন । যেখানে অভিযোগ জানাতে হয়, জানাবেন । প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকেও জানাবেন ।
গর্ভস্থ সন্তানকে হারিয়ে কৃষ্ণার প্রশ্ন, ''পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি (PGT) ডাক্তারদের কি অধিকার রয়েছে কাউকে হত্যা করার? যদিও, এই ডাক্তাররা হাসপাতালের মেরুদণ্ড । তাঁরা কি মেডিকেল এথিকস কলঙ্কিত করতে পারেন?''