কলকাতা, 3 জুন : আড়াই মাস আগের কথা । সোনার কারিগরদের কাজের চাপ ছিল ভালোই । দোকানে আনাগোনা ছিল গ্রাহকদের । কিন্তু, এখন বদলে গেছে ছবিটা । টানা লকডাউনের জেরে দোকান বন্ধ হয়েছে অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর । কর্মহীন স্বর্ণশিল্পীরাও । তারাই সবথেকে বেশি বিপদে পড়েছে । একই ছবি কলকাতার বিখ্যাত বউবাজারের সোনাপট্টিরও ।
বউবাজারে ছোটো-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় শ'খানেক গয়নার দোকান রয়েছে । তার সঙ্গে লাগোয়া কারখানা । সাবেকি ভারি গয়না তো আছেই, হাল ফ্যাশানের হালকা গয়নাও তৈরি হয় এই সব কারখানায় । লকডাউনে দোকান বন্ধ হওয়ায় কারিগরেরা বাড়ি ফিরে গেছে । গয়না প্রিয় মানুষও এখন সোনার দোকানমুখী হচ্ছে না । চলতি মাসের পয়লা তারিখ থেকে লকডাউন শিথিল হয়েছে । দোকান খোলার ছাড়পত্র পেয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা । সরকারি নির্দেশিকা পেয়ে দোকান খুলতে শুরু করেছে তারা । কিন্তু, ছবিটা বদলায়নি । দোকান খুললেও নেই গ্রাহক ।
গোটা রাজ্যে প্রায় 1 কোটি মানুষ এই স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত । খোদ কলকাতাতেই রয়েছে প্রায় 50 হাজার স্বর্ণশিল্পী ও ব্যবসায়ী । এই পরিস্থিতিতে ঘোর সংকটে তারা । স্বর্ণশিল্পকে বাঁচাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে ব্যবসায়ীরা ।
কলকাতার এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তথা স্বর্ণশিল্পী বাঁচাও সমিতির সম্পাদক বাবলু দে বলেন, "গত 70 দিনের টানা লকডাউনে রাজ্যে প্রায় 400 কোটি টাকার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে । সরকারি নির্দেশ মেনে দোকান খোলা হয়েছে । তবে দু'দিনে দেখা মেলেনি ক্রেতার ।" তিনি আরও জানান, "দোকানের কর্মচারীরা বাড়িতে আটকে পড়েছে । দোকানে আসতে পারছে না । এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের সহযোগিতা না মিললে ব্যবসাকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।" তাঁর মতে, কেন্দ্র সরকার যদি স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে সাহায্য করে,তবেই এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ।
তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণের ঘোষণা করেছেন । ঘোষিত নির্দেশিকায় স্বর্ণশিল্পীরা আদৌ এই আওতায় পড়ছে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে ব্যবসায়ীরা । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করির কাছে স্বর্ণশিল্পী বাঁচাও সমিতির তরফ থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থার আবেদন করা হয়েছে ।
আরও এক প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দ্রজিৎ রক্ষিত বলেন, "লকডাউনে ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে । দোকান সারাদিন খোলা থাকলেও ক্রেতার দেখা মেলেনি । বেচা-কেনাও হচ্ছে না । এর সঙ্গে কলকাতার বহু জায়গায় কনটেইনমেন্ট জ়োন থাকায় গ্রাহক বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যদি কয়েক মাসের জন্য GST মকুব করে তবে শিল্পটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে । না হলে সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে ।"
এক কারিগরের কথায়, "আমাদের রুটি-রুজি মেলে গয়না তৈরি করে । দৈনিক মজুরিতে কাজ করতাম । লকডাউনের জন্য হাতে আর কাজ নেই । মালিক কবে থেকে গয়না বানানোর জন্য ডাকবে সেই আশায় রয়েছি । মজুরি পেলে সংসারটা চলবে ।"