ETV Bharat / city

টিকা নিয়ে শঙ্কা কাটাতে চাই স্বচ্ছতা, দাবি চিকিৎসকদের - covishield

কোভিডের টিকাকরণের প্রস্তুতিপর্ব শেষ পর্যায়ে । গত প্রায় এক বছর ধরে মহামারির মানসিক চাপ, অনেক ক্ষেত্রে স্বজনবিয়োগ, কর্মহীনতায় জর্জরিত মানুষ টিকার বিষয়ে আগ্রহী । সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ টিকা নিয়ে জানতেও উৎসুক । রাজ্যে সেই কাজটাই করতে চাইছেন চিকিৎসক হীরালাল কোঙার ও পুণ্যব্রত গুণ ।

vaccination-needed-transparency-from-government-doctors-claim
vaccination-needed-transparency-from-government-doctors-claim
author img

By

Published : Jan 13, 2021, 10:56 PM IST

কলকাতা, 13 জানুয়ারি : শহরে পৌঁছেছে "মৃত সঞ্জীবনী", কোভিডের প্রতিষেধক। ধীরে ধীরে যা ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্যের প্রান্তে ও প্রান্তরে ৷ এবার কি কাটবে দুঃস্বপ্নের দিনরাত্রি ! এবারই হয়তো ! যদিও দেশে ছাড়পত্র পাওয়া দুই কোভিড প্রতিষেধক টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলাপ-আলোচনা ৷ যা অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচকও বটে । এমন পরিস্থিতিতে কোভিড ও তাঁর প্রতিষেধক নিয়ে সংশয়, শঙ্কা কাটাতে নয়া ভ্যাকসিন নিয়ে বিস্তারিত জানালেন একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ হীরালাল কোঙার এবং ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ । দায়িত্ব নিয়ে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ডক্টরস ফর ডেমোক্রেসি এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের উদ্যোগে চলতি মাসজুড়ে চলবে সচেতনতা প্রচারও ।

বর্তমানে কোভিডের টিকাকরণের প্রস্তুতিপর্ব শেষ পর্যায়ে । আগামী 16 তারিখে দেশজুড়ে শুরু হবে টিকা দেওয়া ৷ এ এক সময় সন্ধিক্ষণ ৷ গত প্রায় এক বছর ধরে মহামারির মানসিক চাপ, অনেক ক্ষেত্রে স্বজনবিয়োগ, কর্মহীনতায় জর্জরিত মানুষ টিকার জন্য আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক । সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ টিকার বিষয়ে বিশদ জানতেও উৎসুক । রাজ্যে সেই কাজটাই করতে চাইছেন চিকিৎসক হীরালাল কোঙার ও পুণ্যব্রত গুণ । এই বিষয়ে ডাঃ পুণ্যব্রত গুণের বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যেকের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত । তবে বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের কাছে স্বচ্ছতার দাবি জানাচ্ছি আমরা ।

government should do transparent vaccination doctors  claim
রাজ্যে এল কোভিডের ভ্যাকসিন ৷

ভারতে এই মুহূর্তে দুটি ভ্যাকসিন সরকারি সম্মতি পেয়েছে । অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপ্রসূত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত "কোভিশিল্ড" ও আইসিএমআর-এর গবেষণাপ্রসূত ও ভারত বায়োটেক দ্বারা প্রস্তুত "কোভ্যাকসিন"। কোভিশিল্ড অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রা-জেনেকা সংস্থার এজ়েডডি1222 ভ্যাকসিনের অনুরূপ ৷ জীবন্ত ভাইরাসবাহকে তৈরি । শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করতে পারে এমন এডিনো ভাইরাসের ভেতরে কোভিডের স্পাইক প্রোটিনের জিন ঢুকিয়ে তৈরি হয়েছে এই ভ্যাকসিন । মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রজনন করতে পারে না । বাহুর উপরের অংশে যেখানে ভ্যাকসিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে, সেখানকার মাংসপেশির কোষগুলির মধ্যে এই ভ্যাকসিনের ভাইরাসটি ঢুকে যাবে ও স্পাইক প্রোটিন তৈরি করবে । সেই স্পাইক প্রোটিনগুলির বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিষেধক অ্যান্টিবডি ও স্মৃতিকোষ তৈরি হয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে । কোভিশিল্ড বিষয়ে সরকারি নথিতে কেবলমাত্র আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে চুড়ান্ত সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে । অন্যদিকে, ভারত বায়োটেকের "কোভ্যাকসিন" একটি মৃত সার্স-কোভ 2 ভাইরাসের থেকে তৈরি ভ্যাকসিন । এই মৃত ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রজনন করতে পারে না । মৃত ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক অ্যান্টিবডি এবং স্মৃতিকোষ তৈরি হয় । মনে রাখতে হবে দ্বিতীয় ভ্যাকসিনটির ক্ষেত্রে সরকার "ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মোড"-এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে । কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে আপাতত চার সপ্তাহের ব্যবধানে দু'টি ডোজ় বাহুর উপরের মাংসপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হবে । কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দু'টি ডোজ় চামড়ার তলায় ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার কথা রয়েছে । তবে, দু'টি ক্ষেত্রেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন পর্যন্ত থাকবে, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা না থাকায় হয়তো বা এক বছর অন্তর টিকাগুলি পুনরায় নিতে হতে পারে । তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না ৷ জানিয়েছেন ডাঃ হীরালাল কোঙার ।

আরও পড়ুন: মানবতা বাঁচাতে ভারতের তৈরি দুটি কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুত : মোদি

যে কোনো রোগের টিকার ক্ষেত্রেই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে । সীমিত অভিজ্ঞতায় এখনও অবধি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন টিকা দুটিতে বড়সড় কোনও সমস্যা দেখা যায়নি ৷ অন্তত এমনটাই সংশ্লিষ্ট ওষুধ কম্পানিগুলির বক্তব্য । তবু গণটিকাকরণের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত অত্যন্ত সুচারু ও দক্ষভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ণয় ও নিরাময়ের ব্যবস্থা করা । টিকা নেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি শরীরে কোনও নতুন বা বিচিত্র অনুভূতি হয়, তবে অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ৷ বলছেন চিকিৎসকরা ।

প্রস্তুতকারী সংস্থার দাবি, রোগ প্রতিরোধে কোভিশিল্ড 70 শতাংশ কার্যকরী ৷ কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কার্যকারিতার প্রামাণ্য তথ্য হাতে নেই । উভয় ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সুরক্ষা কতদিন পর্যন্ত কার্যকরী এখনও বলা যাচ্ছে না । তবে, আশা করা যাচ্ছে 9 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে ভ্যাকসিন দু'টি । মনে রাখা ভালো, কোনও ভ্যাকসিনই একশো শতাংশ নিরাপত্তা দিতে পারে না । অতএব টিকা নেওয়ার পরেও নিয়ম মতো ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে, হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে ৷ পরামর্শ চিকিৎসকদের । তাছাড়া হাম বা চিকেন পক্সের মতোন দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ কোভিডের ভাইরাসের ক্ষেত্রে সম্ভব না । তবে, অন্য কোনও রোগের টিকার সঙ্গে কোভিডের ভ্যাকসিন নেওয়ায় কোনও বাধা নেই ৷

government should do transparent vaccination doctors  claim
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস যেসব দাবি জানাল ৷

আরও পড়ুন:বর্ধমানে পৌঁছাল কোভিড ভ্যাকসিন

এখনও অবধি যে দুটি বিশেষ মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা জানা গিয়েছে, তার মধ্যে ইংল্যান্ডে পাওয়া এন501ওয়াই মিউট্যান্ট সম্ভবত টিকাকরণে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে । অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় অঞ্চলে সংক্রমণে মেলা ই484কে মিউট্যান্ট ভাইরাসটিকে কোভিড 19 থেকে সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করতে পারছে না বলে দেখা গিয়েছে । সেক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা কিছুটা কম হতে পারে । তবে, এর কোনওটিরই প্রামাণ্য তথ্য বা অভিজ্ঞতা নেই । জানিয়েছেন চিকিৎসক হীরালাল কোঙার । চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ জানান, স্বীকৃত ভ্যাকসিন দু'টি নিলে গর্ভাবস্থায় বা ব্রেস্ট ফিডিং মায়েদের ক্ষেত্রে যে অসুবিধা কোনওরকম হবে না, এরকম প্রমাণ মেলেনি । ভ্যাকসিনের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী মৃত ভাইরাস থেকে তৈরি হওয়া ভ্যাকসিন প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে নিরাপদ । সেক্ষেত্রে কোভ্যাকসিন সম্ভবত কোভিশিল্ডের থেকে বেশি নিরাপদ হতে পারে । তবে যত দিন না উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ততদিন এই ভ্যাকসিনগুলি প্রসূতি এবং ব্রেস্ট ফিডিং মায়েদের উপর ব্যবহার না করাই উচিত । যদিও এই মুহূর্তে দেশে দু'টি ভ্যাকসিনকেই কেবল ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । তার বাইরে অপশন নেই । ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগে অধিক সুরক্ষাদায়ী ভ্যাকসিন (যেমন ফাইজার বা মডার্না) দেশে আনা যাবে কি-না তা এখনই বলা যাচ্ছে না, বলছেন দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ।

government should do transparent vaccination doctors  claim
টিকাকরণের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব ৷

এই পরিস্থিতিতে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর দাবি, সরকার দেশবাসীকে জানাক:

ক) ভ্যাকসিনটি রোগ প্রতিরোধ করবে না রোগের তীব্রতা কমাবে ?

খ) যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেটি চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী পরীক্ষার কোন পর্যায়ে রয়েছে ?

গ) বয়স অনুযায়ী ভ্যাকসিনগুলির কার্যক্ষমতা কতটা ?

জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর আরও দাবি, মানুষের মৌলিক অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া হোক:

ক) স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী টিকার বিষয়ে সহজবোধ্য ভাষায় জানিয়ে লিখিত সম্মতি নিয়ে টিকা দেওয়া হোক ।

খ) প্রথম পর্যায়ে কাউকে টিকা নিতে বাধ্য করা যাবে না ।

গ) কেউ প্রথমবারের টিকাকরণ কর্মসূচিতে সামিল না হতে পারলে পরবর্তীতে যেন সুযোগ পান ।

ঘ) টিকা নেওয়ার পর কারোর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে রাষ্ট্র তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক ।

ঙ) টিকাকরণের ফলে গ্রহীতার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের দায় সরকারের ।

নিরপেক্ষ নজরদারির ব্যবস্থা চাইছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল ৷ এক বা একাধিক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থার তদারকিতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে তাঁদের পর্যবেক্ষণে টিকাকরণ হোক । তাঁরা নথিভুক্ত করবেন:

ক) যথাযথ নিয়মে সম্মতি সাপেক্ষে টিকা দেওয়া হচ্ছে কি-না?

খ) যেখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেখানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামাল দেওয়ার আপৎকালীন ব্যবস্থা আছে কি-না ?

গ) প্রতিটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশদভাবে নথিভুক্ত করা হচ্ছে কি-না ও সেগুলি কীভাবে সামাল দেওয়া হচ্ছে ?

ঘ) সকল বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কোনও রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় অনুশাসন থাকবে না । সরকার ইচ্ছা করলে পর্যবেক্ষকদের সংগৃহীত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে ৷ তবে পর্যবেক্ষকরা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছেই সমস্ত তথ্য দাখিল করবে ।

ঙ) টিকাকরণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সর্বসাধারণের কাছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জানাবার ব্যবস্থা থাকবে ।

এইসঙ্গে সমস্ত বিষয়ে দায়িত্বগ্রহণ করতে হবে সরকারকে ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব দেশের সকল মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা ও খরচ বহন করা । কেন্দ্রীয় সরকার না পারলে রাজ্য সরকারকে এই দায়িত্ব নিতে হবে । টিকা নেওয়ার ভয়, জড়তা, অনীহা বা সংশয় কাটানোর জন্য রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা নিজ নিজ অঞ্চলে প্রকাশ্যে টিকা নিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করুন ।

কলকাতা, 13 জানুয়ারি : শহরে পৌঁছেছে "মৃত সঞ্জীবনী", কোভিডের প্রতিষেধক। ধীরে ধীরে যা ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্যের প্রান্তে ও প্রান্তরে ৷ এবার কি কাটবে দুঃস্বপ্নের দিনরাত্রি ! এবারই হয়তো ! যদিও দেশে ছাড়পত্র পাওয়া দুই কোভিড প্রতিষেধক টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলাপ-আলোচনা ৷ যা অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচকও বটে । এমন পরিস্থিতিতে কোভিড ও তাঁর প্রতিষেধক নিয়ে সংশয়, শঙ্কা কাটাতে নয়া ভ্যাকসিন নিয়ে বিস্তারিত জানালেন একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ হীরালাল কোঙার এবং ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ । দায়িত্ব নিয়ে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ডক্টরস ফর ডেমোক্রেসি এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের উদ্যোগে চলতি মাসজুড়ে চলবে সচেতনতা প্রচারও ।

বর্তমানে কোভিডের টিকাকরণের প্রস্তুতিপর্ব শেষ পর্যায়ে । আগামী 16 তারিখে দেশজুড়ে শুরু হবে টিকা দেওয়া ৷ এ এক সময় সন্ধিক্ষণ ৷ গত প্রায় এক বছর ধরে মহামারির মানসিক চাপ, অনেক ক্ষেত্রে স্বজনবিয়োগ, কর্মহীনতায় জর্জরিত মানুষ টিকার জন্য আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক । সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ টিকার বিষয়ে বিশদ জানতেও উৎসুক । রাজ্যে সেই কাজটাই করতে চাইছেন চিকিৎসক হীরালাল কোঙার ও পুণ্যব্রত গুণ । এই বিষয়ে ডাঃ পুণ্যব্রত গুণের বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যেকের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত । তবে বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের কাছে স্বচ্ছতার দাবি জানাচ্ছি আমরা ।

government should do transparent vaccination doctors  claim
রাজ্যে এল কোভিডের ভ্যাকসিন ৷

ভারতে এই মুহূর্তে দুটি ভ্যাকসিন সরকারি সম্মতি পেয়েছে । অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপ্রসূত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত "কোভিশিল্ড" ও আইসিএমআর-এর গবেষণাপ্রসূত ও ভারত বায়োটেক দ্বারা প্রস্তুত "কোভ্যাকসিন"। কোভিশিল্ড অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রা-জেনেকা সংস্থার এজ়েডডি1222 ভ্যাকসিনের অনুরূপ ৷ জীবন্ত ভাইরাসবাহকে তৈরি । শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করতে পারে এমন এডিনো ভাইরাসের ভেতরে কোভিডের স্পাইক প্রোটিনের জিন ঢুকিয়ে তৈরি হয়েছে এই ভ্যাকসিন । মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রজনন করতে পারে না । বাহুর উপরের অংশে যেখানে ভ্যাকসিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে, সেখানকার মাংসপেশির কোষগুলির মধ্যে এই ভ্যাকসিনের ভাইরাসটি ঢুকে যাবে ও স্পাইক প্রোটিন তৈরি করবে । সেই স্পাইক প্রোটিনগুলির বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিষেধক অ্যান্টিবডি ও স্মৃতিকোষ তৈরি হয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে । কোভিশিল্ড বিষয়ে সরকারি নথিতে কেবলমাত্র আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে চুড়ান্ত সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে । অন্যদিকে, ভারত বায়োটেকের "কোভ্যাকসিন" একটি মৃত সার্স-কোভ 2 ভাইরাসের থেকে তৈরি ভ্যাকসিন । এই মৃত ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রজনন করতে পারে না । মৃত ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক অ্যান্টিবডি এবং স্মৃতিকোষ তৈরি হয় । মনে রাখতে হবে দ্বিতীয় ভ্যাকসিনটির ক্ষেত্রে সরকার "ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মোড"-এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে । কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে আপাতত চার সপ্তাহের ব্যবধানে দু'টি ডোজ় বাহুর উপরের মাংসপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হবে । কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দু'টি ডোজ় চামড়ার তলায় ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার কথা রয়েছে । তবে, দু'টি ক্ষেত্রেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন পর্যন্ত থাকবে, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা না থাকায় হয়তো বা এক বছর অন্তর টিকাগুলি পুনরায় নিতে হতে পারে । তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না ৷ জানিয়েছেন ডাঃ হীরালাল কোঙার ।

আরও পড়ুন: মানবতা বাঁচাতে ভারতের তৈরি দুটি কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুত : মোদি

যে কোনো রোগের টিকার ক্ষেত্রেই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে । সীমিত অভিজ্ঞতায় এখনও অবধি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন টিকা দুটিতে বড়সড় কোনও সমস্যা দেখা যায়নি ৷ অন্তত এমনটাই সংশ্লিষ্ট ওষুধ কম্পানিগুলির বক্তব্য । তবু গণটিকাকরণের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত অত্যন্ত সুচারু ও দক্ষভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ণয় ও নিরাময়ের ব্যবস্থা করা । টিকা নেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি শরীরে কোনও নতুন বা বিচিত্র অনুভূতি হয়, তবে অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ৷ বলছেন চিকিৎসকরা ।

প্রস্তুতকারী সংস্থার দাবি, রোগ প্রতিরোধে কোভিশিল্ড 70 শতাংশ কার্যকরী ৷ কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কার্যকারিতার প্রামাণ্য তথ্য হাতে নেই । উভয় ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সুরক্ষা কতদিন পর্যন্ত কার্যকরী এখনও বলা যাচ্ছে না । তবে, আশা করা যাচ্ছে 9 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে ভ্যাকসিন দু'টি । মনে রাখা ভালো, কোনও ভ্যাকসিনই একশো শতাংশ নিরাপত্তা দিতে পারে না । অতএব টিকা নেওয়ার পরেও নিয়ম মতো ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে, হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে ৷ পরামর্শ চিকিৎসকদের । তাছাড়া হাম বা চিকেন পক্সের মতোন দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ কোভিডের ভাইরাসের ক্ষেত্রে সম্ভব না । তবে, অন্য কোনও রোগের টিকার সঙ্গে কোভিডের ভ্যাকসিন নেওয়ায় কোনও বাধা নেই ৷

government should do transparent vaccination doctors  claim
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস যেসব দাবি জানাল ৷

আরও পড়ুন:বর্ধমানে পৌঁছাল কোভিড ভ্যাকসিন

এখনও অবধি যে দুটি বিশেষ মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা জানা গিয়েছে, তার মধ্যে ইংল্যান্ডে পাওয়া এন501ওয়াই মিউট্যান্ট সম্ভবত টিকাকরণে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে । অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় অঞ্চলে সংক্রমণে মেলা ই484কে মিউট্যান্ট ভাইরাসটিকে কোভিড 19 থেকে সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করতে পারছে না বলে দেখা গিয়েছে । সেক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা কিছুটা কম হতে পারে । তবে, এর কোনওটিরই প্রামাণ্য তথ্য বা অভিজ্ঞতা নেই । জানিয়েছেন চিকিৎসক হীরালাল কোঙার । চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ জানান, স্বীকৃত ভ্যাকসিন দু'টি নিলে গর্ভাবস্থায় বা ব্রেস্ট ফিডিং মায়েদের ক্ষেত্রে যে অসুবিধা কোনওরকম হবে না, এরকম প্রমাণ মেলেনি । ভ্যাকসিনের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী মৃত ভাইরাস থেকে তৈরি হওয়া ভ্যাকসিন প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে নিরাপদ । সেক্ষেত্রে কোভ্যাকসিন সম্ভবত কোভিশিল্ডের থেকে বেশি নিরাপদ হতে পারে । তবে যত দিন না উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ততদিন এই ভ্যাকসিনগুলি প্রসূতি এবং ব্রেস্ট ফিডিং মায়েদের উপর ব্যবহার না করাই উচিত । যদিও এই মুহূর্তে দেশে দু'টি ভ্যাকসিনকেই কেবল ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । তার বাইরে অপশন নেই । ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগে অধিক সুরক্ষাদায়ী ভ্যাকসিন (যেমন ফাইজার বা মডার্না) দেশে আনা যাবে কি-না তা এখনই বলা যাচ্ছে না, বলছেন দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ।

government should do transparent vaccination doctors  claim
টিকাকরণের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব ৷

এই পরিস্থিতিতে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর দাবি, সরকার দেশবাসীকে জানাক:

ক) ভ্যাকসিনটি রোগ প্রতিরোধ করবে না রোগের তীব্রতা কমাবে ?

খ) যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেটি চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী পরীক্ষার কোন পর্যায়ে রয়েছে ?

গ) বয়স অনুযায়ী ভ্যাকসিনগুলির কার্যক্ষমতা কতটা ?

জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর আরও দাবি, মানুষের মৌলিক অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া হোক:

ক) স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী টিকার বিষয়ে সহজবোধ্য ভাষায় জানিয়ে লিখিত সম্মতি নিয়ে টিকা দেওয়া হোক ।

খ) প্রথম পর্যায়ে কাউকে টিকা নিতে বাধ্য করা যাবে না ।

গ) কেউ প্রথমবারের টিকাকরণ কর্মসূচিতে সামিল না হতে পারলে পরবর্তীতে যেন সুযোগ পান ।

ঘ) টিকা নেওয়ার পর কারোর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে রাষ্ট্র তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক ।

ঙ) টিকাকরণের ফলে গ্রহীতার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের দায় সরকারের ।

নিরপেক্ষ নজরদারির ব্যবস্থা চাইছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল ৷ এক বা একাধিক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থার তদারকিতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে তাঁদের পর্যবেক্ষণে টিকাকরণ হোক । তাঁরা নথিভুক্ত করবেন:

ক) যথাযথ নিয়মে সম্মতি সাপেক্ষে টিকা দেওয়া হচ্ছে কি-না?

খ) যেখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেখানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামাল দেওয়ার আপৎকালীন ব্যবস্থা আছে কি-না ?

গ) প্রতিটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশদভাবে নথিভুক্ত করা হচ্ছে কি-না ও সেগুলি কীভাবে সামাল দেওয়া হচ্ছে ?

ঘ) সকল বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কোনও রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় অনুশাসন থাকবে না । সরকার ইচ্ছা করলে পর্যবেক্ষকদের সংগৃহীত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে ৷ তবে পর্যবেক্ষকরা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছেই সমস্ত তথ্য দাখিল করবে ।

ঙ) টিকাকরণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সর্বসাধারণের কাছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জানাবার ব্যবস্থা থাকবে ।

এইসঙ্গে সমস্ত বিষয়ে দায়িত্বগ্রহণ করতে হবে সরকারকে ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব দেশের সকল মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা ও খরচ বহন করা । কেন্দ্রীয় সরকার না পারলে রাজ্য সরকারকে এই দায়িত্ব নিতে হবে । টিকা নেওয়ার ভয়, জড়তা, অনীহা বা সংশয় কাটানোর জন্য রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা নিজ নিজ অঞ্চলে প্রকাশ্যে টিকা নিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করুন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.