কলকাতা, 7 জুন : রাজ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্যর উপর রাস টানতে এবার গঠন করা হবে সরকারি কমিশন ৷ যার মাথায় থাকবে কলকাতা হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি । গতকাল এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে । এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদরা (educationists about commission to look after private schools)।
স্কুল ফি বৃদ্ধি করাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রানিকুঠির জিডি বিড়লা-সহ অশোক হল ও ওই সংস্থার অন্তর্গত বাকি স্কুলগুলিতে জটিলতার সৃষ্টি হয় । প্রথমে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল । এরপর অভিভাবকরা আদালতের দ্বারস্থ হলে স্কুলে আবার খুলে দেওয়া হয় । শুধু এই ঘটনাই নয় করোনা কালে বহু বেসরকারি স্কুল ফি বাড়িয়েছিল । যা অনেক অভিভাবকদের উপর বাড়তি বোঝার সৃষ্টি করে । শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে । তাই এই বিষয়গুলি নিয়ে অভিভাবক সংগঠন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি দেন । তারপরেই বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধি-সহ নানান বিষয়ে নজরদারির জন্য সরকারের শিক্ষা কমিশন গড়ার সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি ইউনাইটেড গার্জিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে এই সম্পর্কিত চিঠি পাঠানো হয়েছিল । সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, "লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি-সহ নানান বিষয়ে বেসরকারি স্কুলের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে আইন প্রণয়ন ও রেগুলেটরি কমিশন গঠনের দাবি সরকারের কাছে রাজ্যের অভিভাবকরা বারবার তুলে ধরেছেন । আমরা মনে করি অভিভাবকদের আন্দোলনের চাপে বাস্তবের মুখোমুখি হয়েই সরকার শিক্ষা কমিশন গড়ার কথা ভাবছে । আমরা আশা করি সরকার দ্রুত তার ভাবনা বাস্তবায়িত করবে ।"
সেভ এডুকেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "আমাদের কমিটির পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে । তাই এখানে যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি রয়েছে, সেখানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ একান্তই জরুরি । তাই আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি ।" জানা গিয়েছে, রাজ্য বিধানসভার বাদল অধিবেশনে এই বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে এবং বিলটি পাশ করাও হতে পারে । বিশ্বজিৎ মিত্র আরও বলেন, "যত দ্রুত সম্ভব এই বিলটি পাশ করিয়ে সেটাকে কার্যকর করতে হবে । কারণ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক । না হলে এই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি মামুলি ব্যবসা করার জন্য স্কুল খুলে সাধারণ মানুষের ওপর ক্রমাগত বোঝা চাপাতেই থাকবে ।"
আরও পড়ুন : Education Commission in Bengal : বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠনের চিন্তা রাজ্যের
এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "এটা ঠিক কথা যে বহু বেসরকারি স্কুল ফি খুবই বেশী । তবে তা জেনে শুনেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সেইসব স্কুলে পড়াচ্ছেন । অন্যদিকে সারা পৃথিবী যখন করোনা অতিমারি সঙ্গে করছে, তখন বহু বেসরকারি স্কুল মাইনে বাড়িয়ে ছিল । এই বিষয়টি একেবারে ঠিক নয় । তবে এটাও দেখতে হবে যে কমিশন গঠনের জন্য যেন বেসরকারি স্কুলের স্বাধিকার বজায় থাকে । তাই এই কমিশনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হতে হবে । জনসাধারণের কাছে স্পষ্ট করতে হবে । আমার মনে হয় বেসরকারি স্কুলগুলোতে যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা অভিভাবকদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারে ৷ এতে রাজ্যের হস্তক্ষেপের তেমন প্রয়োজন নেই । বরং যে সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে, সেই দিকে সরকারের অনেক বেশি মন দিয়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষার মান উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া উচিত ।"