কলকাতা, 20 ডিসেম্বর : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান আগামী 24 ডিসেম্বর । সমাবর্তনে উপস্থিত থাকার কথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের । ইতিমধ্যেই সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্র বিলির কাজ শুরু হয়ে গেছে । আমন্ত্রণপত্রে সাম্মানিক D.Litt, D.Sc প্রাপকদের নাম ছাড়াও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীপ ধনকড়ের নামও । আর এরই মধ্যে সমাবর্তনে রাজ্যপালকে বয়কটের ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন । রাজ্যপালকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চান না, এই মর্মে উপাচার্যকে চিঠিও দিয়েছে একাধিক ছাত্র সংগঠন । এই পরিস্থিতিতে সমাবর্তন স্থগিত করা যায় কিনা তা নিয়ে আজ অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । সমাবর্তন স্থগিত রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল জরুরি ভিত্তিতে কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছে কর্তৃপক্ষ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে SFI-এর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল কমিটি । তাদের বক্তব্য, "আগামী 24 ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা আমাদের 'অভিভাবক'(!) আচার্য ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের । তাঁর বিভিন্ন কার্যক্রমে গত কয়েক মাসে এটা স্পষ্ট যে তিনি BJP, RSS-এর দালালি করে ফ্যাসিবাদের একনিষ্ঠ প্রচারকের ভূমিকাই পালন করে আসছেন লাগাতার । সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমাদের আহ্বান যে, একসঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাঙ্গাবাজির সমর্থক এই রাজ্যপালকে বয়কট করি । কালো পতাকা ও কালোব্যাজ পরে আমরা আওয়াজ তুলব CAA, NRC, NPR-এর বিরুদ্ধে, এর সমর্থক সমস্ত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে। আওয়াজ তুলব দেশজুড়ে চলা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে । জগদীপ ধনকড়দের বিরুদ্ধে ।"
রাজ্যপালকে সমাবর্তনে চান না এই মর্মে আজ উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখাও । TMCP-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "আমরা উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি এই মর্মে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমরা মাননীয় আচার্যকে চাই না । বর্তমানে যা পরিস্থিতি, সারা দেশে ছাত্রদের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ যেভাবে অত্যাচার করছে, শান্তিপূর্ণ অবস্থানে লাঠিচার্জ করছে, ছাত্রসমাজকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে, সেই জায়গা থেকে আচার্য যেভাবে তাঁর মতামত ব্যক্ত করছেন, তাতে তাকে BJP-র কর্মী ও প্রচারক হিসেবেই দেখছি আমরা । আমরা চাই না সমাবর্তন বাতিল হোক । আমরা চাই সুস্থ, স্বাভাবিকভাবেই সমাবর্তন হোক । সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে মনে করেছি, উনি আসলে একটা উত্তেজনা তৈরি হতে পারে । এটা যেমন ওনার জন্যও অপমানজনক, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও অপমানজনক হবে । ওনাকে আমরা চাইছি না । উনি আসতেই পারেন ।"
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পড়ুয়া বিক্ষোভের আশঙ্কাতেই বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । আজ এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । সমাবর্তন স্থগিত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল জরুরি ভিত্তিতে কর্মসমিতির বৈঠকও দেখেছে ডেকেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । আগামীকাল দুপুর 1টায় শুরু হবে বৈঠক । সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে । সূত্রের খবর, সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বিশেষ সমাবর্তন স্থগিত রাখার । বিশেষ সমাবর্তনে আচার্যের ভাষণ দেওয়ার কথাও রয়েছে । সাম্মানিক D.Litt, D.Sc বিশেষ সমাবর্তনেই প্রদান করা হয় । শুধুমাত্র পড়ুয়াদের ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠান হতে পারে সকাল সাড়ে 11টা থেকে । উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে বাবুল সুপ্রিয়র ক্যাম্পাসে আসা নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেখানে তাঁকে উদ্ধার করতে আসতে হয়েছিল রাজ্যপালকে । সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চায় না বিশ্ববিদ্যালয় ।