কলকাতা, 4 অগস্ট : পূর্ব ভারত, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা । পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া রয়েছে বাংলাদেশের বিস্তৃত সীমান্ত । বেকারত্ব এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত এই দুই বিষয়কে কাজে লাগিয়েই রাজ্যে জাল ছড়াচ্ছে জেএমবি (Jamaat-Ul-Mujahideen Bangladesh), আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী এবং এমনকি আইএসের (The Islamic State) মতো সংগঠন । মেধাবী অথচ বেকার যুবক এবং যুবতীই এদের লক্ষ্য । শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই জাল ছড়াচ্ছে এই সংগঠনগুলি তা নয় । একই সঙ্গে সমগ্র পূর্ব ভারতে জাল বিস্তার করছে ৷ নাশকতার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির কাছে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠছে সদর দফতর । কখনও সরাসরি আবার কখনও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই সমস্ত মেধাবী অথচ বেকার যুবক এবং যুবতীদের টার্গেট করছে এরা ।
চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (National Investigation Agency- NIA) এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (STF) গোয়েন্দাদের হাতে । সূত্র- কলকাতার উপকণ্ঠ থেকে সম্প্রতি এসটিফের হাতে গ্রেফতার হওয়া তিন জঙ্গি । গোয়েন্দারা উদ্বিগ্ন একথা ভেবে যে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর মগজ ধোলাইয়ের ফলে অকালে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক তরুণ-তরুণী ।
যেমন প্রজ্ঞা দেবনাথ । বাড়ি হুগলির ধনিয়াখালিতে । 2009 সালে আচমকাই বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় প্রজ্ঞা ৷ পরে 2016 সালে বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার হয় ৷ ততদিনে সে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের মহিলা সেলের নেত্রী ৷ নাম আয়েশা জন্নত মোহনা ।
আবার যেমন সুজিতচন্দ্র দেবনাথ ৷ 2014 সালে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার হয় সে । আল হানিফ, আবু ইব্রাহিম-সহ একাধিক পোশাকি নাম হয়েছিল অর্থনীতির ওই ছাত্রের । আইএসের প্রধান টুইটার হ্যান্ডেলার হিসাবে কাজ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে । তদন্তকারীদের অনুমান, এভাবে প্রতিবছর একাধিক মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে নিজেদের দলে টেনে মগজ ধোলাই করে জঙ্গি কাজকর্মে লিপ্ত করছে নিষিদ্ধ এইসব সংগঠনগুলি ৷
কলকাতা থেকে ধৃত তিন জেএমবি জঙ্গিকে জেরার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । এই বিষয় ইতিমধ্যেই এনআইএর সঙ্গে কথা বলেছে লালবাজার । ধৃত তিন জেএমবি সদস্যকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আইএস সংগঠনের মাথাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল । ইতিমধ্যেই মালদা, বীরভূম, মেদিনীপুর, উত্তর 24 পরগনা-সহ একাধিক জেলায় এখনও গা ঢাকা দিয়ে আছে স্লিপার সেলের একাধিক সদস্য । কলকাতা পুলিশের এসটিএফের এক গোয়েন্দার কথায়, "বেকার যুবক-যুবতীদের টার্গেট করে যে পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে এই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলি এগোচ্ছে তা রীতিমতো চিন্তার বিষয় ৷"
ইতিমধ্যেই জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ থেকে একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের মাথাদের কথোপকথন পেয়েছেন তদন্তকারীরা । জানা গিয়েছে, তাদের পরিকল্পনা দীর্ঘ । জানা গিয়েছে ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে খিলাফত শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ইসলামিক স্টেটের সাহায্য নিচ্ছে বাংলাদেশের একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতারা ৷ কিন্তু এই শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে তাদের সাফল্যের পথের প্রথম কাঁটা যে ভারত তথা বাংলা তা ইতিমধ্যেই এনআইএ জানতে পেরেছে ৷ তাই এখন তাদের উদ্দেশ্য একাধিক জঙ্গি সংগঠনকে একত্রিত করে ভারতকে পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে চাপে ফেলা । পাশাপাশি বাংলায় জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেলের সদস্যদের ব্যবহার করতে চায় জেএমবি । কারণ সাফল্যের পথ আরও প্রশস্ত করে দিতে পারে এই স্লিপার সেলের সদস্যরা । তাই জঙ্গিরা ভারত তথা বাংলার মেধাবী বেকার যুবক-যুবতীদের টার্গেট করছে নিজেদের আখের গোছাতে ৷
এনএসজির (National Security Guard) প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ড্যান্ট দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, "যে কোনও বড় পুলিশ আধিকারিক কিংবা এজেন্সি দিয়ে এই বিষয়ের মোকাবিলা প্রায় অসম্ভব । বরং কাজে লাগাতে হবে নিচুস্তরের পুলিশ কর্মীদের ৷ এলাকা চিনতে হবে । সাধারণ মানুষের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে গিয়ে খুঁটিনাটি খবরাখবর তুলে আনার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত রাজ্য পুলিশের কনস্টেবলদের । কিন্তু তা এরাজ্যে সেভাবে হয় না । পুলিশের সংখ্যা হাতে গোনা । তাও আবার আইন-শৃঙ্খলার ডিউটিতে দিন শেষ হয়ে যায় তাঁদের । ফলে স্লিপার সেলের কাজ করতে তাঁরা প্রায় অক্ষম ৷"
আরও পড়ুন : Newtown Pornography : নিউটাউন পর্নোগ্রাফি-কাণ্ডে পুলিশের জালে মডেল কো-অর্ডিনেটর