কলকাতা, 15 এপ্রিল: কোরোনায় রাজ্যে মোট আক্রান্ত 132, গত 24 ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন 17 জন ৷ তবে রাজ্যবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই, অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠছেন ৷ রাজ্যবাসীকে ভরসা জোগাতে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘যদি আমার কোরোনা হয়, তাহলে কি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেবেন?’’
রাজ্যে কোরোনা সংক্রমণ ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল ৷ সেই বৈঠক থেকেই এই তথ্য জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা ৷
ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে আগেই চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ আজ তিনি বলেন, ‘‘ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করছি ৷ তাঁদের ঠিকানা পেলেই অল্প কিছু টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে যাতে তাঁরা অন্তত খাবার কিনে খেতে পায় ৷ ঘুরতে গিয়েও যারা আটকে পড়েছেন, তাঁদেরকেও একইভাবে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে ৷’’
রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য তিনি বলেন, ‘‘ছোটো নির্মাণ, রাস্তার কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হবে যাবতীয় সতর্কতা বজায় রেখে ৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ইটভাটাতেও কাজ শুরু করা হবে ৷ 100 দিনের কাজও শুরু করা যেতে পারে ৷ তবে মাস্ক বাধ্যতামূলক ৷’’
রবিশস্য ফলনের সময় প্রায় অতিক্রম হয়ে এসেছে ৷ জমিতে ফলে থাকা রবিশস্য কাটতেও তেমন কোনও বাধা নেই বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের তরফ থেকে জুটমিল খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ 18টি জুটমিলের তালিকা পাঠিয়েছে তারা ৷ তবে কেবল 18টি চটকল খুললে বাকি শ্রমিকরা মাইনে পাবেনা ৷ তাই সবকটি চটকলই খোলা হবে 15 শতাংশ শ্রমিক নিয়ে ৷’’
তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন রাজ্যের কোথাও কোনও কোরোনা সংক্রমণ বা সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধার কথা জানতে পারলে খবর করার আগে একবার সরকারকেও জানান ৷ 1070 নম্বরে ফোন করে কোরোনা ভাইরাস কন্ট্রোলরুমে যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে পারবেন ৷
স্বাস্থ্যকর্মীদের কেন বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি অনুরোধ করেন যাতে তাঁদের কোনও প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই বিষয়ে নজর দিতে ৷
কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের দেহ পোড়াতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করেও তিনি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘চিকিৎসক ও গবেষকরা বলেছেন কোরোনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ পোড়ালে তা থেকে জীবাণু ছড়ায় না ৷ তাই আপনারা নিশ্চিত থাকুন ৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি পলিটিক্সের থেকে মানবিকতাতে বেশি বিশ্বাসী ৷ যাঁরা কাজে বাধা দিচ্ছেন বা নির্দেশ মানছেন না, সরকার চাইলেই তাঁদের জেলে ভরতে পারে ৷ কিন্তু আমরা তা করছিনা ৷’’
স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি ফিরতে বাধা দেওয়া ও হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করে তিনি রাজ্যের মহিলাদের অনুরোধ করেন গ্রামে গ্রামে বঙ্গজননী গ্রুপ গড়ে তোলার ৷ রানাঘাটের যে নার্সকে বাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সরকারের তরফ থেকে তাঁকে সরকারি আবাসনে থাকতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
জামুড়িয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি রাজ্যের ডি.এম ও এস.পিদের অনুরোধ করেন যাতে ভিড় এলাকায় কোয়ারান্টাইন সেন্টার তৈরী না করা হয় ৷ "42 জন সুস্থ হয়ে গেছেন ৷ একটাও ভেন্টিলেটর লাগেনি ৷ যাঁরা শেষ মুহুর্তে আসছেন, তাদের কীভাবে বাঁচাব? সবাই চায় সুস্থ করতে ৷ আমাদের চিকিৎসকরা কোনও গাফিলতি রাখছেন না চিকিৎসায় ৷" বলেন মমতা ৷
তাঁর কথায়, যারা টিবি বা শ্বাসকষ্টজনিত কোনও রোগে ভুগছেন, তাঁদের খুব সাবধানে থাকতে অনুরোধ করেছি ৷ কোরোনা মোকাবিলায় বেলেঘাটা আইডি ও উত্তরবঙ্গ হাসপাতালের প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷