কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর : দুর্যোগের আশঙ্কায় অসহায় কলকাতাবাসী ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত শহরের পুলিশ প্রশাসনও ৷ লালবাজার (Lal Bazar) সূত্রে খবর, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মাথায় রেখেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি সেরে রেখেছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) ৷ ইতিমধ্যেই নগরপাল (Commissioner of Police) সৌমেন মিত্রের (Soumen Mitra) সঙ্গে জরুরি বৈঠক সেরে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ন’টি বিভাগের ডেপুটি কমিশনাররা ৷ হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহান্তে এবং আগামী সপ্তাহের শুরুতেই যদি প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়, তাহলে কীভাবে তা সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়েই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় ৷
আরও পড়ুন : Weather Forecast : রবিবার থেকে টানা তিনদিন ভারী বৃষ্টি, বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা
এদিকে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ইতিমধ্যেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ৷ আবহবিদদের হিসাব বলছে, রবিবার সন্ধ্যায় তা ওড়িশা উপকূলে পৌঁছে যাবে ৷ গোপালপুর ও বিশাখাপত্তনমের মধ্যবর্তী কলিঙ্গপত্তনম দিয়ে ঢুকবে স্থলভাগে ৷ অন্যদিকে, রবিবার থেকে সোমবারের মধ্যে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে পূর্ব-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ৷ এটি ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে আসবে ৷ আর এই জোড়া ফলার প্রকোপেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় ৷
সমস্যা হল, ইদানীংকালে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা মারাত্মক বেড়েছে ৷ ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এর জন্য দায়ী মানুষই ৷ প্রকৃতির উপর লাগাতার অত্যাচারেরই খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষকে ৷ কলকাতা তথা গোটা রাজ্যেও বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই ৷ প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই নিয়ম করে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ সবথেকে দুর্ভোগের বিষয় হল, বৃষ্টিতে জল জমছে এবং সেই জল লাগাতার কয়েক দিন জমে থাকছে ৷ এর জন্য শহরের বেহাল নিকাশিব্যবস্থাকেই দুষছে আমজনতা ৷ বাড়ছে ক্ষোভ ৷ জমা জলে দুর্ভোগের পাশাপাশি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও বাড়ছে ৷ তাতে মুখ পুড়ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ৷ এমনকী, এখনও কলকাতার বহু এলাকা থেকে বৃষ্টির জমা জল নামেনি ৷
এই অবস্থায় ফের যদি ভারী বৃষ্টি শুরু হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা শহরবাসীর ৷ সমস্যা যে গভীর, তা পুলিশ প্রশাসনও বিলক্ষণ বুঝছে ৷ আর সেই কারণেই এত তৎপরতা ৷ লালবাজারের সূত্র বলছে, নগরপালের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের প্রতিনিধিরাও ছিলেন ৷ দুর্যোগের সময় মানুষের কাছে যাতে দ্রুত সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে খোলা হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর ৷ পাশাপাশি 22 টি বিশেষ ইউনিটকে প্রস্তুত রেখেছে লালবাজার ৷ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন নগরপাল ৷ তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে এই বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন পুলিশের কর্মী ও আধিকারিকরা ৷
আরও পড়ুন : Water Crisis : পাঁচ দিন ধরে জলমগ্ন দক্ষিণ কলকাতা, পানীয় জলের তীব্র সংকট
জমা জলে রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে উদ্ধারকাজে সমস্যা তৈরি হয় ৷ তাই আপাতত শহরের রাস্তায় অযথা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ এছাড়া, শহরের 25 টি ট্র্যাফিক কিয়ক্সের ওসি-দের রাস্তায় থাকতে বলা হয়েছে ৷ জমা জলের জন্য যাতে যানজট না হয়, তার জন্য বৃষ্টির দিনগুলিতে রাস্তায় অতিরিক্ত সার্জেন্ট নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ পাশাপাশি, লালবাজারের কন্ট্রোল রুমকে কলকাতা পৌরনিগমের আধিকারিকদের সঙ্গেও 24 ঘণ্টা সমন্বয় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ এর পাশাপাশি সিইএসসি-র আধিকারিকদের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন লালবাজারের কর্তারা ৷ বৃষ্টির জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঠেকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী এই বেসরকারি সংস্থাকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷