কলকাতা, 21 মে: কোভিড রুখতে রাজ্যে কার্যত লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনই অর্থাত্ গত সোমবার ধুন্ধুমার বাঁধে সিবিআইয়ের গতিবিধিতে ৷ নারদ মামলায় গ্রেফতার করা হয় চার হেভিওয়েট নেতাকে ৷ গ্রেফতার হন তৃণমূলের মন্ত্রিসভার দু জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের বিধায়ক মদন মিত্র ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়ক শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷ তাঁদের গ্রেফতারির পরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ টায়ার জ্বালিয়ে, পথ অবরোধ করে নেতাদের মুক্তির দাবি জানান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা ৷
ফিরহাদদের গ্রেফতারির পরই সটান নিজাম প্যালেসে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ সেখানেই প্রায় 6 ঘণ্টা ছিলেন তিনি ৷ তিনি যখন নিজাম প্যালেসের ভেতরে সিবিআই কর্তা ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত, তখনই নিজাম প্যালেসের বাইরে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভ চলছে ৷ সিবিআইয়ের দফতরে বোতল ছোড়া ও পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটে ৷ যার জেরে লাঠিচার্জও করতে হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ৷ এই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বিস্ফোরক টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ রাজ্যে অরাজকতা চলছে বলে তোপ দাগেন তিনি ৷ উত্তেজনার আগুনে জল ঢালতে টুইট করে সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন জানান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তবে জামিনের নির্দেশ না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা নিজাম প্যালেসের সামনেই অবস্থান করবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন সমর্থকরা ৷
সে দিনই সন্ধেয় ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত গ্রেফতার হওয়া চার নেতাকেই জামিনে মুক্তি দেন ৷ তবে এরপর আরও জটিল হয় এই নাটক ৷ মুক্তি পাওয়ার পরও ছাড়া হয়নি ধৃতদের ৷ সিবিআই আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সেই রাতেই হাইকোর্টে মামলা করে সিবিআই ৷ মামলা অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ারও আবেদন জানায় সিবিআই ৷ তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে জামিনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত ৷ জানানো হয় মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বুধবার ৷ ফলে রাত দেড়টার সময় নিজাম প্যালেস থেকে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয় চার হেভিওয়েট নেতাকে ৷ এরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্র ৷ তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমও ৷ ফিরহাদের জ্বর এলেও তাঁর কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসে ৷
আরও পড়ুন: জামিন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিচারপতিরা, 4 হেভিওয়েটকে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ
বুধবার প্রায় সওয়া দুঘণ্টা ধরে জোর সওয়াল জবাবের পরও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি ৷ বেনজিরভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে মামলায় যুক্ত করার আবেদন জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী ৷ গ্রেফতারির দিন মমতা নিজে নিজাম প্যালেসে উপস্থিত থেকে মামলায় চাপ সৃষ্টি করেছেন বলেও অভিযোগ করে সিবিআই ৷ দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর মামলার পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার হবে বলে জানায় আদালত ৷ তবে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনিবার্যকারণবশত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সে দিন বসছে না ৷ ফলে শুনানি হয়নি সে দিন ৷ মদন মিত্রের আইনজীবী নয়া বেঞ্চে মামলা স্থানান্তরিত করার আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ তবে তা খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, শুক্রবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চেই হবে জামিন মামলার শুনানি ৷
সেইমতোই আজ বেলা 11টায় শুনানি শুরু হয় হাইকোর্টে ৷ তবে সেখানেও জামিন নিয়ে মতবিরোধ দেখা যায় দুই বিচারপতির মধ্যে ৷ সেই কারণে চার নেতা-মন্ত্রীকে সিবিআই পাহারায় গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে এই মামলার নিষ্পত্তি হবে বলে জানায় আদালত ৷