কলকাতা, 29 অগাস্ট: বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আপাতত দিতে হবে না বর্ধিত বেড চার্জ। যে রোগীর চিকিৎসার খরচ নগদে প্রদান করা হবে, তার ক্ষেত্রে ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা-সামগ্রীর উপর দেওয়া হবে বিশেষ ছাড়। শুক্রবার ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এর সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (AHEI)-র বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচে রাশ টানতে এর আগে 10 টি অ্যাডভাইসরি ইশু করেছিল WBCERC। একই উদ্দেশ্যে গত 22 অগাস্ট রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশন আরও 5 টি অ্যাডভাইসরি ইশু করেছে। এই 5 টি অ্যাডভাইসরি নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিল AHEI। শুক্রবার, 28 অগাস্ট বিকালে স্বভূমিতে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের পরে AHEI-এর প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, এদিনের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। যে সব রোগীর চিকিৎসার খরচ নগদে প্রদান করা হবে, সেই সব রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা-সামগ্রীর উপর ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম বেশি। এই বিষয়টি কমিশনের তরফে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক একটি অ্যাডভাইসরিতে 2020-র 1 মার্চের রেট অনুযায়ী বেড চার্জ নেওয়ার কথা বলেছে কমিশন। আগামী 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রেট অনুযায়ী বেড চার্জ নেওয়ার জন্য কমিশনের তরফে আর্জি জানানো হয়েছে। তার পরে বেড চার্জের বিষয়টি কমিশন পুনর্বিবেচনা করবে বলে জানানো হয়েছে। AHEI-র তরফে জানা গিয়েছে, 2020-র 1 মার্চের রেট অনুযায়ী এখন বেড চার্জ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত 22 অগাস্ট কমিশনের 5 টি অ্যাডভাইসরি ইশু হওয়ার জেরে ওই দিনই AHEI-র তরফে জানানো হয়েছিল, প্রতিটি ফিনান্সিয়াল ইয়ারের শেষে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিভিন্ন খরচের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এর পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচের পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। তবে, কখনওই তা 5-10 শতাংশের বেশি হয় না। পুনর্মূল্যায়নের পরে নতুন খরচ ধার্য করা হয় প্রতি বছরের 1 এপ্রিল থেকে। চলতি বছরেও এটাই করা হয়েছে, COVID-19-এর চিকিৎসার জন্য বেড চার্জ বাড়ানো হয়নি। এদিকে, AHEI-র তরফে আরও জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকে 2020-র 1 মার্চের রেট অনুযায়ী বেড চার্জ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ায় বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যে বেড চার্জ নেওয়া হচ্ছে, তা থেকে 5-10 শতাংশ বেড চার্জ কমে যাবে।
গত 22 অগাস্ট অ্যাডভাইসরি ইশু করে কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "হাসপাতালগুলিতে ওষুধের চার্জ করা হচ্ছে MRP-তে। হাসপাতালের ফার্মাসিতে অন্ততপক্ষে 10 শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথবা, রোগীর পরিজনদের সুযোগ দেওয়া হোক তিনি বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে আসবেন।" গত 22 অগাস্ট কমিশনের 14 নম্বর COVID অ্যাডভাইসরিতে তুলো, গ্লাভস, ইনজেকশন সিরিঞ্জ সহ বিভিন্ন চিকিৎসা-সামগ্রীর কথা বলা হয়েছে। গত 22 অগাস্ট এই বিষয়ে কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেছিলেন, "এ সব ক্ষেত্রেও অসম্ভব বড় মার্জিন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে 20 শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা আমরা বলছি।" এ দিনের বৈঠকে এই দুই ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ নগদে প্রদান করা রোগীদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনের বৈঠকের পরে জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে গত 1 এপ্রিল থেকে বেড চার্জ রিভাইসড করা হয়েছে। এর ফলে পুরোনো বেড চার্জে ফেরত যেতে সমস্যা হচ্ছে বলে শুক্রবারের বৈঠকে জানানো হয়েছে। কমিশনের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছে, নন-কোভিড পিরিয়ডের জন্য 1 মার্চ, 2020-কে বেছে নেওয়া হয়েছে। COVID-19-এর এই পরিস্থিতি থেকে যাতে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় তার জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তার পরে এই বেড চার্জের বিষয়টি নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচনা করা হবে। কমিশনের অ্যাডভাইসরি অনুযায়ী চিকিৎসা-সামগ্রীতে 20 শতাংশ এবং ওষুধে 10 শতাংশ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সমস্যার কথা এ দিনের বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালগুলির তরফে জানানো হয়েছে। বিমা সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও জাননো হয়েছে। কমিশনের তরফে বৈঠকে জানানো হয়েছে, কর্পোরেট এবং ইন্সুরেন্স ক্লায়েন্ট (রোগী)-দের ক্ষেত্রে এই অ্যাডভাইসরি লাগু হবে না। কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যায় না বলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির তরফে জানানো হয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে কমিশন কথা বলবে।
এই প্রথম WBCERC-এর সঙ্গে বৈঠকে বসল AHEI। শুক্রবারের বৈঠকে দুই পক্ষ একটি বিষয়ে সম্মত হয়েছে যে, COVID-19 পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য WBCERC এবং AHEI একসঙ্গে কাজ করবে, একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা দেখা দিলে দুই পক্ষ আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেবে।