কলকাতা, 26 জানুয়ারি : উপনির্বাচনের খরচ পদত্যাগকারী প্রার্থীর থেকে নেওয়া যায় না ৷ কলকাতা হাইকোর্টে জানালো নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার । এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই কথা জানানো হয়েছে (Cost of the By-election cannot be borne from the resigning candidate) ।
ঘটনার সূত্রপাত কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে । ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের অন্যতম বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । অন্যদিকে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ছ'মাসের মধ্যে রাজ্যের একটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হত মুখ্যমন্ত্রীকে ৷ কয়েকমাস পরেই শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করেন । ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে বিজয়ী হন (Mamata Banerjee won in Bhawanipore By-Election) ।
এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন জনৈক সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্যের মুখ্যসচিব পদাধিকারী এইভাবে কোনও একটি কেন্দ্রে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিতে পারেন না । কারণ, ওই কেন্দ্রে কোনও রকম সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়নি । একজন বিজয়ী প্রার্থী পদত্যাগ করছেন আরও একজনকে ওই পদে জিতিয়ে দেওয়ার করার জন্য । এটা সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ কাজ ।
এই মামলার নির্দেশে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রাজেশকুমার বিন্দাল ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, এই ধরণের নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ হয় পাবলিক ফান্ড থেকে । একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি কোনওরকম আইনি সমস্যা ছাড়াই অথবা তার নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন সেক্ষেত্রে ওই কেন্দ্রের নির্বাচনের খরচ কে বহন করবে ?
আরও পড়ুন : রাজ্যসভায় বহিরাগতদের পাঠাচ্ছেন বাংলার মেয়ে, কটাক্ষ শুভেন্দুর
মামলার শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী সিদ্ধান্ত কুমার বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের ক্ষমতা নেই যে একজন পদত্যাগকারী প্রার্থীকে ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের খরচ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে । যদিও কারা এই নির্বাচনের খরচ বহন করবে সে বিষয়ে আইনসভা এবং বিচারবিভাগ নতুন কোনও আইন তৈরি করতে পারে ৷’’
আরও পড়ুন : মার্চের শুরুতে আসানসোল এবং বালিগঞ্জে উপনির্বাচন করাতে উদ্যোগী কমিশন
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উপনির্বাচনের খরচ কখনওই একজন প্রার্থীর থেকে নেওয়া যায় না ৷ এক্ষেত্রে রাজ্যকেই এই খরচ বহন করতে হবে ।’’ তিনি সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে নিয়মই হচ্ছে কোনও কেন্দ্রকে প্রতিনিধিহীন করে রাখা যায় না । সংবিধানের 190(3) ধারা অনুযায়ী, রাজ্য বিধানসভার যে কোনও সদস্য স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দিতে পারেন । স্পিকার সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন । পিপলস রিপ্রেজেন্টেশন অ্যাক্ট 1951 অনুযায়ী, যে কোনও কেন্দ্রের প্রার্থীপদ শূন্য হলে ছয় মাসের মধ্যে সেখানে নির্বাচন করতে হয় ।’’ আগামী বৃহস্পতিবার ফের মামলার শুনানি রয়েছে ।