কলকাতা, 29 জুলাই : কথায় কথায় আদালতকে টেনে আনলে উপযুক্ত পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Calcutta High Court Justice Abhijit Ganguly) ৷ কার উদ্দেশ্যে তিনি এই কথা বলেছেন, সেই নাম অবশ্য উল্লেখ করেননি ওই বিচারপতি ৷ শুধু উল্লেখ করেছেন ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি’ বলে ৷ কিন্তু ঘটনাক্রম বলছে যে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় আসলে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Bengal CM Mamata Banerjee) ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) একাধিক মামলা হয়েছে ৷ এসএসসি (SSC Recruitment) থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ (Primary Recruitment), প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ যার জেরে সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ৷ তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) একাধিক ফ্ল্যাট থেকে সব মিলিয়ে প্রায় 50 কোটি টাকা ও আরও অনেক সামগ্রী উদ্ধার করেছে ইডি ৷
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার (Bengal Recruitment Scam) শুনানি হয় ৷ সেই শুনানিতেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আদালতকে কথায় কথায় টেনে আনার আগে সতর্ক থাকা উচিত যেকোনও ব্যক্তির । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিচারালয়কে বারবার টেনে আনলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।"
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে জনসভায় বলতে শোনা গিয়েছে যে রাজ্যে 18 হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য ৷ সেই শূন্যপদে নিয়োগে প্রস্তুত রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু আদালতে মামলা চলায় ওই নিয়োগ করা যাচ্ছে না ৷ গত 21 জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে একই দাবি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারের হলফনামা চায় কলকাতা হাইকোর্ট ৷ শুক্রবার সেই হলফনামা রাজ্য সরকারের তরফে পেশ করা হয় আদালতে ৷ হাইকোর্ট সূত্রে খবর, হলফনামায় রাজ্য জানিয়েছে যে প্রাথমিকে 3936টি শূন্যপদ রয়েছে ৷ মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় 21694টি শূন্যপদ রয়েছে । এর মধ্যে নবম-দশমে 13842টি, একাদশ-দ্বাদশে 5527টি শূন্যপদ রয়েছে ৷ এছাড়া 2325 প্রধান শিক্ষক নিয়োগও বকেয়া রয়েছে ৷
প্রাথমিকের ক্ষেত্রে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ৷ এক্ষেত্রে দায় চাপানো হয়েছে ডিরেক্টর অফ এডুকেশনের উপর ৷ রাজ্যের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে ডিরেক্টর অফ এডুকেশন তথ্য না দেওয়ায় এই নিয়োগ করা যায়নি ৷ এই নিয়ে ডিরেক্টর অফ এডুকেশনকে 17 অগস্ট হলফনামা দিতে বলেছেন বিচারপতি ৷
রাজ্যের তরফে হলফনামায় জানানো হয়েছে, নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোনও মামলা এই মুহূর্তে নেই ৷ এর পরই কড়া বার্তা দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ একই সঙ্গে তিনি শিক্ষক নিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি ৷