কলকাতা, 27 মে: এবারের জামাইষষ্ঠীতে জামাইদের পাত থেকে উধাও হতে পারে আম,জাম, কাঁঠাল থেকে শুরু করে ইলিশ বা চিংড়ি । জামাই আদরে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কোরোনা-আমফান ৷ একেই কোরোনার প্রকোপে গৃহবন্দী হয়েছেন সাধারণ মানুষ । দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার ফলে এমনিতেই পকেটে পড়ছে টান । এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চাষবাসে । ফল থেকে সবজি-সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে । এই পরিস্থিতির মধ্যেই এসে গেল বাঙালির জামাই ষষ্ঠী ।
কিন্তু এবার ভোজনপ্রিয় বাঙালির সমস্যা আরও বাড়ল । প্রতিবছর জামাইষষ্ঠীর দিন শাশুড়িরা পঞ্চব্যঞ্জন রেঁধে খাওয়ান নিজেদের আদরের জামাইদের । আম,কাঁঠাল, লিচু দিয়ে থালা ভরিয়ে জামাই বাবাজির হাতে তুলে দেন তাঁকে খুশি করতে । কিন্তু এবার সেই আনন্দে ভাটা ফেলেছে কোরোনা প্রকোপ ও ঘূর্ণিঝড় আমফান । বাজারে প্রায় সব সবজির দামই 10 থেকে 20 টাকা প্রতি কিলোয় বৃদ্ধি পেয়েছে । মাছের দাম প্রায় 100 টাকা প্রতি কেজি বৃদ্ধি পেয়েছে । যোগানের থেকে চাহিদা বেশি থাকায় সব কিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী । বাজার করতে এসে শ্বশুর-শাশুড়িদের মাথায় হাত পড়ছে মাছ, সবজি-ফলের দাম শুনে ।
এমনিতেই বাজারে জোগান কম থাকায় পছন্দমতো মাছ, সবজি বা ফল মিলছে না । যেটুকু ফল বা সবজি মাঠ থেকে আসছে, তার দামও অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি । বাজারের সবকিছুরই আগুনছোঁয়া দাম হওয়ায় শুধু নিয়ম রক্ষার্থেই পালন হবে এ বছরের জামাইষষ্ঠী, থাকবে আগের মতো জাঁক-জমক ।
বাজার করতে আসা শ্বশুর-শাশুড়িরা জানিয়েছেন, ‘‘এই পরিস্থিতির মধ্যে আর ঘটা করে জামাইষষ্ঠী পালন করা সম্ভব নয় । শুধু নিয়ম রক্ষা করতে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই বাজার করছি ।’’ সাধারণ ক্রেতারাও জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে প্রয়োজনের থেকে অনেক কম জিনিস দিয়েই কোনমতে চালাতে হচ্ছে সংসার ।
এবারের জামাইষষ্ঠীতে কিছুটা আপোষ করেই হবে জামাইষষ্ঠীর ভোজ । বিক্রেতারাও জানিয়েছেন, মালের জোগান তুলনামূলক অনেকটাই কমেছে । আজ যা সবজি, মাছ আসছে, তার দাম অনেক গুণ বেড়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়ের পরে । চাষীদের যেমন খেতে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে ফলও ৷ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষের । কোরোনার প্রকোপে এমনিতেই ভিন রাজ্য থেকে আসা ট্রাক-লরির সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক দাম বেড়ে গেছে জিনিসের । জামাইষষ্ঠীর দিন প্রতিবছর যেভাবে কেনাকাটা হয়, এবছর জামাইষষ্ঠীতে সেইরকম বিক্রি-বাট্টা নেই বলেই জানিয়েছেন বিক্রেতারা ।
দীর্ঘদিন লকডাউন চলার ফলে এমনিতেও মানুষের হাতে টাকা-পয়সা কম ৷ তৈরি হয়েছে আর্থিক সংকট । সেই সঙ্গেই আচমকা দাম বৃদ্ধি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা জিনিসপত্র কিনছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা ।
