কলকাতা, 11 অগাস্ট : অগ্রিম 80 হাজার টাকা দিয়েছিলেন পরিজনরা । কিন্তু তিন লাখ টাকা না দিলে কোরোনা রোগীকে ভরতি নেওয়া হবে না, অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । এই অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে থাকে রোগী । টাকার জন্য ছুটোছুটি শুরু করেন পরিজনরা ৷ এভাবে বিনা চিকিৎসায় ঘণ্টা দেড়েক পড়ে থেকে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় রোগীর । রোগীর পরিবারের সদস্যরা এমন অভিযোগই তুলছেন EM বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে । ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করছেন পরিজনরা । এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগী ভরতির জন্য 80 হাজার টাকা দিয়ে বেড বুক করা হয়েছিল । কিন্তু রোগীকে যখন হাসপাতালে আনা হয় ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে । মৃতকে ভরতি নেওয়া হয়নি । বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ।
রোগী তমলুকের বাসিন্দা । 60 বছর বয়সি প্রৌঢ়া ৷ দিন তিনেক আগে প্রৌঢ়ার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে কোরোনায় । সম্প্রতি প্রৌঢ়াও অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে কলকাতার পার্কসার্কাস অঞ্চলের একটি নার্সিংহোমে ভরতি করা হয় । সোমবার প্রৌঢ়ার কোরোনা টেস্টের রিপোর্টে জানা যায়, তিনি পজ়িটিভ । জানা গিয়েছে, ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রোগীর চিকিৎসা চলছিল । এর মধ্যে সোমবার রাত ন'টা নাগাদ EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালে রোগীকে ভরতি করাতে নিয়ে যাওয়া হয় । অভিযোগ, কোরোনা রোগীর ভরতির জন্য হাসপাতাল তিন লাখ টাকা দাবি করে । ওই টাকা না দিলে রোগীকে ভরতি নেওয়া হবে না বলে জানানো হয় । যদিও আগেই 80 হাজার টাকা দিয়ে বেড বুক করা হয়েছিল ৷
এই বিষয়ে মঙ্গলবার ক্ষোভ উগরে দেন মৃত রোগীর ছেলে ৷ তিনি বলেন, "টাকার জন্য খুন করল হাসপাতাল । আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করছি ।"
তিনি আরও বলেন, "সোমবার বিকালে যখন ওই হাসপাতালে কথা বলতে যাই, তখন 80 হাজার টাকা জমা করেছিলাম । মাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, তখন আরও টাকা দিতে বলা হল । আমি বললাম, টাকা যা লাগে আমি দিচ্ছি, আগে রোগীর চিকিৎসা করান । হাসপাতালকে বলি, ক্রেডিট লিমিট শেষ হয়ে গিয়েছে । রাত 12 টা না বাজলে আর টাকা দিতে পারব না, রাত 12 টা পর্যন্ত সময় দিন । হাসপাতাল থেকে বলা হয়, টাকা না দিলে অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগীকে নামানো হবে না । আমি বলি রোগীর সিরিয়াস অবস্থা । পায়ে ধরছি ।"
রোগীর ছেলে বলেন, "দাদা দুবাইয়ে থাকেন। উনি যাবতীয় খরচ দিচ্ছিলেন । দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করি । দাদা বলেন, বাইরে আছেন, একঘণ্টা পরে টাকা দিচ্ছেন । এক ঘণ্টা অপেক্ষা করল না হাসপাতাল ।"
এদিকে ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ওই রোগীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এর পাশাপাশি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল ৷
একটি বিবৃতিতে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, "একজনের মায়ের মৃত্যু হয়েছে, এটা দুঃখের বিষয় । কিন্তু, রোগীকে ভরতি করানোর জন্য পরিজনরা সোমবার বিকালেই বেড বুক করেছিলেন । আবার টাকা নেওয়া হবে কেন ! রোগীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল । চিকিৎসকরা দেখেছেন । CPR দিয়েও রোগীকে রিভাইভ করানো যায়নি । আইন অনুযায়ী বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় । মৃত রোগীকে নিয়ে পরিজনরা চলে যেতে চেয়েছিলেন । হাসপাতালের তরফেই আটকে দেওয়া হয় । বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় ।"