কলকাতা, 12 ডিসেম্বর : শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের এতদিনের অভিযোগ ছিল তাদের রাজত্বে গণতন্ত্রের পরিবেশ নেই রাজ্যে। যে কোনও ভোট প্রহসনে পরিণত করছে তৃণমূল। আছে ভোট করতে না দেওয়া, ভোটলুটের অভিযোগও ৷ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন শাসক দলের হয়ে কাজ করছে এই অভিযোগও হামেশাই ওঠে ৷ এবার বিরোধীদের এই অভিযোগেই নয়া মাত্রা যোগ করল তৃণমূলের কিছু পোস্টার ৷
কলকাতা পৌরভোট উপলক্ষে বেহালার 116, 117 ও 118 নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের কিছু পোস্টারের দেখা মিলেছে। 118 নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন তারক সিং৷ 117 নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন তাঁর পুত্র অমিত সিং এবং 116 নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন তারক সিংয়ের কন্যা কৃষ্ণা সিং৷ এই তিন ওয়ার্ডগুলির বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা পোস্টার দিয়েছেন ৷ যা নিয়েই তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পোস্টারগুলিতে একপাশে রয়েছে প্রার্থীদের ছবি,অন্যপাশে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের ছবি। আর তার মাঝখানে যে লেখা রয়েছে তার সারমর্ম হল, যদি কেউ আগামী 19 তারিখ পৌরভোটের দিন ভোট দানের সময় বাধা প্রাপ্ত হন তাহলে তাঁরা যেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী এবং বেহালা ও নিউ আলিপুর থানার বড়বাবুকে ফোন করেন ৷ পোস্টারে এই তিন প্রার্থীর নামের পাশাপাশি নিউ আলিপুর থানা এবং বেহালা থানার বড় বাবুর নাম এবং ফোন নম্বরও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। নজিরবিহীন এই পোস্টার প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক (controversy over posters of tmc candidates for having numbers of police)৷
আরও পড়ুন : KMC Election 2021 : কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পেলেন বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ
প্রশ্ন উঠছে ভোট প্রচারের কাজে কোনও প্রার্থী কি এভাবে নিজেদের ছবি ও ফোন নম্বরের সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকদের নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করতে পারেন? বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷ এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারক সিং এর পুত্র অমিত সিং তথা 117 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, "এই পোস্টার টাঙানোর কারণ হল, ভোটের দিন কেউ কোনও ভাবে ভোটদানে বাধা পেলে, আমাদের যদি জানান তাহলে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বলে ব্যবস্থা করব তাঁর ভোটদানের। যদি এক্ষেত্রে অভিযুক্ত হয় শাসকদলের কেউ তাহলেও তার বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে কঠিন ব্যবস্থা। দেওয়া হবে শাস্তি।"
অবশ্য এই ঘটনায় সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। কলকাতা পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে তৃণমূল অতীতে এমন কাজ করেছে। এই ঘটনায় স্পষ্ট যে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েই তারা রিগিং সম্পন্ন করতে চাইছে। প্রথমত এই প্রশ্ন আসছে কেন, যে ভোটারদের যদি কেউ বাধা দেন! কেন কেউ ভোটারদের বাধা দেবে? তার মানে ওরা ভোটারদের বাধা দেন। যাঁরা অভিযোগ করবেন তাঁদের সমস্ত তথ্য ওদের কাছে চলে যাবে। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হবে সরকারি প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার। অপমান করা হবে। হুঁশিয়ারি দেওয়া হবে, ভয় দেখানো হবে ।" তাঁর প্রশ্ন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি ঘুমোচ্ছে? এমন একটা পোস্টার দেখার পরেও কেন চুপ করে আছে কমিশন?
বিজেপি নেতা প্রাক্তন কাউন্সিলর বিজয় ওঝার দাবি, "আমরা অতীতেও একাধিকবার দেখেছি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন দলীয় কর্মীদের শান্ত থাকতে। হিংসা না করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ঠিক তার পর পরই দেখা গেছে আরও বেশি করে হিংসার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলির নেতাকর্মীরা । এটা নজর ঘোরানোর পদ্ধতি মাত্র।"