কলকাতা, 31 অক্টোবর : প্রায় দু’বছর হাতে কোনও কাজ ছিল না ৷ রোজগারের কোনও ব্যবস্থাই করে উঠতে পারেননি দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর রোডের (Manohar Pukur Road) বাসিন্দা অরবিন্দ বাজাজ (47) ৷ তাঁর দাবি, উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে একটা টাকাও দিতে পারছিলেন না তিনি ৷ আর সেই কারণেই তাঁকে স্ত্রীর বাধ্য হয়ে থাকতে হত তাঁকে ৷ অরবিন্দর অভিযোগ, স্ত্রী তাঁর দুঃসময়ের সুযোগ নিচ্ছিলেন ৷ আর তাতে ইন্ধন দিচ্ছিলেন তাঁর বাপের বাড়ির সদস্যরা ৷ দিনের পর দিন এই ঘটনা মেনে নিতে না পেরেই স্ত্রীকে খুন করেন অরবিন্দ ৷ স্ত্রীর ‘ঔদ্ধত্য’ তাঁর সহ্য হচ্ছিল না বলে জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Murder : স্ত্রী-মেয়েকে কুপিয়ে পুলিশে ফোন ব্যক্তির
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে বাড়িতেই খুন হন প্রিয়াঙ্কা বাজাজ (45) ৷ ধারাল ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে ৷ যিনি এই কাণ্ড ঘটান, তিনি আর কেউ নন, প্রিয়াঙ্কার স্বামী অরবিন্দ ৷ এমনকী, খুনের পর 100 নম্বরে ফোন করে নিজেই পুলিশকে সব কথা জানান তিনি ৷ আত্মসমর্পণ করেন পুলিশের কাছে ৷ সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, অরবিন্দ তাঁর মেয়েকেও (17) খুনের চেষ্টা করেন ৷ সম্বিত ফিরলে বুঝতে পারেন, ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন তিনি ৷ মেয়েকে বাঁচানোর জন্য সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করেন ওই ব্যক্তি ৷
শনিবার রাতভর অরবিন্দকে জেরা করে পুলিশ ৷ জেরায় ওই ব্যক্তি জানান, আগে রাজস্থানের একটি আইটি কোম্পানিতে কাজ করতেন তিনি ৷ রোজগার হত ভালোই ৷ কিন্তু, পরে চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন ৷ যোগ দেন শহরেরই একটি ছোট সংস্থায় ৷ কিন্তু লকডাউনে চাকরি চলে যায় অরবিন্দর ৷ প্রাথমিকভাবে সঞ্চয় ভেঙেই সংসার চালানোর চেষ্টা করেন তিনি ৷ কিন্তু, একসময় ভাঁড়ারে টান পড়ে ৷ সেই সময় থেকেই বাপের বাড়ির সদস্যদের কাছে হাত পাততে শুরু করেন অরবিন্দর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ৷ বস্তুত, প্রিয়াঙ্কার বাবা ও ভাইদের টাকাতেই দিন গুজরান করতে হত বাজাজ পরিবারকে ৷
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আনলক পর্ব শুরু হলেও অরবিন্দ সেভাবে কাজের চেষ্টা করছিলেন না ৷ আর এই নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্য অশান্তি হত ৷ উপরন্তু, প্রিয়াঙ্কার বাপের বাড়ির লোকজন চাইছিলেন, তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে এখানেই থাকুন ৷ অরবিন্দর তাঁর সংসারের শ্বশুরবাড়ির এই হস্তক্ষেপ সহ্য হচ্ছিল না ৷ মনোহরপুকুর রোডের একটি আবাসনের তিনতলায় থাকতেন তাঁরা ৷ শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ সেই ফ্ল্যাটেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ফের ঝগড়া শুরু হয় ৷ রাগের মাথায় ধারাল ছুরি দিয়ে স্ত্রীকে কোপাতে শুরু করেন অরবিন্দ ৷ পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমেই স্ত্রী বুকের বাঁদিকে কোপ মারেন ৷ তারপর শুরু হয় এলোপাথাড়ি হামলা ৷ এই সময় মাকে বাঁচাতে ছুটে আসে মেয়ে ৷ ফলে বাবার ছুরির কোপে মারাত্মক জখম হয় ওই কিশোরীও ৷
আরও পড়ুন : Gariahat Double Murder : ভিকিকে অর্থ সাহায্য করছে কে, তার খোঁজে হন্যে পুলিশ
অরবিন্দ পুলিশকে জানিয়েছেন, মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসেন তিনি ৷ কিন্তু, ঘটনার সময় মেয়ে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে দেখে আরও বেশি রেগে গিয়েছিলেন অরবিন্দ ৷ আর সেই কারণেই মেয়েকেও রেয়াত করেননি তিনি ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর বুকে, গলায়, হাতে ও পায়ে আঘাত লেগেছে ৷ আপাতত এসএসকেএমে তার চিকিৎসা চলছে ৷ অরবিন্দর ফোন পাওয়ার পর শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রবীন্দ্র সরোবার থানার পুলিশ ৷ ঘটনাস্থল থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ৷ বাজেয়াপ্ত করা হয় মার্ডার ওয়েপন ৷ ঘটনাস্থলের ভিডিয়োগ্রাফিও করে পুলিশ ৷