মালদা, 1 ডিসেম্বর : উত্তরবঙ্গ সফর শেষে কলকাতা ফেরার পথে ফের একবার রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন ইশুতে বিঁধলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ তিনি আজ সাফ জানিয়ে দেন, এক মাসের দার্জিলিং সফরে তিনি GTA নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখেছেন ৷ কলকাতা ফিরে তিনি এ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য় দুই সরকারের সঙ্গেই আলোচনা করবেন ৷ পাশাপাশি কৃষকনিধি প্রকল্প নিয়েও রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন রাজ্য়পাল ৷ সমালোচনা করেন পুলিশ প্রশাসনেরও ৷ নিজেকে সংবিধানের প্রহরী দাবি করে, তাঁর মন্তব্য, "সংবিধান রক্ষায় কাজ করে যাব ৷"
আজ প্রায় একমাস পর উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতায় রাজভবনে ফিরছেন রাজ্য়পাল জগদীপ ধনকড় ৷ আর ফেরার পথে মালদা স্টেশনে GTA নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা গেল তাঁকে ৷ তিনি বলেন, “GTA-র জন্য প্রচুর টাকা বরাদ্দ করা হয় ৷ কিন্তু আমি সেখানে দেখেছি, GTA-র অডিটই হয়নি ৷ কোথায় কত টাকা খরচ হয়েছে, কেউ জানে না ৷ মানুষ আমার কাছে দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে ৷ পাহাড়ের মানুষ এখনও ঠিকমতো পানীয় জল পায় না ৷ সেই ব্যবস্থা সেখানে করা হয়নি ৷ তাই খুব তাড়াতাড়ি GTA-র অডিট করতেই হবে ৷ আমি আজ কলকাতা যাচ্ছি ৷ কলকাতা ফিরেই আমি এব্যাপারে ব্যবস্থা নেব ৷ পাহাড়ে একশোর বেশি পঞ্চায়েত রয়েছে ৷ অথচ দু’দশক ধরে পাহাড়ের মানুষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি ৷ তাদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নেই ৷ অথচ ভোট দেওয়া মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ৷ এনিয়েও আমি কেন্দ্র ও রাজ্য় সরকারকে জানাব ৷”
কিষাণনিধি প্রকল্প নিয়েও আজ রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন রাজ্যপাল ৷ তিনি বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যদি সুসম্পর্ক না থাকে তবে মানুষকে তার ফল ভোগ করতে হয় ৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণনিধি সম্মান প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছেন দেশের প্রত্যেক কৃষক ৷ একজন কৃষক প্রতি বছর এই প্রকল্পে ছ’হাজার টাকা পাচ্ছেন ৷ সেই হিসাবে এই রাজ্যের প্রত্যেক কৃষকেরও এতদিনে ১২ হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল ৷ গোটা রাজ্যের কৃষকদের জন্য ৮৪০০ কোটি টাকা এখানে আসার কথা ছিল ৷ কিন্তু রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় এখানকার কৃষকরা এখনও এক টাকাও পাননি ৷ শুধুমাত্র সংকীর্ণ রাজনীতির জন্য দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা এই সুবিধে থেকে বঞ্চিত ৷
এদিন কলকাতা ফেরার আগে রাজ্যপাল আবারও পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন ৷ তিনি বলেন, “এই রাজ্যে এখন পুলিশ ও প্রশাসনের অবস্থা খুবই খারাপ ৷ এখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলে, তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অ্যাকশন মোডে চলে যায় ৷ আমি সরকারি আধিকারিকদের অনেক অনুরোধ করেছি ৷ তাঁদের আবেদন করেছি, তাঁদের কাজ ভারতীয় গণতন্ত্র অক্ষুন্ন রাখা ৷ আইন এবং সংবিধানকে সম্মান জানানো সরকারি কর্মীদের দায়িত্ব ৷ কোনও রাজনৈতিক দলের কথা মেনে চলা, তাদের কথায় প্রশাসন চালানো সরকারি আধিকারিকদের কাজ নয় ৷ কিন্তু এই রাজ্যে সরকারি কর্মীদের বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের কথামতো চলতে বাধ্য করা হয় ৷ এখানে সরকারি ক্ষেত্রে পুরোপুরি রাজনীতিকরণ হয়ে গিয়েছে ৷”