কলকাতা, 2 জুন : করোনা মোকাবিলায় রাজ্যে আবার শুরু হয়েছে লকডাউনের মতো পরিস্থিতি । রাজ্য সরকারের চালু করা কড়া বিধিনিষেধে বন্ধ অধিকাংশ কাজকর্ম ও ব্যবসা । ফলে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী । সংক্রমণের ভয়ে মানুষ যেমন নিজেদের গৃহবন্দি করেছেন, তেমনই তখন আগের মতো একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত একেবারে নেই বললেই চলে । প্রথম দফায় লকডাউন উঠে গিয়ে আনলক-পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷
ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি, প্লাম্বার, এসি-টিভি বা কম্পিউটার সারাইয়ের মিস্ত্রি, পরিচারিকা কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অন্য কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই । কারণ, এখন খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ নিজের বাড়িতে বাইরের কাউকে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না । বড় আবাসনগুলিতে গেটে নিষেধাজ্ঞা ছাপার অক্ষরে লাগিয়েও দেওয়া হয়েছে ।
সমাজের এই শ্রেণির মানুষের রোজগার অনিমিয়ত ৷ দিন আনি, দিন খাই এর পরিস্থিতি ৷ ফলে সঞ্চয় তো কিছুই নেই ৷ উল্টে একদিন রোজগার না হলে দু’বেলার খাবার জোগাড় করাই সবচেয়ে সমস্যার হয়ে ওঠে ৷ তাই অনেকে সব সমস্যা সহ্য করেও কাজের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তেমনই একজন ষাটোর্ধ্ব ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ৷ যিনি রোজ 2 ঘণ্টা সাইকেলে চেপে কলকাতা শহরে আসেন কাজের সন্ধানে ৷ তিনি বলেন, "বাড়িতে অসুস্থ রোগী । তাঁর ওষুধ তো কিনতে হবে । রোজগার করার আর কেউ নেই । তাই আমি প্রতিদিন প্রায় 2 ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে কাজে আসি ।"
গ্রিলের কাজ করেন এমন একজন বললেন, "বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রিল সারাইয়ের কাজ করি । আজ নতুন কোনও নির্মাণ হলে সেখানেও কাজ করি । তবে এখন কেউ কারও বাড়িতে ঢুকতেই দিচ্ছে না । আর ফের লকডাউনে সমস্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ । চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটছে । আর অন্য কোনও কাজও শিখিনি যে করতে পারব এই সময় ।"
আর একজন বরুণ পাল ৷ তিনি পেশায় প্লাম্বার ৷ তিনি বলেন, "আর্থিকভাবে খুবই দুর্দশার মধ্যে রয়েছি আমরা । কোনও মতে সংসার চলছে । ব্যবসার অবস্থা শোচনীয় । করোনার আগে স্থানীয় অনুষ্ঠান বাড়িগুলোতেও কাজের জন্য আমাদের ডাক পড়ত । তবে এই দু'বছর হল তাও আর নেই । আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয় ।"
আরও পড়ুন : কোভিড আক্রান্ত শিশুরা বেশিরভাগই উপসর্গহীন, তবে... : পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের
এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ আজ কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন । তাকিয়ে রয়েছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ।