কলকাতা, 20 এপ্রিল : একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি ৷ যার জেরে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একাধিক জেলা নেতৃত্ব ইস্তফা দিতে শুরু করেছে ৷ যা আরও প্রকট হয়েছে আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবির পর ৷ আর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ কিন্তু, সেখানেও বিজেপির অন্দরে ভাঙন স্পষ্ট ৷ বৈঠকে গরহাজির থাকলেন রাজ্য বিজেপির প্রথমসারির নেতারা (Controversy Over Absence of Top Leaders in State BJP Meeting) ৷ যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের চর্চা, রাজ্য বিজেপির ভাঙন এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ ৷
বিক্ষুব্ধদের মধ্যে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সায়ন্তন বসু গরহাজির ছিলেন ৷ এমনকি রাজ্য বিজেপির পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মাত্র 2 জনকে ওই বৈঠকে দেখা গেল ৷ তাঁরা হলেন, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এবং দীপক বর্মন ৷ তাঁরা সুকান্ত মজুমদারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ৷ আর অনুপস্থিতির তালিকায় লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল, জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর মত তিন সাধারণ সম্পাদক ৷
সাংবাদিক বৈঠক এই বিষয়ে সুকান্ত মজুমদারকে প্রশ্নও করা হয় ৷ বিতর্ক এড়াতে জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের দলে সবাইকে সব বৈঠকে ডাকা হয় না ৷ যাঁদের যে কাজে প্রয়োজন, তাঁদের সেই অনুযায়ী ডাকা হয় ৷’’ কিন্তু, সুকান্তর জবাব কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে ৷ বিশেষ করে যে জেলাগুলিতে 2019 লোকসভায় বিজেপির ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি তৃণমূল, সেই জেলাগুলিতে 2021 এবং তার পরবর্তী সময়ে ধরাশায়ী হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে ৷
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হুগলি এবং পশ্চিম বর্ধমান ৷ আর সেই জেলাগুলির নেতৃত্বের অংশ হিসেবে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পলের বৈঠকে উপস্থিত থাকাকে সুকান্ত মজুমদার অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন ৷ বিশেষ করে সম্প্রতি আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে যেখানে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল 3 লক্ষের বেশি ভোটে হেরেছেন ৷ আর সেই হারের পর পশ্চিম বর্ধমানে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি ৷ আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তিনি ৷ আর সেই অগ্নিমিত্রা পলের বৈঠকে উপস্থিত থাকা সুকান্ত মজুমদারের কাছে অপ্রয়োজনীয় ৷ যা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন নেতা ৷
আরও পড়ুন : Allegations of Selling Tickets against BJP : 12 লাখে পৌরসভা ভোটের টিকিট বিক্রি বিজেপির ?
বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরের অভিযোগ, রাজ্য নেতৃত্ব এখন কাজের লোকের তুলনায়, কাছের লোকদেরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ৷ এমনকি বিজেপির মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আদি বিজেপি নেতৃত্ব, যাঁদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি ৷ তাঁদের কেন ওই বৈঠকে ডাকা হয়নি ? প্রসঙ্গত, বিজেপিতে একের পর এক ইস্তফার হিড়িক মূলত, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে ৷ প্রকাশ্যে সেকথা জানিয়েছেন বহু বিক্ষুব্ধ নেতা ৷ এমনকি সুকান্ত মজুমদারের দল পরিচালনার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে ৷
ঘরে-বাইরে চাপের মুখে কার্যত বিধ্বস্ত সুকান্ত মজুমদার ৷ তার উপর একের পর এক নির্বাচনে হার ৷ যার ফল, জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীদের মনোবল তলানিতে ৷ এই পরিস্থিতিতে বিজেপি কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে মঙ্গলবার একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি ৷
আরও পড়ুন : Protest Against BJP MLA : ভোটে জিতে এলাকায় আসেন না, বিজেপি বিধায়ককে কালো পতাকা এলাকাবাসীর
আগামী 2 মে তৃণমূল পরিচালিত সরকারের বর্ষপূর্তি ৷ ওই দিনটিকে রাজ্যের জন্য কালো অধ্যায়ের সূচনা বলে দাবি করেন সুকান্ত ৷ তাই 2 মে গণতন্ত্র বাঁচাও কর্মসূচি পালনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বিজেপির তরফে ৷ ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত বিজেপি কর্মীদের স্মৃতিতে 3 মে একবেলা অনশন (উপোস) করবেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা ৷ ওই দিন কলকাতায় গান্ধিমূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন রাজ্য বিজেপির নেতারা ৷ 4 মে রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ ৷ 6 মে পর্যন্ত তিনি রাজ্যে থাকবেন ৷ দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গে তাঁর যাওয়ার কথা রয়েছে ৷ কর্মসূচি পরে জানানো হবে ৷ 7 মে মৃত কর্মীদের পরিবারে সঙ্গে থাকবেন বিজেপি নেতারা ৷ 8 ও 9 মে ব্লকে ব্লকে মিছিল করবে বিজেপি ৷ 10 মে মৃত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা সত্যাগ্রহ কর্মসূচি পালন করবেন ৷ পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা ৷ 11 মে জেলাভিত্তিক একটি করে মিছিলের কথা জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷