কলকাতা, ১৯ মার্চ: কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের EFC (ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল) সিদ্ধান্ত নেয়, রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য ৯০ শতাংশ সংরক্ষণ চান তাঁরা। গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের EC (এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল)-এর বৈঠকে EFC-এর সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ল।
৬ মার্চ রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডোমিসাইল ক্যাটেগরিতে ৯০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের EFC। ওই দিন EFC-র বৈঠকে উপস্থিত ছিল ১৬টি ডিপার্টমেন্ট। EFC-র এই সিদ্ধান্তকে ওই দিন ১৩টি ডিপার্টমেন্ট সম্মতি জানিয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজির ডিন চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, আগামী EC-এর বৈঠকে বিষয়টি পুনরায় তোলা হবে। গতকাল EC-এর বৈঠকে তাঁদের ৯০ শতাংশ ডোমিসাইল সংরক্ষণের সিদ্ধান্তটি পুনরায় তোলা হয়। চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “আজ সিদ্ধান্তটি EC-তে গিয়েছিল। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। EFC-র সিদ্ধান্তটা আজ মোটামুটিভাবে EC-তে অনুমোদিত হল।” এবার এই সিদ্ধান্তটি রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। তাদের সম্মতি পেলে এই বছর থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চালু হয়ে যেতে পারে ডোমিসাইল সংরক্ষণ।
গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে EC-র বৈঠক শুরু হয় দুপুর ২টো নাগাদ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাশ, সহ-উপাচার্য প্রদীপ কুমার ঘোষ, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু সহ অন্যরা। প্রায় প্রতিটি EC বৈঠকের মতো এই বৈঠকেও ছাত্রছাত্রীরা EC-র কাছে তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করে। গতকাল মূলত বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের তরফে কতগুলি প্রশ্ন করা হয় EC-র কাছে। EC তাদের দাবিগুলি নিয়ে বিবেচনা করে। পরে বিকেলের দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে EC। কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা কর্মসমিতির সঙ্গে একমত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মতানৈক্য দেখা দেয়। তারপরই ছাত্রছাত্রীরা দাবি করতে থাকে, তাদের দাবিগুলির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানাতে হবে। কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় সময় চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বারবার আলোচনায় বসে। কিন্তু, কোনও কিছুতেই মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের দাবিগুলির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
কিন্তু কী সেই প্রশ্ন, যার উত্তর রাত ১২টা পর্যন্ত দিতে পারেনি EC? বিশ্ববিদ্যালয়ের AFSU(আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের) সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, “EC মিটিং এখনও চলছে। কোনও স্থায়ী সিদ্ধান্ত এখনও ওরা নিতে পারেনি। আমরা দুটো সহজ প্রশ্ন করেছি যে, কী করে একটা ডিস্যাবিলিটি সেন্টারের অধীনে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের জন্য একটা বই রিসার্চের প্রজেক্ট হতে পারে? এটা এক নম্বর। দ্বিতীয়ত, এই ডিস্যাবিলিটি সেন্টারের এক সময়কার হেড ছিলেন মনোজিৎ মণ্ডল। তাঁকে নিয়ে কেস চলছে। তদন্ত চলছে একটা। সেই তদন্ত চলাকালীন কী করে এই সেন্টার নতুন করে প্রজেক্ট নিতে পারে? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর VC, সহ উপাচার্য, রেজিস্ট্রার কেউ দিচ্ছেন না। চুপ করে বসে আছেন। কোনও কথাই বলছেন না। কথা না বললে কী করে হবে? কিছু তো বলতে হবে।”
রাত ১২টা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনও উত্তর পাননি আন্দোলনকারীরা। উত্তর না পেয়ে এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন উভয়পক্ষই। আলোচনায় কোনও সমাধান বেরিয়ে না এলে পরিস্থিতি আবার ঘেরাওয়ের দিকেই এগিয়ে চলেছে। ছাত্রছাত্রীরা মুখে ঘেরাওয়ের কথা স্বীকার না করলেও উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার EC-র সদস্যরা এখনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে পারেননি। ভিতর বৈঠক চলছে, আর বাইরে চলছে আন্দোলনকারীদের অবস্থান। EC-র সদস্যরা বের হতে চাইলে তাঁদের বেরোতে দেওয়া হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে দেবরাজ দেবনাথ বলেন, “মিটিং আগে শেষ হোক। কথাগুলোর উত্তর দিক। তারপর দেখা যাবে। কিছু তো বলবেন অন্তত। তাঁরা তো কোনও কথাই বলছেন না।”