কলকাতা, 19 মার্চ : জল, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, এলাকার পরিচ্ছন্নতা । মূলত এসব ইশু নিয়ে স্থানীয় স্তরের ভোট হয় । অর্থাৎ, পঞ্চায়েত বা পৌরভোট । 5 বছরে বিভিন্ন পৌরবোর্ড কেমন কাজ করেছে তার মূল্যায়ন হবে এবার । কারণ, সামনেই পৌরভোট । ভাগ্য নির্ধারণ হবে শতাধিক পৌরবোর্ডের । এমন একটা সময়ে বিভিন্ন বোরো-ওয়ার্ড কেমন কাজ করেছে তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মতামত নিচ্ছে ETV ভারত । প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিবেদন । আজ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কলকাতা পৌরনিগমের 7 নম্বর বোরো ।
কলকাতা পৌরনিগমের বোরো নম্বর 7-এর অধীনে রয়েছে মোট 9 টি ওয়ার্ড । 56, 57, 58, 59, 63, 64, 65, 66 ও 67 নম্বর ওয়ার্ড । ট্যাংড়া, চায়না টাউন, এন্টালি, ধাপা, চিংড়িঘাটা, সায়েন্স সিটি, শেক্সপিয়ার সরণি, ময়দান, হেস্টিংস, পার্কস্ট্রিট, মল্লিকবাজার, পার্কসার্কাস, তোপসিয়া, বেকবাগান, তিলজলা, বালিগঞ্জ, কসবার বেশ কিছু এলাকা এই বোরোর অধীনে রয়েছে । এই বোরোর অধীনস্থ এলাকাগুলিতে বস্তিবাসী থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সব ধরনের নাগরিকই বসবাস করেন । একদিকে রাস্তা, অলি-গলিতে আলো, পানীয় জল, জলনিকাশী ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী । অন্যদিকে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ।
64 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাধিক সমস্যা রয়েছে । সেখানে জলের প্রেসার অত্যন্ত কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের । এছাড়া পার্কিংয়ের সমস্যা, জল জমে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে ৷ 64 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এ কাচ্চি বলেন, " অনেক কিছুই হয়নি । রাস্তা ঠিকঠাক মেরামত হয় না । জল জমে যায়, এটাই প্রধান সমস্যা । যখনই বৃষ্টি হয় তখনই জল জমে যায় । কখনও কয়েক ঘণ্টা জমে থাকে কখনও রাতভর থাকে ।" আরও এক বাসিন্দা পরেশচন্দ্র দাস বলেন, "জলের সমস্যা আছে । রাস্তাঘাটের উন্নতি সেরকম কিছু দেখা যায়নি । যেটা ভেঙে আছে সেটা ভেঙেই আছে । পানীয় জলের খুব সামান্য প্রেসার । আমরা কর্পোরেশনে বহুবার বলেছি । ওরাও চেষ্টা করেছে, কিন্তু পেরে উঠতে পারেনি । গাছ এতও বেড়ে গেছে । বিগত দশ বছরে গাছের কোনও ট্রিমিং বা কাটিং হয়নি । লোকের বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে, পুরানো বাড়ির ক্ষতি হতে পারে । গাছ কাটা নিষিদ্ধ, ট্রিমিং করা তো নয় ।"
বোরোর বিভিন্ন এলাকায় জল জমার সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বোরো চেয়ারম্যান জীবন সাহাও । সঙ্গে বোরোর সার্বিকভাবে যতটা উন্নয়ন সম্ভব তা যথাসাধ্য করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি । বলেন, "2015 সালে বোরো চেয়ারম্যান হয়েছি আমি । আমরা আসার পরে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন, পার্ক, দূষণমুক্ত জ়োনের মতো বিভিন্ন কাজ হয়েছে । সমস্ত বোরো এলাকাতেই বিশদে কাজ হয়েছে । বোরোতে ওয়ার্ডভিত্তিক বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হচ্ছে । 66তে হয়েছে, 58তে হয়েছে, 57 তে হতে যাচ্ছে । ওয়াটারলগিংয়ে সমস্যা নিয়ে আমরা 59-এ কাজ করেছি, 66-এ কাজ করেছি । এখনও অনেক কাজ বাকি আছে । তবে সর্বোপরি বলতে পারি আমাদের বোরোতে বিশাল কাজ হয়েছে ।" তিনি আরও বলেন, "সমস্যা না থাকলে তো ভোট আসত না । আর আমাদের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতে হত না । সব সমস্যার সমাধান করা তো সম্ভব নয় । সারা কলকাতাজুড়ে পার্কিংয়ের সমস্যা । এটা একটা ক্রনিক ডিজ়িজ । এতে অনেক স্থানীয় বাসিন্দারা জড়িত থাকেন, তাই আমাদের অনেক সমস্যা ফেস করতে হয় । এছাড়া, 64 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল আহমেদ অসুস্থ । যার জন্য ওঁর যাতায়াতটা সেইভাবে হয় না । তাই আমরা ওটাকে স্পেশাল কেয়ার নিয়ে দেখি । জলের ডিমান্ড দিন দিন বাড়ছে । আমরা যে কল লাগাচ্ছি তার চাবিটা ভেঙে দিচ্ছে । সুতরাং, জল অপচয় হচ্ছে । আমাদের মেয়র প্রত্যেকটা ওয়ার্ডকে এক কোটি টাকার উপরে দিয়েছেন । একেবারে সব সমস্যার সমাধান হবে না । কিন্তু আমরা আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট চেষ্টা করেছি ।" তাঁর দাবি, বস্তির উন্নয়ন যথার্থ হয়েছে ।
যদিও উন্নয়নের কথা বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ স্বীকার করে নিলেও এখনও অনেক চাহিদাই মেটেনি ৷ 57 নম্বর ওয়ার্ডের মথুরবাবুর লেনে খালের ধারে রয়েছে বস্তি এলাকা । সেখানকার এক বাসিন্দা সঞ্জু মল্লিক বলেন, "এখানে এখন অনেক ভালো হয়ে গেছে । কল, জল, বাথরুম, পায়খানা, পাকা বাড়ি, পাকা রাস্তা হয়ে গেছে । অনেক কিছু হয়েছে ।" যদিও খালধারের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার ওপারের বাসিন্দাদের সব হলেও খালধারে বাথরুম, পানীয় জল নিয়ে সমস্যা রয়েছে । সেখানকার এক বাসিন্দা বেলপতি মণ্ডল বলেন, " আমাদের ঘরবাড়ি এখনও হয়নি । হবে হবে বলছে । অসুবিধা এখনও খালধারে ঝুপড়ি নিয়ে পড়ে আছি । বাথরুম হয়নি । খালে যেতে হয় । অনেক অসুবিধা হয় ৷ শুনেছিলাম এক কামরা করে ফ্যামিলি কোয়ার্টার দেবে । কই দিলো না তো এখনও ।"
এ বিষয়ে জীবনবাবু বলেন, " অর্থও তো একটা বড় ব্যাপার । খালটাকে যদি আমরা বল্লিপাইলিং না করি, রাস্তাটাকে মজবুত না করি তাহলে ওখানে কোনও ডেভলপমেন্ট করা যাবে না ৷ বাথরুম তো অনেক দূরের কথা । মানুষ খালের মধ্যে শৌচ করছে, এটা তো হাইজেনিক নয় । কিন্তু শৌচাগার বানাতে গেলে প্রথমে আমাকে জল ঢোকাতে হবে । ওখানে ড্রেনের লাইন করতে হবে । খালধারগুলি ন্যাচারাল কোর্সে উঁচুতে থাকে । পানীয় জল ওখানে ঢোকার কোনও স্কোপ থাকে না । আমরা টিউবওয়েল বসিয়ে ওখানকার সমস্যা মেটাবার চেষ্টা করেছি । খালধার ডেভলপ করতে গেলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন । তা না হলে খালধার ডেভেলপমেন্ট অসম্ভব ।" পাঁচ বছরে নিয়মমাফিক অনেক উন্নয়ন হয়েছে । তা সত্ত্বেও যে কাজগুলি এখনও বাকি রয়ে গেছে পরেরবার ক্ষমতায় এলে সেদিকেই নজর দেবেন বলে জানান জীবনবাবু ।
বোরো চেয়ারম্যান উন্নয়নের দাবি করলেও বিরোধীদের অভিযোগ, এলাকার উন্নয়ন কিছুই হয়নি । যা হয়েছে তা ব্যক্তি উন্নয়ন । CPI(M) নেত্রী কনীনিকা ঘোষ বলেন, " উন্নয়ন কী হয়েছে তা বর্তমানে তৃণমূল কাউন্সিলারদের দেখলে বুঝতে পারা যাবে । উন্নয়ন তাঁদের হয়েছে । প্রতিটি প্রশ্নে কাটমানি, তোলাবাজি, আজকে একদমই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে । একটা শৌচাগার উদ্বোধনও মাননীয়া দিদির অনুপ্রেরণা ছাড়া হয় না । আমরা মনে করি, যে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাতা থেকে নেমে এসেছিল কলকাতার ওয়ার্ডগুলোতে সেটা আজ আর নেই । এই উন্নয়নটা আজ আর হচ্ছে না কলকাতায় ।"